লেখক: জাহিদ হাসান

:: বাংগালী জাতির জীবনে প্রতি বছর ১৫ আগষ্ট যেমন ঘুরে ঘুরে আসবে তেমনি এ দিনের মর্মান্তিক ঘটনার স্মৃতিচারন, পটভূমি, অনিবার্যতা ও ইতিহাস নিয়ে পর্যালোচনাও অব্যাহত থাকবে।

১৯৭৫ সালের পর ৩৯ বছর পার হয়ে গেছে, দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট এখন বদলে গেছে। ঐ ঘটনায় সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের জীবিত কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তার দল আওয়ামী লীগ এখন ( ৫ই জানুয়ারীর অগ্রহনযোগ্য নির্বাচনের পর ) বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে আছে। তাই এখন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্টের ঘটনাকে বর্তমান রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট থেকে আওয়ামী লীগ আপন দলীয় দৃষ্টিকোন থেকে  পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করছে এবং পুরো আগষ্ট মাস জুড়ে রাষ্ট্রীয় শোক পালন করছে।

আওয়ামী ভাবাদর্শে বিশ্বাসী বিশেষ করে আওয়ামী সরকারের আমলে যেসব বেসরকারী টেলিভিশন লাইসেন্স পেয়েছে মুজিব কন্যাকে খুশি করার জন্য পুরো আগষ্ট পর্যন্ত এসব টিভি চ্যানেল ও আরো কিছু আওয়ামী মার্কা সংবাদপত্র ১৫ আগষ্টের শোকাবহ ঘটনাকে ( এক পেশে দৃষ্টিকোন থেকে ) বার বার হাজার বার দিন রাত ২৪ ঘন্টা/প্রতিদিন প্রচার করতে করতে শোকের প্রকৃত অনুভূতি গ্রহন করার মানষিক অবস্থাকে ভোতা করে দিয়ে এসব প্রচারকে সাধারন মানুষের কাছে পীড়াদায়ক, বিরক্তিকর ও মূল্যহীন বা ঠুনকো করে তুলছে।

এজন্য এবং বিশেষ করে আওয়ামী লীগ শেখ মুজিবুর রহমানকে সবার কাছে গ্রহনযোগ্য জাতীয় নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার পরিবর্তে স্বাধীনতার স্থপতি এই মহান নেতাকে তাদের দলীয় নেতায় পরিনত করার কারণে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে শেখ মুজিব যেমন প্রত্যাশিত মর্যাদা থেকে বঞ্চিত হন তেমনি ১৫ আগষ্টকেও জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করা হয়না, কেবল নব্য ও সুবিধাবাদী আওয়ামী লীগাররা ( যাদেরকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্টের পর কোথাও খুজে পাওয়া যায়নি ) তখন নিজেদের মধ্যে শোক দিবস পালন করে শেখ মুজিবের আদর্শের ভূঁয়া সৈনিক হিসেবে তাদেরকে জাহির করার অভিনয় করে।

কিন্তু বাংলাদেশের ১৯৭২-১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতাকে বিবেচনায়  রেখে ১৫ আগষ্টকে মূল্যায়ন করা না হলে ১৫ আগষ্টের প্রকৃত ইতিহাসের প্রতি অবিচার করা হবে।  ১৫ আগষ্টের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট : এ ঘটনার স্মৃতিচারন, বস্তুনিষ্ট ইতিহাস জানার ও পর্যালোচনা করার সময় কতগুলো মৌলিক প্রশ্ন ও প্রেক্ষাপট অবশ্যই বিবেচনায় বা মনে রাখতে বা আনতে হবে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বাংলাদেশের ইতিহাসে যে দু:খজনক ঘটনা ঘটেছিল তা কি শুধু “কতিপয় বিপথগামী সেনা সদস্য” কর্তৃক শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের খুনের ঘটনাই ছিল, নাকি এটা প্রকৃত অর্থে ক্ষমতার মসনদ পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগের বিশ্বাসঘাতক একটা মহল, দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র ও সশস্ত্র বাহিনীর একটা সফল সামরিক অভ্যুত্থান বা বিপ্লব ছিল ? আজ যারা এটাকে শুধুই একটা খুনের ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করছে তারা আর কেউ নয় তারা সুবিধাবাদী , বর্নচোরা অর্থাৎ ভোল পাল্টাতে অভ্যস্থ আওয়ামী রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাসী একদল চাটুকার।
১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট পর্যন্ত এই দালাল গোষ্টিই চাটুকার হিসেবে শেখ মুজিবের চারিপাশে অবস্থান করে দেশের অর্থ সম্পদ লুটেপুটে খেয়েছে, দেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে খেতাব পেতে ভূমিকা রেখেছিল, লাল বাহিনী নীল বাহিনী রক্ষীবাহিনী তৈরী করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তথা দেশের হাজার হাজার ভিন্ন মতাবলম্বি মানুষকে বিনা বিচারে হত্যা করতে শেখ মুজিবকে উদ্বুদ্ধ ও উৎসাহিত করেছিল।

১৯৭৪ সালে কৃত্রিম দূর্ভিক্ষ সৃষ্টি করে দেশের লাখ লাখ মানুষকে না খেয়ে মৃত্যুবরন করতে বাধ্য করেছিল, আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলাম দৈনিক গড়ে শুধু ঢাকা শহরেই ১০ টা বেওয়ারিশ লাশ দাফন করেছে, ডাস্টবিনে মানুষ ও কুকুর খাওয়া (উচ্ছিষ্ট) নিয়ে টানাটানি করেছে, কাপড়ের অভাবে কলাপাতা দিয়ে লাশ দাফন করতে হয়েছিল, এসবের সচিত্র করুন প্রতিবেদন ঐ সময় প্রতিদিন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৭২-৭৫ সালের মধ্যেই বাংলাদেশে প্রথম ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা ঘটেছিল (যার সাথে ঐ সময়ের প্রধানমন্ত্রীর ছেলের নামও বাজারে গুঞ্জন ছিল ), বাংলাদেশের জন্মের পর ঐ সময়েই প্রথম ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের দলীয় কোন্দলের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭ জন ছাত্রকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছিল।

