ষ্টাফ রিপোর্টার :: আরও একটা ফাইনাল। আরও একবার স্বপ্নভঙ্গই সঙ্গী হলো। তালটা কেটে দিয়েছিলো অসময়ের ঝড়-বৃষ্টি। আর ম্যাচ থেকে বের হয়ে গেলো বাংলাদেশ আবু হায়দার রনি ও সাকিব আল হাসানের দুটো ওভারে।
বৃষ্টি আর ধাওয়ান-কোহলির ব্যাটিং মিলিয়ে মিরপুরে স্বপ্নভঙ্গ হলো বাংলাদেশের। ঝড় মাথায় করে, দু দিনের কষ্ট পার করে মাঠে আসা দর্শকরা বাংলাদেশ দলের কাছ থেকে দারুন লড়াই দেখতে পেলেও আরও একবার ফাইনালে হারার বেদনা নিয়েই মাঠ ছাড়লেন।
প্রথম টি-টোয়েন্টি এশিয়া কাপে বাংলাদেশকে ৮ উইকেটে হারিয়ে ট্রফিটা ভারতে নিয়ে গেলো মহেন্দ্র সিং ধোনির দল। আগে ব্যাট করে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অসামান্য বীরত্বে দাড় করানো ১২০ রানের স্কোরকে ভারত টপকে গেলো ৭ বল বাকী রেখে।
১৫ ওভারে ১২১ নিশ্চয়ই অনেক বড় লক্ষ ছিলো। সেই লক্ষকে আরও বড় বানিয়ে ফেলার মতো করে বোলিং শুরু করেছিলো বাংলাদেশ। প্রথম ৪ ওভারে মাত্র ১৯ রান ব্যয় করেছিলেন তাসকিন ও আল আমিন। এর মধ্যে আল আমিন তুলে নিয়েছিলেন রোহিত শর্মার উইকেটও। কিন্তু পরের দুটো ওভারেই রনি ১৪ ও সাকিব ১৫ রান ব্যয় করে লাগামটা হাতছাড়া করে ফেলেন।
এই দুই ওভারের সুযোগে চড়ে বসা শিখর ধাওয়ান ও কোহলি ৯৪ রানের জুটি করেন। ধাওয়ান আউট হওয়ার আগে করেন ৬০ রান। এরপর বিরাট কোহলি এক প্রান্তে ৪০ রান করে অপরাজিত রইলেন। তবে অধিনায়ক ধোনি এসে ৬ বলে ২০ রান করে সবই শেষ করে দিলেন।
টসে জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছিলো ভারত। ১৫ ওভারের ম্যাচের যেরকম ব্যবহার করা উচিত, তা করতে পেরেছিলেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা।
সৌম্য সরকার ও তামিম ইকবাল বাংলাদেশকে ঝড়ো একটা সূচনা এনে দেন। তামিম ১৩ ও সৌম্য ১৪ রান করে আউট হন। এরপর আসা সাব্বির রহমান রুম্মন একটু স্বভাববিরুদ্ধ ইনিংস খেলে শেষ অবদি অপরাজিত থাকেন। ২৯ বলে ২টি মাত্র চারে সাজানো ৩২ রান করেন সাব্বির। এরপর সাকিব এসে ১৬ বলে ৩টি চারে সাজানো ২১ রানের একটা ইনিংস খেলে বাংলাদেশের জন্য প্লাটফর্ম তৈরী করে দিয়ে যান।
এরপর আসা মুশফিক এবং দ্রুত রান তোলার তাড়ায় আগে ব্যাটিংয়ে আসা মাশরাফি হতাশ করলেও খেলাটা দেখিয়ে যান সেই মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। টূর্নামেন্ট জুড়ে টি-টোয়েন্টির নতুন ভূমিকায় চমকাতে থাকা রিয়াদ গতকাল রীতিমতো চড়াও হয়ে বসেন ভারতীয় বোলারদের ওপর। ১৪তম ওভারে দুটি ছয় ও একটি চারে তুলে নেন ২১ রান। শেষ ওভারে মাত্র ৭ রান এলেও মোট পুজিটা একেবারে খারাপ ছিলো না।
রিয়াদ শেষ পর্যন্ত ১৩ বলে ২টি চার ও ২টি ছক্কায় সাজানো দলের সর্বোচ্চ ৩৩ রানে অপরাজিত থাকেন। এর আগে বিকাল ছয়টার দিকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি টের পাওয়া যাচ্ছিলো। আর পনেরো মিনিট পরই শুরু হলো অসময়ের ‘কালবৈশাখী’র তান্ডব।
বাতাসের প্রবল প্রতাপে জায়ান্ট স্ক্রিনের চারপাশে তৈরী অস্থায়ী বিজ্ঞাপনী কাঠামো ভেঙে পড়লো, বিভিন্ন প্রান্তে উড়তে থাকলো বিলবোর্ড আর বিজ্ঞাপনী প্লাকার্ড। গ্যালারির মানুষ তখন জীবন বাচাতে ছোটাছুটি করছেন। এর মধ্যে শুরু হলো প্রবল বৃষ্টিও।
এই ভয়ানক বাতাস কিছুতেই কাভারকে উইকেটের ওপর বসাতে দিচ্ছিলো না। এক পর্যায়ে সব মাঠকর্মী মিলে কাভার মাটির সাথে চেপে নিজেরা শুয়ে রইলেন। মানুষসহ উড়ে যেতে চাচ্ছিলো কাভার!
ঝড় মিনিট দশেকের মধ্যে থেমে গেলো বৃষ্টি চললো একেবারে পৌনে আটটা অবদি। বিষ্ময়কর ব্যাপার দেখালেন মাঠকর্মীরা। বৃষ্টি থেমে যাওয়ার আগে আগেই ঝাপিয়ে পড়লেন কাজে। প্রথমে মেশিন দিয়ে কাভারের ওপরের আর আউটফিল্ডের পানি সরানোর চেষ্টা। এরপর কাভার সরানো এবং দ্রুত মাঠ তৈরী করা। অত্যাধুনিক পানিনিষ্কাষন ব্যবস্থা বসানো আছে মাঠের নিচে। তাই চোখের পলকে মাঠ তৈরী।