শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে নৌকা স্কুল্রকলিট তালুকদার, পাবনা প্রতিনিধি :: বৃহত্তর চলনবিল অঞ্চলের পানি বেষ্টিত অসহায়, সুবিধা বঞ্চিত শিশু আর তরুণ-তরুণীদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে ভ্রাম্যমান নৌকা স্কুল ও পাঠাগার। এ অঞ্চলের শিশু শিক্ষার্থীদের স্কুলে যেতে হয়না, বরং নৌকা স্কুলই তাদের কাছে চলে আসে। শিশু কিংবা তরুণ-তরুণী নয়, নৌকায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে কৃষি ভিত্তিক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিয়ে বন্যা সহনশীল ফসল চাষে উপকৃত হচ্ছেন গৃহিণীরা। ইতোমধ্যে এই নৌকা স্কুল সাড়া জাগিয়েছে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে।

পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও নাটোরের তিন জেলা জুড়ে বিশাল একটি বিলের নাম ‘চলনবিল’। এই বিলের শতাধীক মানুষ বছরের প্রায় ছয় মাস থাকে পানি বন্দি। প্রতি বছর বন্যায় বিলের পানি গ্রামে উঠে গেলে পানির কারণে বছরের বেশীর ভাগ সময় স্কুল থাকে বন্ধ। ক্ষতিগ্রস্থ হয় হাজার হাজার শিক্ষার্থী। ক্ষতিগ্রস’ শিক্ষার্থী ও কৃষকদের কথা বিবেচনা করে

২০০২ সালে নাটোর জেলার একটি বে-সরকারী সংস্থা নৌকা স্কুল, লাইব্রেরী ও কৃষি প্রশিক্ষন কার্যাক্রম শুরু করে বৃহত্তর চলনবিল অধ্যুষিত অঞ্চলে। শুরুর পর দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই কার্যক্রম । সকাল ৮টা থেকে শুরু হয় এই নৌকা স্কুলের কার্যাক্রম। নৌকার মাঝি বাড়ির ঘাট থেকে ছাত্র ছাত্রীদের নৌকা করে তুলে নিয়ে আসে।

ছাত্র ছাত্রীদের উঠানো শেষ হলে একটি নিদিষ্ট স্থানে নৌকা নঙ্গর করে ক্লাশ করানো হয়। সকাল ৮টা থেকে শুরু পর শেষ হয় বেলা ১২ টায়। ক্লাশ শেষে আবার বাড়ির ঘাটে নামিয়ে দেওয়া হয় শিক্ষার্থীদের। নামানো শেষে আবার শুরু হয় দ্বীতিয় শিফটের শিক্ষা কার্যাক্রম চলে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত।

শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে নৌকা স্কুল্রএভাবে পাবনার চাটমোহর ও নাটোরের বিভিন্ন নদীতে ২২ টি নৌকা স্কুলে প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী প্রথম শ্রেনী থেকে ৪ র্থ শ্রেনী পর্যন্ত বিনা খরচে লেখা পড়ার সুযোগ পাচ্ছে। আর এই নৌকা স্কুল পেয়ে খুশি কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি এখন আর সন্তানের স্কুলে যাওয়া নিয়ে চিন্তা করতে হয়না অভিবাবকদেরকে।

নৌকা স্কুল থেকে শুরু হলেও এখন বৃদ্ধি হয়েছে লাইব্রেরী, কম্পিউটার ও কৃষি ও মানবাধিকার বিষয়ক প্রশিক্ষন কেন্দ্রে। লাইব্রেরী, প্রশিক্ষন কেন্দ্রের সুবিধা নিচ্ছে গ্রামের শিক্ষিত যুবকেরা। কারণ এই লাইব্রেরীতে রয়েছে কম্পিউটারের সুবিধা। এখান থেকে তারা বিভিন্ন ধরনের বই পড়ার পাশাপাশি শিখতে পারছে কম্পিউটার। সূর্ষ চালিত বিদ্যুৎ দিয়ে চালানো হচ্ছে কম্পিউটার।

বছরের প্রায় ৬ মাস যেহেতু তলিয়ে থাকে এই অঞ্চল সে কারণে কৃষি প্রশিক্ষন কেন্দ্রে গৃহিনীদের শেখানো হচ্ছে কোন ধরনের ফসল বন্যায় ক্ষতি হয়না। আর এই প্রশিক্ষন কেন্দ্রে থেকে প্রশিক্ষন নিয়ে স্বাবলম্বি হয়েছে অনেক নারী। আর এই ভ্রাসমান স্কুল,লাইব্রেরী ও প্রশিক্ষন কেন্দ্র নিয়ে আশাবাদি এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।

এই কার্যক্রমের উদ্যোক্তা রেজওয়ান জানান, ২০০২ সালে চলনবিলের স্কুল শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার বিষয়ে বিকল্প স্কুল হিসেবে এই ভাসমান স্কুলের কথা মাথায় আসে তার। এরপর তার স্কলারশিপের মাত্র ৫’শ মার্কিন ডলার ও একটি ল্যাপটপ দিয়ে স্কুলের যাত্রা শুরু করেন। প্রথমে একটি ভাসমান স্কুল করে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের ব্যাপক সাড়া লক্ষ্য করেন। প্রথম এক বছর তিনি বিভিন্ন স্থানে ই-মেইল করতে থাকেন সাহায্যের আশায়। তার এই আইডিয়াটা চোখে পড়ে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের। সেখান থেকে ৫ হাজার মার্কিন ডলার অনুদান পান তিনি। তারপর থেকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ইতিমধ্যেই ১৫টি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here