খোরশেদ আলম বাবুল।

শরীয়তপুর: শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলা সদরের গৈড্যা এমএস ফাজিল মাদ্রার এক আরবী শিক্ষককে বিধি বর্হিভুত নিয়োগ ও পদোন্নতি দিয়ে মাদ্রসা কতৃপক্ষ সরকারী লাখ লাখ টাকা তছরুপ করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মাদ্রাসার অধ্যক্ষ বলছেন গভর্নিং বডির সিদ্ধান্তে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে এলাকায় ও মাদ্রাসায় চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সিনিয়র এক শিক্ষকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে অধ্যক্ষকে লিগ্যাল নোটিশ দেয়া হয়েছে।

গৈড্যা এম এস ফাজিল মাদ্রাসা ও স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, ভেদরগঞ্জ উপজেলা সদরের পৌর এলাকার একমাত্র প্রাচীনতম সুনামধন্য গৈড্যা এমএস ফাজিল (ডিগ্রী ) মাদ্রাসার আরবী শিক্ষক আবু জাফর মোঃ সালেহ ১৯৯৮ সালের ৩০ অক্টোবর এ মাদ্রাসায় আরবী প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। ২০০১ সালের ৪ মে ৪৯৯ বিচার -৭/২এন -৩/৮১নং স্মারকে সে মহিষার ইউনিয়নের নিকাহ রেজিষ্ট্রার নির্বাচিত হওয়ায় মুসলিম বিবাহ ও তালাক (নিবন্ধন) বিধিমালা ২০০৯ এর ২০ বিধি অনুযায়ী সংশিস্নষ্ট এলাকার মাদ্রাসা, স্কুল, মসজিদ ব্যতিত অন্য কোথাও স্ববেতনে চাকুরী করতে পারবেন না বিধায় ২০০১ সালের ২৫ জুন মাদ্রাসার শিক্ষকের পদ থেকে তিনি পদত্যাগ করেন। এরপর উক্ত মাদ্রাসায় ২টি শূন্য পদে শিক্ষক নিয়োগের জন্য মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ একটি জাতীয় দৈনিক (ইনকিলাব) পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রদান করেন। পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে আবু জাফর মোঃ সালেহ মহিষার ইউনিয়নে নিকাহ রেজিষ্ট্রার থাকা স্বত্ত্বে ও পুনরায় আরবী শিক্ষক পদে নিয়োগের জন্য উক্ত মাদ্রাসায় আরবী শিক্ষক পদে আবেদন করেন। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে মাদ্রাসার শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড ২০০২ সালের ১৬ জানুয়ারী গৈ/মা/ভে/০৫/২০০২ স্মারকে ২০০২ সালের ২৮ জানুয়ারী বিধি বর্হিভূত ভাবে আবু জাফর মোঃ সালেহকে আরবী শিক্ষক পদে ও আনোয়ারুল হক কে কৃষি শিক্ষক পদে নিয়োগ প্রদান করেন। এ নিয়োগ পেয়ে আবু জাফর মোঃ সালেহ পুনরায় ২০০২ সালের ৩১ জানুয়ারী গৈড্যা এমএস ফাজিল মাদ্রাসায় আরবী প্রভাষক হিসেবে পদত্যাগের ৭ মাস ৬ দিন পরে যোগদান করেন। বেসরকারী মাদ্রাসা শিক্ষক কর্মচারী বেতনের সরকারী অংশ ও জনবল কাঠামো-১৯৯৫ এর ২৪ অক্টোবর ১৯৯৫ তারিখে শাঃ/১১/বিবিধ-৫/৯৪(অংশ-৬)/৩৯৬ স্মারকে গেজেটের ১৪ নং বিধি মোতাবেক কোন শিক্ষক এক প্রতিষ্ঠান থেকে চাকুরী ত্যাগ করে অন্য প্রতিষ্ঠানে যোগদান করা কালীন সময়ে ব্যবধান ৬ মাসের অধিক হলে উক্ত মেয়াদ অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে গন্য হবেনা এবং এ সময়ে বেতন ভাতাদির সরকারী অংশ প্রদান করা হবেনা। এ মর্মে সুস্পষ্ট আইন থাকা সত্ত্বেও আবু জাফর মোঃ সালেহ কে বেআইনী ভাবে নিয়োগ দিয়ে তার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তার যোগদান পূর্ব বেতন ভাতাদি প্রদান করেছেন। পাশাপাশি তার অভিজ্ঞতার আলোকে তাকে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি করার জন্য মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সুপারিশ করেছেন। ২০০৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারী গভানিং বডির এক সভায় গভার্নিং বডির সভাপতি তৎকালীন ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ১১৭ নং স্মারকে ৭ মাস উর্দ্ধকালীন অভিজ্ঞতা গ্রহনযোগ্য হবেনা বিধায় উত্তোলনকৃত সরকারী, বেসরকারী যে টাকা উত্তোলন/গ্রহন করেছেন তাহা ফেরত প্রদানের নির্দেশ দেন। অথচ গভানিং বডির অন্যান্য সদস্যদের সহায়তায় উক্ত টাকা সরকারী কোষাগারে জমা না দিয়ে অধ্যড়্গ ৩৪৫৪৯৭ ইনডেক্স নম্বর ব্যবহার করে উক্ত টাকা আবু জাফর মোঃ সালেহ এর সাথে যোগসাজসে আত্নসাৎ করেছেন। এ দিকে আবু জাফর মোঃ সালেহ ২০০২ সালের ১৫ মে এক নোটারি পাবলিক এর মাধ্যমে এফিডেভিট করে অঙ্গিকার করেন যে তিনি পূর্বের অভিজ্ঞতার আলোকে কোন পদোন্নতি গ্রহন করবেন না। অথচ একজন সিনিয়র শিক্ষকদেরকে পদোন্নতি না দিয়ে বেআইনী ভাবে জুনিয়র শিক্ষক আবু জাফর মোঃ সালেহকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্য গত ১৫ মে/১৬ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোঃ আনোয়ার হোসেন সুপারিশ করেছেন। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে সিনিয়র শিক্ষক আবদুস সালাম এর পক্ষে শরীয়তপুর জজকোর্টের এডভোকেট মঈনুল ইসলাম অদুদ গত ৫ ডিসেম্বর সোমবার গৈড্যা এম এস ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ কে এক লিগ্যাল নোটিশ প্রদান করেন। আগামী ৩০ দিনের মধ্যে নোটিশের জবাব দেয়ার জন্য বলা হয়েছে।