ঐ সময়েই বাংলাদেশে ছিনতাই বা হাইজাক নামক শব্দ ও ঘটনাটার জন্ম হয়েছিল, সন্ধ্যার পর ছিনতাই এর ভয়ে মানুষ ঘর থেকে বের হতোনা। দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, দলীয়করন, দু:শাসন/কুশাসন বলতে যা বুঝায় তার সফল সূচনা বা শুরু ঐ সময়েই হয়েছিল। বিচার বহির্ভূত হত্যার প্রচলন ( বিপ্লবী সিরাজ শিকদার হত্যার মাধ্যমে ) ঐ সময় থেকেই শুরু হয়েছিল, গুম করার ঘটনার সূচনাও ঐ সময়েই হয়েছিল। নির্বাচনে কারচুপি (ব্যালট বাক্স ছিনতাইসহ ) ঐ সময়েই শূরু হয়েছিল, পরীক্ষায় ফ্রি-স্টাইল নকলের
মহোৎসব ঐ সময়েই শুরু হয়েছিল। চাটুকার আওয়ামী গোষ্টির দালালরা ঐ সময় দেশের এহেনে পরিস্থিতির বিরুদ্ধে মানুষ যাতে গনতান্ত্রিক পন্থায় বিরোধিতা করতে না পারে, দেশের ও জনগনের প্রকৃত দূর্দশার অবস্থা পত্রপত্রিকায় প্রকাশ করতে না পারে মানুষের গনতান্ত্রিক ও বাকস্বাধীনতাকে স্তব্ধ করার উদ্দেশ্যে এবং শেখ মুজিবকে ইতিহাসের ঘৃন্যতম স্বৈরাচারী শাসক বানানোর উদ্দেশ্যে তখন বাকশাল নামক একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে শেখ মুজিবকে উদ্বুদ্ধ করেছিল, তাদের সবার মূখে তখন শ্লোগানও ছিল একটা “এক নেতা এক দেশ বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ”।

দেশের সকল সংবাদপত্র বন্ধ করে দিয়ে শুধু সরকারী নিয়ন্ত্রনাধীন ৪টা সংবাদপত্র প্রকাশের অনুমতি দিয়েছিল। দেশের ঐ সময়কার এহেন অরাজক, শ্বাসরুদ্ধকর ও অসহনীয় জঘন্য পরিস্থিতিকে পট পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় সহায়ক শক্তি বিবেচনা করেই ১৫ আগষ্টের গভীর রাতে কতিপয় সেনা কর্মকর্তা শেখ মুজিবকে হত্যা করে দেশের শাসনভার তাদের নিয়ন্ত্রনে নিতে সক্ষম হয়েছিল। তবে এ ঝুকিপূর্ন ও মারাত্মক  দূ:সাহসী কাজটা তারা সফলভাবে সম্পন্ন এজন্য করতে পেরেছিল কারণ তাদের সাথে ও তাদের প্রতি বলতে গেলে আওয়ামী লীগের একটা বিরাট অংশ ও পুরো সশস্ত্র বাহিনীর সমর্থন ও সহযোগিতা ছিল। তা না হলে শুধু ১০/১২ জন সামরিক অফিসারের পক্ষে শেখ মুজিবুর রহমানের মত একজন জাতীয় নেতাকে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশের শাসনভার নিজেদের নিয়ন্ত্রনে নেওয়া কোনভাবেই সম্ভব হতোনা।

সবচেয়ে আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, পট পরিবর্তনের পর শেখ
মুজিবের মন্ত্রীসভার প্রভাবশালী মন্ত্রী প্রয়াত খন্দকার মোশতাক আহমেদ হয়েছিল
বিপ্লব/সামরিক অভ্যুত্থান এর নায়ক সামরিক অফিসারদের মনোনিত প্রেসিডেন্ট এবং
তার মন্ত্রীসভার সদস্যরা ছিল আর কেউ নয় শেখ মুজিবের মন্ত্রীসভা ও তার দল
আওয়ামী লীগেরই সদস্য ও নেতারা। সংসদে তখন দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যই ছিল আওয়ামী
লীগের লোকেরা, তারা তখন কেউ তাদের নেতার হত্যার প্রতিবাদে সংসদ থেকে পদত্যাগ
করেনি, এমনকি তারা বা তখনকার আওয়ামী গোষ্টির কোন নেতা, আওয়ামী সমর্থক কথিত
বুদ্ধিজীবি বা সুশীল সমাজের আজকের গলাবাজরা শেখ মুজিবের জন্য ঢাকার পরিবর্তে
(ঢাকায় না হয় সামরিক বাহিনীর ভয় ছিল) দেশের কোথাও একটা শোক মিছিল বা গায়েবানা
জানাজার আয়োজনও করেনি ( এমনকি শেখ মুজিবের জন্মস্থান গোপালগঞ্জেও নয় )। বরং
শেখ মুজিবের রক্তের দাগ না শুকাতেই তারা খন্দকার মোশতাকের সরকারের প্রতি
আনুগত্য প্রকাশ করে সংসদ অধিবেশনে যোগদান করেছিল, শুধু তাই নয় আওয়ামী লীগের
সংসদ সদস্যরাই ১৯৭৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে (১৩ সেপ্টেম্বর’৭৫ ) সংসদে বসে
একবাক্যে সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল শেখ মুজিবের হত্যার বিচার কোনদিন
করা যাবেনা (পরবর্তিতে জিয়াউর রহমানের ও এরশাদের শাসনামলে ইনডেমনিটি বিল আকারে
যেটাকে সংবিধান সিদ্ধ করা হয়েছিল)। কিন্তু খন্দকার মোশতাকের অধীনে আওয়ামী
লীগের ২৩০ জন এম,পিই তাদের জাতির পিতার বিচার করা যাবেনা বলে সংসদে তখন এ
প্রস্তাব অনুমোদন করেছিল ( সংসদের ঐ সময়কার কার্যবিবরনীর আরকাইভ খুজলেই তার
প্রমান পাওয়া যাবে )। জ্ঞানপাপী আওয়ামী গাষ্টির এসব মীরজাফর  যারা এখনও বেঁচে
আছে তারা নিশ্চয়ই ভুলে যায়নি ১৫ আগষ্ট শেখ মুজিব নিহত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের
অন্যতম সিনিয়ার নেতা মরহুম আব্দুল মালেক উকীল মন্তব্য করেছিল, “বাংলাদেশে
ফেরাউনর রাজত্বের অবসান হয়েছে”। আরেক জাদরেল আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক
রাষ্ট্রপতি নোয়াখালীর মুহাম্মদউল্লাহ বলেছিল, “এ পরিবর্তন অনিবার্য ছিল”।
আওয়ামী লীগের আরেক সিনিয়ার নেতা টাংগাইলের মরহুম আব্দুল মান্নান ঐ সময় মোশতাক
সরকারের  বিশেষ দূত হয়ে রাশিয়াসহ পূর্ব ইউরোপের দেশসমূহে সফরে বের হয়েছিল ঐসব
দেশের সরকারকে বুঝানোর জন্য শেখ মুজিব সরকারকে উৎখাত করা কেন প্রয়াজন ও
যুক্তিসংগত ছিল।  ১৫ আগষ্ট পরবর্তি সময়ে দেশের অনেক জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলো
১৫ আগষ্টের পরিবর্তনকে স্বাগত জানিয়ে এর অপরিহার্যতাকে অনিবার্য হিসেবে উল্লেখ
করে সম্পাদকীয় ও উপ-সম্পাদকীয় প্রকাশ করেছিল। সেই দিনের ঘটনাপঞ্জি সম্বলিত
দৈনিক পত্রিকার পাতাগোলো উল্টাালেই তার প্রমান পাওয়া যাবে।

