গৃহকর্মী রোমেলা খাতুনকে নির্যাতনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় অভিযুক্ত পুলিশ দম্পতি চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) শাহেদ আলী ও তার স্ত্রী সুইটি বেগমকে খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ। অথচ মামলা দায়েরের পরদিন শাহেদ আলী পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোমেলা কে নিজে এসে দেখে গেছেন বলে একাধীক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

এদিকে ছুটি শেষে গত ১৪ নভেম্বর এস আই শাহেদ আলীর কর্মস্থলে যোগদান করে রির্পোট করার কথা থাকলেও তিনি কর্মস্থলে যোগদান করেনি।

পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার কাশীনাথপুর ইউনিয়নের গোটেংরা গ্রামের ইয়াজ উদ্দিনের মেয়ে রোমেলা (৮) কে নির্যাতনের অভিযোগে গত ১২ নভেম্বর রোমেলার পিতা ইয়াজ উদ্দিন বাদী হয়ে চট্রগ্রামের সীতাকুন্ডু থানার উপ-পুলিশ পরির্দশক (এসআই) শাহেদ আলী ও তার স্ত্রী সুইটি বেগম কে আসামী করে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে সীতাকুন্ডু থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর থেকে

পুলিশ বলছে আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্ঠা করা হচ্ছে। কিন্তু তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পুলিশের এই বক্তব্যের প্রতিবাদ করেছেন শিশু রোমেলার পিতা মামলার বাদী ইয়াজ উদ্দিন। তিনি এবং পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একাধীক নিরর্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, মামলা দায়েরের পর দিন ১৩ নভেম্বর দুপুরে শাহেদ আলী পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসে রোমেলা কে দেখে গেছে। ওই দিন বিকেলে শাহেদ আলীর মুঠো ফোনে যোগাযোগ করলে শাহেদ আলী নিজেও রোমেলাকে দেখতে যাওয়ার কথা স্বীকার করেন।

এদিকে মামলা দায়েরের সময় শাহেদ আলী ছুটিতে তার গ্রামের বাড়ি পাবনার বেড়া উপজেলায় ছিলেন। মামলা দায়েরের পর ১৩ নভেম্বর এক অফিস আদেশে শাহেদ আলীকে সাময়িকভাবে বরখানত্ম করে তার ছুটি বাতিল করে ১৪ নভেম্বর চট্রগ্রাম জেলা পুলিশ লাইনে যোগদান করে তাকে রিপোর্ট করতে বলা হয়। এ ব্যাপারে সাঁথিয়া থানায় জরুরী বার্তা পাঠানো হয় এবং শাহেদের ঠিকানায় চিঠি পাঠানো হয়। কিনত্মু অফিস আদেশ অমান্য করে নির্ধারিত সময়ের চার দিন পরও এস আই শাহেদ আলী চট্রগ্রাম পুলিশ লাইনে যোগদান করেনি।

চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূরে আলম মীনা’র সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ১৪ নভেম্বর জেলা পুলিশ লাইনে যোগদান করে তাকে রিপোর্ট করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু  নির্ধারিত সময়ে কর্মস্থলে যোগদিয়ে রিপোর্ট না করায় তাকে পলাতক হিসাবে গণ্য করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন পুলিশের বিশেষ টিম এসআই শাহেদ আলী ও তার স্ত্রী সুইটি বেগমকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

উল্লেখ্য শিশুকন্যা রোমেলা খাতুনকে ৯ মাস আগে পাবনার বেড়া উপজেলার নান্দিয়ারা গ্রামের ছেলে এবং চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডু থানার উপ-পুলিশপরিদর্শক (এসআই) শাহেদ আলী তার সীতাকুন্ডুর বাসা বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করার জন্য নিয়ে যায়। সীতাকুন্ডুতে নিয়ে যাওয়ার পর থেকেই দৈনন্দিন কাজের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয় ৮ বছরের ওই শিশু গৃহকর্মীর উপর। কাজের ফাঁকে ফাঁকে সামান্য ভুল হলেই নেমে আসতে থাকে অকথ্য নির্যাতন। তার সারা শরীরে গরম খুনিত্মর ছেঁকা দেওয়া হয়। পেটানো হয় খুন্তি ও চামচ গরম করে। গায়ে গরম পানি ও গরম তরকারি ঢেলে পুড়িয়ে দেওয়া হয় সারা শরীর। গত ৯ নভেম্বর রাতে শিশু রোমেলাকে উদ্ধার করে পরদিন পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/কলিট তালুকদার/পাবনা

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here