রহিমা আক্তার মৌরহিমা আক্তার মৌ :: ২০১৭ একুশে গ্রহ্নমেলায় আমার তিনটা বই আসছে। গল্প গ্রন্থ “গল্পের আয়নায় মানুষের মুখ”- ‘মুক্তদেশ প্রকাশন’ স্টল- ১৮০/১৮১ , প্রবন্ধের বই ” নক্ষত্ররাজির কথা”- ‘ছায়াবীথি প্রকাশন’ স্টল- ২২১, আর শিশুতোষ গল্পের বই “তুলতুলির গল্প”- ‘দাঁড়িকমা প্রকাশনী’ স্টল – ১০,৩৮৮,৩৮৯। ২০১৬ একুশে গ্রহ্নমেলায় ছিলো শিশুতোষ গল্পের বই ” মেঘনার মিষ্টি স্বপ্ন”, ঐ বইটা ছিলো আমাদের মা ও মেয়ের বই।

বইতে আমার আর আমার দুই সন্তান রৌদ্র মালিহা ও অভ্র ফারিহার মোট ১৯টা গল্প আছে, সেই বইটিও মুক্তদেশ প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হয়, বইটি এবারো মেলায় আছে, বাংলাদেশে এই প্রথম মা মেয়ের বই এক মলাটে। ২০১৫  একুশে গ্রহ্নমেলায় প্রকাশিত হয় বই ” মুক্ত আকাশ কতদূর ” বইটি।

গল্পের বইটিতে মোট ১২টি গল্প রয়েছে। গল্পগুলোতে আমি আমাদের সমাজ আর সামাজিকতার কিছু দিক তুলে ধরতে চেয়েছি। চেয়েছি নিঃস্বার্থ ভালোবাসার কিছু পাওয়া আর বেদনা তুলে আনতে। নারীদিবস পালিত হচ্ছে তার শততম বছর পার হয়েছে অনেক আগে। স্বাধীনতার ৪৫ বছর পার হয়েছে, দেশ সমাজ আর সংস্কৃতির অনেক উন্নতি হলেও এখনো সমাজে মা না হওয়ার জন্যে পুরো দোষ যেমন একজন নারীকে বহন করতে হচ্ছে, তেমনি কন্যা সন্তান দিয়ে বংশরক্ষা হয়না এমন কথা প্রচলন থাকাটা খুবই বেমানান মনে হয়। মনে হয় নারীকে কোণঠাসা করে রাখার জন্যেই মানুষের তৈরি এই অপবাদ গুলো।

সমাজকে বুঝতে হবে কন্যা সন্তান দিয়ে নিজের বংশ রক্ষার চেয়ে এই কন্যাই কিন্তু অন্যের বংশ রক্ষা করছে সন্তান জন্ম দিয়ে। কখনো কখনো নিজের বাবার পরিচয়ের চেয়ে মায়ের স্বামীর স্বীকৃতি সমাজের কাছে কতটা জরুরি তা তুলে ধরেছি স্বীকৃতি নামক গল্পে। আমরা বলি নিজে কানে যা শুনি বা চোখে যা দেখি তা কখনোই মিথ্যে হতে পারেনা, মিথ্যে না হলেও এর পেছনের গল্পটা অজানা থেকে যায়। এমন এক সত্যের প্রতিশোধ নিতে কত ভুল হয়ে যায়, তার তুলে এনেছি ‘পরিণতি ‘ নামক গল্পে। আশাকরি পাঠক বাস্তবতার মিল খুঁজে পাবেন গল্পগুলোতে আর কিছু হলেও মনের খোরাক মিটবে। প্রতিটি গল্পই দেশের বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকার সাহিত্য পাতা ও বিভিন্ন ম্যাগাজিন এ প্রকাশিত হয়েছে।