যার মাধ্যমে এটাই প্রমানিত ও পরিস্কার হয়ে যায় যে ১৫ আগষ্টের ঘটনা শুধু কতিপয় বিপথগামী সেনা সদস্যের একটা খুনের ঘটনা ছিলনা। ঐ  ঘটনার সাথে শুধু কয়েকজন সামরিক অফিসারই জড়িত নয়, তারা ছিল ফ্রন্ট লাইনের সৈনিক, তাদেরকে পেছন থেকে কমান্ড দিয়েছিল এবং সমর্থন ও সাহায্য সহযোগিতা দিয়েছিল আওয়ামী লীগেরই অধিকাংশ নেতা, সমগ্র সশস্ত্র বাহিনী, দেশের অরাজক ও নাজুক পরিস্থিতি এবং আওয়ামী দু:শাসন ও স্বৈরশাসন থেকে পরিত্রান ও পরিবর্তন প্রত্যাশী দেশের গনতন্ত্রকামী সাধারন জনগন। তা না হলে এমন ঝুকিপূর্ন অভিযান কখনও সফল হতোনা এবং ঘটনার পর কোন প্রতিরোধ ছাড়াই রাষ্ট্র ক্ষমতা তাদের নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারতনা।

আজ যারা শেখ মুজিবের জন্য মায়াকান্না করছে, শেখ মুজিবের প্রশংসা করতে করতে মূখে ফেনা তুলে ফেলছে এবং শেখ মুজিব হত্যার বিচারের দাবীতে বা বিচারের রায় পুরোপুরি কার্যকর করার দাবীতে গলাবাজি ও সোচ্চার হয়ে মুজিব-প্রেমী বা মুজিব সৈনিক সাজার মহড়া দিচ্ছে তারা সেদিন কোথায় ছিল ? যদি একজনও সেদিন মুজিবের জন্য রাস্তায় নেমে জীবন দিত (শহীদ নুর হোসেনের মত) তাহলেও আজ বলা যেত বা স্মরন করা যেত শেখ মুজিবের সত্যিকার সৈনিক বা অনুসারী অন্তত একজনও ছিল। আসলে এরা সবাই ছিল শেখ মুজিবের ভাষায় চাটার দল। তাই মুজিব মারা যাওয়ার পর এদের মধ্যে নামমাত্র কয়েকজন জীবন বাঁচানোর জন্য পালিয়ে আত্মগোপন করেছিল আর অধিকাংশরাই মোশতাক সরকার তথা অভ্যূত্থ্যানকারী সেনা অফিসারদের অনুগত হয়ে বহাল তবিয়তে ছিল।

এমনকি দেশের বাইরে বাংলাদেশের কোন একটা দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত বা কর্মকর্তারাও এ ঘটনার প্রতিবাদে বিদ্রোহ বা পদত্যাগ
করেনি। বরং মেশতাক সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছিল। শেখ মৃুজিব নিহত হওয়ার ৩৯ বছর পর আজকের বাস্তবতায় শেখ মুজিবকে তার কথিত অনুসারীরা যেভাবে মূল্যায়ন ও তার জন্য মায়াকাহ্না করছে একইভাবে ১৯৭২-৭৫ সাল পর্যন্ত তখনকার শেখ মুজিবের শাসনামল ও বাস্তবতাকে বিবেচনা করা হলে ১৫ই আগষ্টের ঘটনাকে কখনও কেবল একটা হত্যাকান্ড বা খুনের ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত করা যায়না। যদি তাই হতো তবে ঐ সময় ঘরে ঘরে মুজিবের জন্য মাতম করা হতো, বরং তখন মানুষ স্বৈরশাসনের অবসান হওয়ায় ঘরে ঘরে রোজা রেখেছে, নফল নামাজ পড়েছে ( মানুষের বুকের উপর থেকে জগদ্দল
পাথর অপসারিত হয়েছে বলে )। এই ছিল তখনকার বাস্তবতা।