এ ব্যাপারে আরবী শিক্ষক গৈড্যা মাদ্রসার আরবী শিক্ষক আবু জাফর মোঃ সালেহ বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা। আমি বৈধ একজন শিক্ষক।

অভিযোগকারী সিনিয়র শিক্ষক মোঃ আবদুস সালাম মিয়া বলেন, সরকারী নিয়ম বর্হিভুত ভাবে আবু জাফর মোঃ সালেহকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া একই সাথে ২ জন শিক্ষককে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। একটি ভুয়া ইনডেক্স নম্বর দিয়ে আবু জাফর মোঃ সালেহকে ৪৮০০ টাকা বেতন স্কেলে ও কৃষি শিক্ষক আনোয়ারুল হক কে বৈষম্য করে ৪৩০০ টাকা স্কেলে বেতন প্রদান করা হয়। এছাড়া অধ্যক্ষ ও গভানিং বডি শিক্ষক আবু জাফর মোঃ সালেহ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সিনিয়র শিক্ষকদের বাদ দিয়ে অবৈধ ভাবে তাকে পদোন্নতির জন্য সুপারিশ করেছে। আমরা এর প্রতিকার চাই।

গৈড্যা এমএস ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোঃ আনোয়র হোসেন বলেন, এ নিয়োগ ও পদোন্নতির বিষয়ে গভানিং বডির সিদ্ধান্তে দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আমি কোন মন্তব্য করতে চাইনা। তাহলে আমার চাকুরীর ক্ষেত্রে সমস্যা আছে।

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here