দূষিত শহরডেস্ক নিউজ :: বিশ্বের অনেক অংশে বায়ুদূষণের মাত্রা বিপজ্জনকভাবে বেড়ে গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নতুন তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় আবারও শীর্ষে এসেছে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির নাম। মেগাসিটিগুলোর মধ্যে ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত মুম্বাই রয়েছে চার নম্বরে। আর ঢাকার অবস্থান তৃতীয়। অতীতে শীর্ষ দূষিত হলেও চীনের শহরগুলোতে গত কয়েক বছর ধরে বাতাসের মান উন্নতি হচ্ছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

বিশ্বে ১০ জনের মধ্যে নয়জন মানুষই উচ্চমাত্রায় দূষিত বায়ুতে শ্বাস নেয়। অর্থাৎ বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৯০ শতাংশই শ্বাস নেন দূষিত বায়ুর মধ্যে।

‘বিশ্বব্যাপী ১০ জনের মধ্যে নয়জন মানুষ দূষিত বায়ুতে শ্বাস নেয়, যদিও কিছু দেশ পদক্ষেপ গ্রহণ করছে’ এই শিরোনামে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বুধবার এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

এতে উল্লেখ করা হয়, প্রতি বছর দূষিত বায়ু সেবনের কারণে গোটা বিশ্বে অন্তত ৭ লাখ মানুষ মারা যান।

প্রতিবেদনটি তৈরির জন্য বিশ্বের ১০৮টি দেশের ৪ হাজার ৩০০ শহরের বায়ুর নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।

সংস্থাটির গবেষণায় দেখা গেছে, দূষিত বায়ুর মধ্যে থাকা অতি সূক্ষ্ণ কণার কারণে প্রতি বছর বিশ্বে ৭ লাখের বেশি মানুষ মারা যান। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ মানুষই দরিদ্র বা মধ্যম আয়ের দেশ। আর এসব দেশের বেশিরভাগই এশিয়া ও আফ্রিকায় অবস্থিত।

বায়ু দূষণের ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি, স্ট্রোক, শ্বাস-প্রশ্বাস যন্ত্রের ঝুঁকি এমনকি ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়ছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। কঠোর নিয়মকানুনের মাধ্যমে উন্নত দেশগুলো এই সমস্যা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেও এখন দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বায়ুদূষণের ফলে মৃত্যুর হার দিন দিন বেড়েই চলেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গণস্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিভাগের প্রধান মারিয়া নেইরা বলেন, ‘আমরা এই মুহূর্তে খুবই নাটকীয় একটি সমস্যার মোকাবিলা করছি।’

গবেষণায় ২০৫ থেকে ১০ মাইক্রোমিটার ব্যাসের এবং ২.৫ মাইক্রোমিটার ব্যাসের চেয়ে ছোট কিন্তু বিপজ্জনক কণার বিষয়ে দৃষ্টিপাত করা হয়েছে। এসব কণায় থাকে সালফেট এবং ব্ল্যাক কার্বনের মতো টক্সিন। এগুলোর বিষক্রিয়ায় ফুসফুস এবং কার্ডিওভাস্কুলার ব্যবস্থা বা রক্ত সংবহন ব্যবস্থায় সমস্যা সৃষ্টি করে। এসবের কারণে স্ট্রোক, হৃদরোগ, ফুসফুসের ক্যান্সার, নিউমোনিয়াসহ নানা রোগ হয়।

এখানে উদ্বেগের বিষয় এটা যে, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশের বেশি মানুষের কাছে এখনো রান্নার জন্য ভালো জ্বালানি বা প্রযুক্তির নেই। রান্নার কাজে নোংরা জ্বালানি ব্যবহার বা কয়লা পোড়ানোর কারণে বায়ুদূষণ হয় যার কারণে বিশ্বে অন্তত ৩০ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু হয়। এদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী এবং শিশু।

এছাড়া ঘরের বাইরে দূষিত বায়ুতে শ্বাস নেওয়ার কারণে মারা যায় প্রায় ৪০ লাখ মানুষ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ঘরের ভেতরের বায়ুও এখন নিরাপদ নেই। এ কারণে ঘরের ভেতরের এবং বাইরের দুই জায়গাতেই বায়ুদূষণ এসব মৃত্যুর কারণ।

প্রসঙ্গত, এর আগে গত বছরের মার্চে সংস্থাটি এক প্রতিবেদনে বলেছিল, বিশ্বে প্রতি বছর পাঁচ বছরের কম বয়সী ১৭ লাখ শিশুর মৃত্যু হয় অস্বাস্থ্যকর বা দূষিত পরিবেশের কারণে। অল্প বয়সে শিশুরা নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়ার ফলে সারা জীবন তাদের অ্যাজমার মতো শ্বাসযন্ত্রের রোগের ঝুঁকিতে থাকে। দূষিত বায়ু তাদের হৃদরোগ, স্ট্রোক ও ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here