সহিংসতার শিকার হয়ে বিশ্বে ৬ কোটি মানুষ ঘরছাড়াবাংলা প্রেস, নিউ ইয়র্ক থেকে: যুদ্ধ, সহিংসতা ও নিপীড়নের কারনে সারা বিশ্বে এ বছর প্রায় ছয় কোটির বেশি মানুষ ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। গত শুক্রবার জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ঘরছাড়া মানুষের সংখ্যায় ২০১৫ সাল পূর্বের যেকোনো বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে।

চলতি বছরের প্রথমার্ধ থেকেই বিপুল সংখ্যক মানুষ শরণার্থী, আবাসন প্রার্থী অথবা বাস্তুচ্যুত জীবন যাপন করছে। পুরো বছরের হিসাব আকাশচুম্বি হবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে ইউএনএইচসিআর। প্রতিবেদনে সংস্থাটি বলে, চলতি বছর দশ লাখের মতো মানুষ ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ পৌঁছেছে। সিরিয়াসহ বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তে যুদ্ধ-বিগ্রহের কারণে এ সংখ্যা দিনদিনই বাড়ছে।

গত বছর বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ, সহিংসতা ও নিপীড়নে ৫ কোটি ৯৫ লাখ মানুষ ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়। এ বছর এরই মধ্যে এ সংখ্যা ৬ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। এর অর্থ বিশ্বে প্রতিদিন প্রতি ১২২ জনে একজন ঘর ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানায় ইউএনএইচসিআর।

প্রতিবেদনে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থাটি আরও জানায়, বিশ্বে প্রতিদিন ৪ হাজার ৬০০ জন মানুষ শরণার্থী জীবন বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। ইউএনএইচসিআর’র প্রধান অ্যান্টোনিও গুটেরেস এক বিবৃতিতে বলেছেন, আমাদের সময়কে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত করছে। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে নতুন করে পঞ্চাশ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এদের মধ্যে বেয়াল্লিশ লাখ নিজেদের দেশেই রয়ে গেছেন। বাকি ৮ লাখ ৩৯ হাজার সীমান্ত অতিক্রম করে শরণার্থী অথবা অভিবাসন প্রত্যাশীর জীবন বেছে নিতে বাধ্য হয়েছেন।

প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, চলতি বছরের জুন মাস নাগাদ দুই কোটির কিছু বেশি মানুষ বিশ্বব্যাপী শরণার্থী জীবনযাপন করছিলেন। ২০১১ সালের একই সময়ের তুলনায় এ হার ৪৫ শতাংশ বেশি। প্রতিবেদনে এর পর ইউরোপে শরণার্থী সংকটের বিষয়টি তুলে ধরা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এবারই এতো বড় সংকট দেখা দিল ইউরোপে।

এখন পর্যন্ত শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার ব্যাপারে জার্মানি বিশ্বে সবার শীর্ষে রয়েছে। এ বছর জুন মাস পর্যন্ত ১ লাখ ৫৯ হাজার মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে দেশটি, যা ২০১৪ সালের পুরো বছরের প্রায় সমান। কিন্তু এরপরই সংকট আরও প্রকট আকার ধারণ করে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে জার্মানি চলতি বছরের শেষ নাগাদ দশ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

জার্মানির পরই আশ্রয়স্থল হিসেবে শরণার্থীদের কাছে রাশিয়া দ্বিতীয় দেশে পরিণত হয়েছে। চলতি বছরের প্রথমার্ধে দেশটিতে প্রবেশ করতে এক লাখ মানুষ আবেদন করে। এদের সিংহভাগ ইউক্রেনে চলমান সংঘাতের কারণে বাস্তুচ্যুত। এছাড়া আন্তঃবাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর (আইডিপি) সংখ্যা এবার বিশ লাখ থেকে বেড়ে তিন কোটি চল্লিশ লাখে গিয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানানো হয়েছে প্রতিবেদনে।

শুধুমাত্র যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনেই চলতি বছরের প্রথমার্ধে ৯ লাখ ৩৩ হাজার ৫০০ নতুন আইডিপি’র সৃষ্টি হয়েছে। ইউক্রেন সংঘাতে সৃষ্টি হয়েছে ৫ লাখ ৫৯ হাজার, আর কঙ্গোয় এ সংখ্যা ৫ লাখ ৫৮ হাজার।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here