প্রবন্ধের বইতে সাহিত্য জগতের ১২ জন নক্ষত্রের কথা লেখা আছে। যারা হলেন- আবদুল মান্নান সৈয়দ, কবি আহসান হাবীব, কাজী নজরুল ইসলাম, নীলিমা ইব্রাহীম, নুরজাহান বেগম, কবি নুরুল হুদা, বেগম রোকেয়া, কবি রফিক আজাদ, শামসুন্নাহার মাহমুদ, কবি সুফিয়া কামাল, সেলিনা হোসেন, সৈয়দ শামসুল হক। ১২ জনের মাঝে ৬ জন নারী ও ৬ জন পুরুষ। কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন আর কবি নূরুল হুদা বেঁচে আছেন। অন্যরা বেঁচে না থেকেও আমাদের সাহিত্য অঙ্গনে নক্ষত্র হয়ে উজ্জ্বল আছেন। ১২ জনের এই লিস্ট করতে সিনিয়র জুনিয়র তেমন কিছু ভাবিনি। হয়তো সে ভাবে ভাবলে এখানকার কেউ বাদ পড়তেন অন্য কেউ যোগ হতেন। প্রবন্ধ গুলো এই নক্ষত্রদের জন্ম ও মৃত্যু তারিখে বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকা ও ম্যাগাজিন এ প্রকাশিত হয়েছে। প্রথম লেখাটি লিখি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনকে নিয়ে।

২০১৫ সালে বাংলা একাডেমীতে ‘চন্দ্রাবতী ‘ সাহিত্য সন্মাননা অনুষ্ঠানে গিয়ে সেলিনা আপার সাথে দেখা ও কিছু গল্প করা। সেদিনের স্মৃতি নিয়েই শ্রদ্ধেয়া আপার জন্মদিনে লেখাটা লিখি। লেখাটি কয়েকটা জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এরপর ক্রমান্বয়ে অন্য লেখা গুলো লেখা। সাহিত্যের এই নক্ষত্রদের নিয়ে অনেকেই অনেক লিখেছেন, তাদের লেখার মাঝে আমার এই লেখা গুলো একেবারেই নগণ্য হতে পারে, হতে পারে একেবারেই সাধাসাধি। তবে  আমি বলবো ভালোবাসা আর সন্মানের জায়গা থেকেই আমার এই লেখা গুলো। প্রবন্ধ গুলো জাতীয় পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে প্রকাশিত।

“তুলতুলির গল্প” নামে যে বইটি আসছে, তা মেলার ১৫ তারিখের পর আসছে ‘দাঁড়িকমা প্রকাশনী ‘ থেকে। ‘দাঁড়িকমা প্রকাশনী’ নিজেদের খরচেই বইটি প্রকাশ করছেন। লেখকদের সম্মান জানিয়ে প্রকাশনীটি বিভিন্ন ক্যাটাগরির ২০টা বই  ফ্রি করে মেলায় আনছেন। সেই ২০টার বইয়ের মাঝে আমার ” তুলতুলির গল্প” একটি। গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র তুলতুলিকে নিয়েই গল্প গুলো। তুলতুলি ছিলো গ্রামের ছোট মেয়ে, বাবা আর নানা শহরের দারোয়ান, মা আর নানী শহরের বাসা বাড়িতে কাজ করে।

সে জন্যেই তুলতুলি এখন শহরে থাকে, গ্রামে নিজের পাওয়া আর না পাওয়া  শহরের জীবন যাপনের মাঝে ছোট তুলতুলির কিছু স্বপ্ন পুরণে এগিয়ে আসে নীলাঞ্জনা। তুলতুলির সেই স্বপ্ন পূরণের কথা গুলোই এসেছে গল্পে। গল্পগুলো যেমন ছোটদের ভালো লাগবে তেমনি বড়দের ও পড়া প্রয়োজন মনে করি। কারণ আমরা যারা শহরে আছি তারা কিভাবে একটি শিশুর মুখে হাসি ফুটাতে পারি বা, ইচ্ছে করলেই এমন শিশুদের পাশে দাঁড়াতে পারি তা জানতে পারবেন। এই বইয়ের গল্পগুলো জাতীয় পত্রিকার ছোটদের পাতায় ও বিভিন্ন ম্যাগাজিন লিটল ম্যাগাজিন এ প্রকাশিত।

লেখকের ইমেইল: somsrahima@yahoo.com

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here