৩০ বছর পর শেখ মুজিব হত্যার বিচার চলাকালীন আইনজীবি, আইন মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী ঐ সময়কার
বিচারপতিদের ধিক্কার দিয়ে বলেছিলেন, ঐ সময় বিচারপতিরা খন্দকার মোশতাক বা
বিচারপতি সায়েমকে বা জিয়াউর রহমানকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ বাক্য পাঠ করায়ে
সংবিধান লংঘন করেছেন, তাদের পেশাগত দায়িত্বের  শপথ ভঙ্গ করেছেন, ইত্যাদি
ইত্যাদি। আসলে কি তাই অথবা এ মন্তব্য কি তাদের মূখে মানায় ? পাকিস্তানের
সামরিক জান্তারা ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে আরো বেশী ভয়ংকর ও হিংস্র ছিল, তখনও
বাংগালী প্রধান বিচারপতি বি,এ,সিদ্দিকী টিক্কা খানকে তদানিন্তন পূর্ব
পাকিস্তানের (আজকের বাংলাদেশ) গভর্নর হিসেবে শপথ করাতে অস্বীকৃতি জানিয়ে
বাংগালী জাতির ইতিহাসে এক উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন, সে তুলনায় ১৯৭৫
সালের অবস্থা এমন ছিলনা যে তখন কোন বিচারপতি উল্লেখিত ব্যক্তিদের শপথ করানোর
দায়িত্ব প্রত্যাখ্যান করতে বা অস্বীকৃতি জানাতে পারতনা, তখনও বিচার বিভাগে
সাহসী ব্যক্তিরা ছিলেন, কিন্তু পার্থক্য হলো ১৯৭১ সালে বাংগালী বিচারপতিরা
সবাই ছিল পাকিস্তানী সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে, আর ১৯৭৫ সালে বিচার বিভাগের
অধিকাংশ ব্যক্তিরাই ছিলেন ১৫ আগষ্টের পট পরিবর্তনের  পক্ষে বা সমর্থক। তাই
তারা তখন খন্দকার মোশতাক, বিচারপতি সায়েম বা জিয়াউর রহমানকে পেসিডেন্ট হিসাবে
শপথ বাক্য পাঠ করাতে বিব্রত বোধ করেননি বা অস্বীকৃতি জানাননি। এটা হলো
বাস্তবতা এবং এর মধ্য দিয়েই প্রমানিত হয় ১৫ আগষ্ট এর ঘটনা শুধু কতিপয় সেনা
অফিসারের খুনের বা হত্যার ঘটনা ছিলনা।  আওয়ামী লীগের এই চাটুকার গোষ্টির আরো
একটা উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় থাকে তখন এরা রাজনৈতক
ও আর্থিক ফায়দা হাসিলের হীন উদ্দেশ্যে নিজেদেরকে শেখ মুজিব তথা আওয়ামী লীগের
কথিত আদর্শের সৈনিক হিসেবে জাহির করার অভিনয় করা শুরু করে, আওয়ামী লীগের
নেতা/নেত্রীরা এদের ছলা-কলা ও উদ্দেশ্য বুঝতে পারেনা।

তাই তাদের কর্মকান্ড ও অতিভক্তির কারণে এক পর্যায়ে এরা দেশ ও জাতিকে বিভ্রান্তি ও হতাশার দিকে ঠেলে দেয় এবং কোন কোন সময় দল ও দলের নেতা/নেত্রীদেরকেও বিপদ ও ভয়ংকর পরিনতিতে নিপতিত করে। যেমন শেখ মুজিবকে এই তোষামোদী ও চাটুকার গোষ্টি কুবুদ্ধি দিতে দিতে এক পর্যায়ে জনগন থেকে তাকে বিচ্ছিন্ন করে স্বৈরাচারী শাসকে পরিনত করেছিল। ১৫ আগষ্টের করুণ পরিনতির পর এই চাটার দল ২১ বছর পর্যন্ত ভোল পাল্টিয়ে এবং সুযোগ বুঝে আবার মাঠে নামার অপেক্ষায় ছিল, ১৯৯৬ সালে যখন মুজিব কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসল তখন আবার এই দালাল চক্র সক্রিয় হয়ে উঠল, হাসিনার ৫ বছরের শাসনের পর ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বি,এন,পি’র শাসনামলে এরা কিছুটা নীরব থাকলেও ২০০৮ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যখন বিরাট সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফিরে এল এখন রাজনৈতিক ও আর্থিক
সুবিধা নেওয়া ও পাওয়ার জন্য মুজিব কন্যাকে সন্তুষ্ট করার লক্ষ্যে মুজিব হত্যা তথা ১৫ আগষ্টের ঘটনার বিচার ও এর সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন ঘটনা ও তৎকালীন সামরিক ও বেসামরিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যেভাবে বিষেদগার ছড়ানো ও কটুক্তি করা
শুরু করেছিল এবং শেখ হাসিনার রাজত্বকালে এখনও তাই করছে।

এদের স্ববিরোধী চরিত্র বাংগালী জাতির সামনে আবারও তীব্রভাবে ফুটে উঠছে। যেসব পাকা চুলের অধিকারী সাবেক আমলা, আইণজীবি, সাবেক সামরিক অফিসার, রাজনীতিবিদ, কথিত সুশিল সমাজের বর্নচোরা প্রতিনিধি বা মূখপাত্ররা এখনও যারা জীবিত আছে এবং শেখ হাসিনাকে খুশি করার জন্য এখন মুজিব প্রেমের গদগদ সংলাপ আওরাচ্ছে তারা  ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্টের
পর কোথায় ছিল এবং সেদিন তারা কি ভুমিকা পালন করেছিল ? আপীল বিভাগে মুজিব হত্যার দায়ে  মৃত্যুদন্ডাদেশ প্রাপ্তদের শুনানী চলাকালে যখন তৎকালীন সেনা প্রধান ( জে: শফিউল্লাহ ) ও অন্যান্য সামরিক অফিসারদের ভুমিকা নিয়ে স্বয়ং বিচারপতিরা তাদেরকে তিরস্কার করে মন্তব্য করেন যে, তারা সেদিন ছিল ভীরু, কাপুরুষ ও মিথ্যাবাদি অর্থাৎ সেদিন শেখ মুজিবকে বাঁচানো বা রক্ষা করার জন্য তারা কেউ এগিয়ে আসেনি বলে বা সাহসী ভুমিকা দেখায়নি বলে এবং পরবর্তিতে বিভিন্ন সময়ে তারা যেসব তথ্য দিয়েছে তা মিথ্যা ছিল বলে বিচারকরা তাদের সম্বন্ধে এমন মন্তব্য করেছিলেন। বিচারপতিরা খন্দকার মোশতাককেও বিশ্বাসঘাতক বলে মন্তব্য করেছিলেন।

আজকের এসব “সাহসী” বিচারপতিদের মত কাউকে ’৭৫ এর ১৫ আগষ্টের পর সাহসী ভূমিকা পালন করতে বা সাহসী মন্তব্য করতে দেখা যায়নি কেন ? এখন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আছে বলে সাহস দেখাচ্ছেন ? এসব সুবিধাবাদীদের কারণেই এ দেশে বার বার স্বৈরাচারের জন্ম নেয় এবং অসাংবিধানিক শক্তি রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করার সাহস পায়। এবার ১৫ আগষ্টের সামরিক দিক পর্যবেক্ষন, পর্যালোচনা ও বিশ্লেষণ করতে গেলে যে তথ্য ও পটভুমি বের হয়ে আসে তাতে ১৫ আগষ্টের ঘটনাকে কেবল কতিপয় বিপথগামী সেনা সদস্যের খুনের ঘটনা হিসেবে কখনও বিবেচনা করার যুক্তি ও সুযোগ নাই। যদি তাই হতো তবে এটাকে বলা যেত শুধু একটা সেনা বিদ্রোহ। কিন্তু ১৫ আগষ্টের ঘটনা কোন সেনা বিদ্রোহ ছিলনা, ১৫ আগষ্টের সামরিক অভিযানের পর ততকালীন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক সরকারের পতন ঘটেছিল এবং যারা সেনা অভিযান পরিচালনা করেছিল তারা তাদের হাতে রাষ্ট্রের পূর্ন শাসনভার তুলে নিতে ও দেশের সকল সেনানিবাসকে তাদের সমর্থনে বা নিয়ন্ত্রনে নিতে সক্ষম হয়েছিল, তারা ততকালীন আওয়ামী লীগ নেতাদেরকে সাথে নিয়েই দেশে একটা বেসামরিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতেও সক্ষম হয়েছিল (যদিও এর মেয়াদ ৩ মাস ছিল)। ৩রা নভেম্বর ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোর্শারফের নেতৃত্বে যে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটেছিল এটাকে বরং কতিপয় সেনা সদস্যের একটা সেনা বিদ্রোহ বলা যায়, যার মাধ্যমে রাষ্ট্র ক্ষমতা নিয়ন্ত্রনে নেওয়া সম্ভব হয়নি এবং কোন সামরিক বা বেসামরিক সরকার গঠন করাও তার পক্ষে সম্ভব হয়নি এবং যার মেয়াদকাল ছিল মাত্র ৩ দিন।

এরপর ১৫ আগষ্টের অনুসারী ও সমর্থকদের দ্বারা ৭ নভেম্বর আরেক সামরিক
অভিযানের (সিপাই-জনতার বিপ্লব) মাধ্যমে খালেদ মোর্শারফকে মর্মান্তিকভাবে বিদায়
নিতে হয়েছিল এবং রাষ্ট্রক্ষমতা আবারও ১৫ আগষ্টের সেনা অভিযান পরিচালনাকারীদের
হাতে ও নিয়ন্ত্রনে চলে গিয়েছিল। ১৫ আগষ্টের ঘটনা যদি সামরিক বাহিনীর একটা
ক্ষুদ্র অংশের বিদ্রোহ বা এ্যাডভেঞ্চার জাতীয় কিছু হতো তবে খালেদ মোর্শারফ এর
৩ নভেম্বরের ঘটনা বা কতিপয় বিদ্রোহী সেনা সদস্য কর্তৃক চট্টগ্রামে সাবেক
প্রেসিডেন্ট জেনারেল জিয়াউর রহমানের হত্যাকান্ডের ঘটনার মত বিফলে পরিনত হতো
অর্থাৎ বিদ্রোহী সেনা সদস্যরা পরবর্তিতে বা সাথে সাথে সরকার অনুগত বা
সংখ্যাগরিষ্ঠ সেনা সদস্যদের পাল্টা অভিযানে পরাভুত হতো বা ধরা পড়ত বা নিহত
হতো। কিন্তু ১৫ আগষ্টের নেতৃত্ব দানকারী সেনা সদস্যদের বেলায় এমনটা ঘটেনি,
কারণ তাদের সাথে ও পেছনে ছিল বলতে গেলে গোটা সশস্ত্র বাহিনীর সমর্থন ও আওয়ামী
লীগ নেতাদের সহযোগিতা। শুধু ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের কথা বাদ দিলেও তখন
বাংলাদেশের অন্য কোন ক্যান্টনমেন্টেও ১৫ আগষ্টের ঘটনার বিরুদ্ধে তাৎক্ষনিকভাবে
একটা ছিটেফোটা প্রতিরোধের ঘটনাও ঘটেনি।  শেখ মুজিবের মত একটা বড় নেতা ও শাসককে
উৎখাত বা হত্যার মত ঘটনার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করার মত সাহস ও শক্তি
শুধু কতিপয় বিপথগামী সেনা সদস্যের পক্ষে কখনও সম্ভব হতোনা, সমগ্র সশস্ত্র
বাহিনী যদি তাদের পক্ষে না থাকত। কর্নেল ফারুকের কমান্ডে ঢাকা সেনা নিবাস থেকে
রাতের অন্ধকারে যখন দরজা-জানালা ফাটানো বিকট শব্দে ১৫/১৬টা ট্যাংক ও সাজোয়া
বহর বের হয়ে আসছিল তখন ক্যান্টনমেন্টের সেনা অফিসার ও সদস্যরা কেউই নিশ্চয়ই
নাক ডেকে ঘুমাচ্ছিলনা, সবাই টের পেয়েছে  এবং কি ঘটতে যাচ্ছে তাও নিশ্চয়ই তখন
গোপন ছিলনা, কিন্তু তাদেরকে বাধা দিতে তখন কেউই এগিয়ে আসেনি (কারণ এতে সবারই
সমর্থন ছিল)। তৎকালীন সেনা প্রধান ( বর্তমানে আওয়ামী লীগ নেতা ) জেনারেল
শফিউল্লাকে নাকি শেখ মুজিব নিহত হওয়ার ৪০ মিনিট আগে অবহিত করেছিলেন, কিন্তু সে
তখন কোন প্রতিরোধের বা বিদ্রোহী সেনাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নিতে
চায়নি বা সক্ষম হয়নি, কারণ সে তখন বুঝেছিল বা উপলব্ধি করতে পেরেছিল তার
কমান্ডে কোন সৈনিক নাই, ১৫ আগষ্টের ঘটনার হোতাদের পক্ষেই বলতে গেল পুরো
সশস্ত্র বাহিনীর সমর্থন চলে গিয়েছিল। অথচ আজ ৩৯ বছর পর জে: শফিউল্লাহ নিজেকে
দায়মুক্ত করার জন্য বলছে ১৫ আগষ্টের ঘটনার কথা জে: জিয়াউর রহমান আগেই জানত।
যদি উপ-সেনা প্রধান হিসেবে জিয়াউর রহমান জানত তবে সেনা প্রধান হিসেবে
শফিউল্লাহ জানতনা কেন ? তখন স্বাধীনতা পরবর্তি অবস্থায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী
ছিল জোড়াতালি দেওয়া একটা ছোট আকারের বাহিনী, ঐ ছোট একটা বাহিনীর অভ্যন্তরে এত
বড় একটা বিদ্রোহের পরিকল্পনা হচ্ছিল এটা সেনা প্রধানের অজানা ছিল কখনও
বিশ্বাসযোগ্য নয়, বরং ধরে নেওয়া যায় সে জানত এবং তার সমর্থনও ছিল, তা না হলে
নিহত হওয়ার ৪০ মিনিট আগে মুজিব তাকে বলার পরেও সে এগিয়ে যায়নি কেন ?  এমনকি
কর্নেল জামিল যে প্রেসিডেন্ট (শেখ মুজিব) এর গার্ড রেজিমেন্ট এর প্রধান ছিল
এবং যার অধীনে বিশেষভাবে প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত ৩ হাজার চৌকুশ সৈনিক ছিল সেদিন রাতে
সে শেখ মুজিব ( তৎকালীন পেসিডেন্ট )কে বাঁচানোর জন্য তার অধিনস্থ একজন
সৈনিককেও সাথে পায়নি, শেষ পর্যন্ত সে একাই যখন শেখ মুজিবের বাড়ির দিকে এগিয়ে
যাচ্ছিল তখন পথিমধ্যে নিহত হয়েছিল। তদুপরি, তৎকালীন বিমান বাহিনী প্রধান (শেখ
হাসিনার ভূতপূর্ব মন্ত্রীসভার সদস্য) ও নৌবাহিনী প্রধানও ১৫ আগষ্ট পরবর্তি
মোশতাক সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে ১৫ আগষ্টের পরিবর্তনের পক্ষে বিবৃতি
দিয়েছিল। তাছাড়া শেখ মুজিব সরকার সেনাবাহিনীর সমান্তরাল বাহিনী হিসেবে তার
নিজস্ব ও বিশ্বস্ত রক্ষীবাহিনীও গড়ে তুলেছিলেন, রক্ষী বাহিনীর প্রায় এক লাখ
সদস্যও তখন অত্যাধুনিক অস্ত্র-শস্ত্রে ও যানবাহনে সজ্জিত ছিল। কিন্তু তারাও
ঐদিন  (১৫ আগষ্ট) রাতে শেখ মুজিবকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসতে পারেনি, কারণ সেনা
বাহিনীর সদস্যরা পুরো রক্ষীবাহিনীর সদর দফতর ও ছাউনীসমূহ ট্যাংক ও সাজোয়া
বাহিনী দ্বারা ঘিরে রেখেছিল, পরের দিন সকাল ১০ টায় বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার
থেকে লিফ্লেট ফেলে রক্ষী বাহিনীকে অস্ত্র সমর্পন ও আত্মসমর্পনের জন্য নির্দেশ
দেওয়া হলে তারা সবাই আত্মসমর্পন করে। এসব ঘটনা বিশ্লেষণ করলেই পরিস্কার হয়ে
যায় যে, ১৫ আগষ্টের ঘটনা শুধুমাত্র কতিপয় বিপথগামী সেনা সদস্যের খুনের ঘটনা
ছিলনা, এটা ছিল রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের লক্ষ্যে পুরো সশস্ত্র বাহিনীর একটা সফল
সামরিক অভিযান বা বিপ্লব।

কিন্তু ২১ বছর পর ১৫ আগষ্টের ঘটনায় নিহত শেখ মুজিবের জীবিত কন্যার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ যখন ১৯৯৬ সালে , ২০০৯ এবং ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর ভোটারহীন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে এখন ভোল পাল্টাতে অভ্যস্থ এক শ্রেনীর রাজনীতিবিদ, পেশাজীবি, সাংবাদিক ও কথিত সুশীল সমাজের বর্নচোরা অভিনেতারাই নিজেদের দায়দায়িত্ব, ব্যর্থতা ও মিরজাফরী ভুমিকাকে আড়াল করার উদ্দেশ্যে ১৫ আগষ্টের ঘটনাকে শুধুমাত্র কতিপয়  বিপথগামী সেনা সদস্যের খুনের ঘটনা হিসেবেই আখ্যায়িত করছে এবং খুনীদের বিচারের তথা বিচারের রায় পুরোপুরি বাস্তবায়নের জন্য সোচ্চার হয়ে উঠে, এরা ঘটনার এক দিককেই (মুজিব হত্যা) শুধু আজকের জনগনের কাছে ফুলিয়ে ফাপিয়ে মূখ্য করে তোলার চেষ্টা করছে, কিন্তু ঘটনার পটভুমি, নেপথ্য ইতিহাস ও কারণ, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও তখনকার বাস্তবতাকে পাশ কাটিয়ে সুকৌশলে ১৫ আগষ্টের ঘটনার আরেক দিককে আজকের জনগনের কাছে অন্ধকারে ঢেকে রাখতে চাচ্ছে। আওয়ামী সমর্থক টিভি চ্যানেল ও কিছু কিছু সংবাদপত্র শেথ হাসিনার সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে গিয়ে ভালভাবেই বর্তমানে এ দায়িত্ব বা ভূমিকা পালন করছে। আর এ কারণেই ১৫ আগষ্টের ঘটনার সাথে জড়িত সেনা অফিসারদের  বিচার বা শাস্তি দেওয়ার মধ্য দিয়েই ১৫ আগষ্টের ঘটনার জন্য জাতির কথিত দায়মুক্তি হয়ে যাবেনা বা এর সমাপ্তি হবেনা, এর রেশ আগামীতেও বিদ্যমান থেকেই যাবে। যার সত্যতা বা ইংগিত স্বয়ং শেখ হাসিনার মূখ থেকেই বার বার উচ্চারিত হচ্ছে, তিনি বলছেন বুলেট ও বোমা/গ্রেনেড নাকি তাকে প্রতিনিয়ত তাড়া করে বেড়াচ্ছে, যে কারণে আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনার, তার বোন ও তাদের ছেলে, মেয়ে, নাতি/নাতিœ অর্থাৎ শেখ মুজিবের পরিবার তথা বংশ পরম্পরায় উত্তরসূরিদের আজীবন নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশের ইতিহাসে
নজীরবিহীন এক নিরাপত্তা আইণ পাশ করেছে।

১৫ আগষ্টের ঘটনা যদি হাতে গোনা কতিপয়
বিপথগামী সেনা সদস্যের কেবলমাত্র একটা খুনের ঘটনাই হতো তবে অন্য যে কোন
সন্ত্রাসী বা খুনের ঘটনার মত খুনীদের বিচার বা মৃত্যুদন্ডের মত শাস্তি দেওয়ার
মধ্য দিয়েই তার সমাপ্তি ঘটে যেত, যেমনটা হয়েছিল জিয়াউর রহমানের হত্যার ঘটনায়,
বিপথগামী কয়েকজন সেনা সদস্যের খুনের ঘটনা ছিল বলেই তখন ঘটনার সাথে জড়িতদের
সামরিক আইণে মৃত্যুদন্ড দেওয়ার পর জেনারেল এরশাদকে বা পরবর্তিতে বেগম খালেদা
জিয়াকে আজ পর্যন্ত একবারও বলতে বা আতংকিত হতে হয়নি যে তাদেরকে প্রতিনিয়ত বুলেট
বা বোমা তাড়া করছে এবং তারা দুই / তিনবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ পেয়েও
তাদের নিজের ও পরিবারের সদস্যদের আজীবন নিরাপত্তার জন্য কোন আইণ পাশ করতে হয়নি
(জে,এম,বি’র শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার, বিচার ও ফাঁঁিশর রায় খালেদা জিয়া সরকারের
আমলে হওয়া সত্তেও )। এমনকি শেখ হাসিনার মত জেনারেল এরশাদ বা খালেদা জিয়াকে
উম্মুক্ত জনসভায় বুলেট-প্র“ফ ডায়াস ব্যবহার করতেও হয়না , কারণ জিয়াউর রহমানের
হত্যা ঘটনাটা ছিল কেবলই বিপথগামী কতিপয় সেনা সদস্যের খুনের ঘটনা – যার বিচার
তাৎক্ষনিকভাবেই সামরিক আদালতে সম্পন্ন করা হয়েছিল। কিন্তু শেখ মুজিব সেনা
সদস্যদের দ্বারা নিহত হলেও তাকে হত্যার দায়ে সামরিক আদালতে তাৎক্ষনিকভাবে
জড়িতদের  কারো কোন বিচার হয়নি বা সম্ভব হয়নি, এমনকি ৩ নভেম্বর  ব্রিগেডিয়ার
খালেদ মোর্শারফ এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টকে তার নিয়ন্ত্রনে
নিয়ে জিয়াউর রহমানকে আটক করে নিজেকে সেনা প্রধান ঘোষণা করার পরেও ১৫ আগষ্টের
ঘটনার সাথে জড়িত সেনা অফিসারদের কারো কোন বিচারতো দূরের কথা তাদের কাউকে বন্দি
বা আটক করার সাহসও পায়নি (যে কারণে ৪ নভেম্বর জেলখানায় শেখ মুজিবের ঘনিষ্ঠ আরো
৪ শীর্ষ আওয়ামী  লীগ নেতাকে হত্যা করার সুযোগ হয়েছিল)। খালেদ মোশাররফের
অভ্যূত্থানের পর ঢাকার রাজপথে কথিত মুজিব প্রেমীদের একটা মিছিল হয়েছিল, মনে
করা হয়েছিল খালেদ মোশাররফ আওয়ামী লীগ বা মুজিবের সমর্থক। বরং খালেদ মোর্শারফই
মুজিব হত্যাকারী সেনা অফিসারদেরকে নির্বিঘেœ একটা বিশেষ বিমানে ঐ সময় ব্যাংকক
পাঠিয়ে দেশ ত্যাগ করার সুযোগ করে দিয়েছিল।   ১৫ আগষ্টের ঘটনাটা ছিল ৩৯ বছর
আগের রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি ও বাস্তবতায় তখনকার গোটা বাংগালী জাতির
কাছে প্রত্যাশিত একটা পরিবর্তন, তাই তখন মুজিবের ঘনিষ্ঠ সহযোগীরাও তার হত্যার
কোন প্রতিবাদ না করে বরং হত্যাকারীদের সহযোগিতা করেছিল। তখন মুজিবের
হত্যাকারীদের খুনি না ভেবে জাতীয় বীর হিসেবেই মনে করা হয়েছিল, ঢাকার রাজপথে
জনগনের স্বতস্ফুর্ত মিছিল এমনকি জনতা ১৫ আগষ্টের নায়কদের গলায় ও ট্যাংকের নলে
ফুলের মালাও পড়িয়ে দিয়েছিল। তখনকার বাস্তবতায় যাদেরকে একটা সফল সামরিক
বিপ্লবের বীর হিসেবে মনে করা হয়েছে তাদেরকে পুনর্বাসিত বা পুরস্কৃত করাটাই ছিল
স্বাভাবিক, জিয়াউর রহমানের জায়গায় অন্য কেউ তখন রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকলে তাই
করত। তাছাড়া ওরা দেশে ফিরে আসলে আবারও সেনাবাহিনীতে নতুন করে বিদ্রোহ বা
বিশৃংখলা সৃষ্টি হতে পারে বলে জিয়াউর রহমান ( পরবর্তিতে এরশাদও ) তাদেরকে
বিদেশে বাংলাদেশ মিশনে বিভিন্ন দায়িত্বে নিয়োগ করেছিল। উল্লেখ্য, কর্নেল
ফারুককে তখন একবার দেশে আসার সুযোগ দেওয়ায় সে যশোর ক্যান্টনমেন্টে এ ধরনের
একটা বিদ্রোহের ঘটনা ঘটায়, জিয়াউর রহমান তাকে তখন ৫ বছর জেল দেয় এবং ৫ বছর পর
জেল গেইট থেকে সোজা বিমানবন্দরে নিয়ে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ১/১১ এর নায়ক জেনারেল মইন, জে: মাসুদ গংরা কি ১৫ আগষ্টের মত দেশে একটা প্রত্যাশিত পরিবর্তন এনেছিল ? দেশবাসি কি তখন তাদের সমর্থনে রাজপথে মিছিল বের করেছিল ( কিছু চেনা সুবিধাবাদি/দালাল ছাড়া ) ? তাহলে শেখ হাসিনা সরকার তাদেরকে পুরস্কৃত করল কেন ? ১৫ আগষ্টের নায়করা দেশ ও জনগনের ( কোন বিশেষ দল বা গোষ্টির নয় ) তখনকার প্রত্যাশা পূরনের দায়িত্ব পালন করেছিল, কিন্তু ১/১১ এর নায়করা শেখ হাসিনা তথা আওয়ামী লীগের স্বার্থ হাসিলের দায়িত্ব পালন করেছিল।  ১৫ আগষ্ট এর ঘটনার পর দীর্ঘ ২১ বছরেও হত্যাকারীদের কারো বিরুদ্ধে সাধারন তথা প্রচলিত আইণেও কোন মামলা হয়নি (হয়ত যুক্তি দেখানো হবে ইনডেমনিটি থাকায় এবং অনুকুল পরিবেশ না থাকায় তা সম্ভব হয়নি ), শেখ হাসিনা ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়ার পর এ ব্যাপারে প্রথম মামলা হয় এবং ১৫ আগষ্টের ঘটনার প্রায় ৪০ বছর পর শেখ মুজিবের হত্যাকারীদের বিচার পর্ব শেষ করে বায় কার্যকর করার প্রক্রিয়া চলছে। এ ঘটনার তথা মুজিব হত্যার বিচার প্রক্রিয়ার জন্য দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো ঘটনাটা নিছক কতিপয় বিপথগামী সেনা সদস্য কর্তৃক একটা হত্যাকান্ড ছিলনা, এ ঘটনার সাথে সমগ্র সশস্ত্র বাহিনী ও আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতারাই জড়িত ছিল এবং তখনকার একটা বিরাট রাজনৈতিক ও  সামাজিক প্রেক্ষাপট এবং আন্তর্জাতিক স্বার্থান্বেষী মহলের মদদ ও পৃষ্ঠপোষকতায় ক্ষমতার অনিবার্য পতন ঘটেছিল ( যার প্রমান এখন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মাধ্যম ও গোয়েন্দা সংস্থার ধারাবাহিক রিপোর্টে প্রকাশিত হচ্ছে )।

মরহুম শেখ মুজিব ১৫ আগষ্টের আগে চাটুকার মহলের কুপরামর্শে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রধান চেতনা
গনতন্ত্র, মুক্তচিন্তা, মত প্রকাশের তথা  বাক স্বাধীনতাকে স্তব্ধ করে দিয়ে
দেশে এক দলীয় স্বৈরশাসন (এক নেতা এক দেশ —— বাংলাদেশ) কায়েম করার লক্ষ্যে
বাকশাল গঠন করেছিলেন, মাত্র ৪টা সংবাদপত্রকে সরকারী মালিকানায়/নিয়ন্ত্রনে রেখে
দেশের সকল সংবাদপত্র বন্ধ করে দিয়েছিলেন, এতে শত শত সাংবাদিক বেকার হয়েছিল এবং
পরবর্তি জীবনে তাদের কেউ কেউ রিক্সা চালিয়েও জীবিকা অর্জনে বাধ্য হয়েছিল।
মর্মান্তিক ও দু:খজনক হলেও ১৫ আগষ্টের ঘটনার পরই বাংলাদেশের মানুষ আবার
গনতন্ত্র ও মত প্রকাশের তথা বাক স্বাধীনতা ফিরে পায়, দেশে বহুদলীয় গনতান্ত্রিক
রাজনীতির চর্চা ফিরে এসেছিল, সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের অধিকার ফিরে
পায় , দেশে এখন ব্যক্তি মালিকানায় শত শত সংবাদপত্র এবং বেসরকারী টিভি চ্যানেল
চালু হয়েছে, সাংবাদিকতা শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে যেখানে এখন হাজার হাজার
সাংবাদিক ও কলা কুশলীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সাংবাদিক, আলোচক,
কলামিষ্ট, সম্পাদক সাহেবরা এখন বিভিন্ন সেমিনার, গোল টেবিল আলোচনা, টেলিভিশনের
টক-শো’তে এবং পত্র-পত্রিকায় যেভাবে খোলামেলা ও স্বাধীনভাবে বক্তব্য রাখছেন,
মন্তব্য করছেন, লেখা-লেখি করছেন, শেখ মুজিবের পক্ষে ও ১৫ আগষ্টের ঘটনার
বিরুদ্ধে জোরালো বক্তব্য রাখছেন ১৫ আগষ্টের ঘটনা না ঘটলে এ সুযোগ সৃষ্টি হতো
কিনা তা নিশ্চিতভাবে কারো পক্ষেই (এমনকি আজ যারা মুজিব প্রেমের সুপার স্টার এর
ভুমিকায় অভিনয় করছেন) বলা সম্ভব নয়। রক্ষীবাহিনীকে শক্তিশালী ও সুসজ্জিত করতে
গিয়ে সশস্ত্র বাহিনীকে দূর্বল ও গুরুত্বহীন করে তোলা হয়েছিল, ১৫ আগষ্টের ঘটনার
পর বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী আজ একটা সম্মানজনক ও সুশৃংখল বাহিনী হিসেবে
সংগঠিত তথা গড়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে, যার সুনাম এখন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।
স্বাধীনতার অব্যবহিত পর আওয়ামী পন্থি তথাকথিত সমাজতান্ত্রিক বুদ্ধিজীবিদের
কুপরামর্শে দেশের সকল কল-কারখানাকে জাতীয়করন করে বাংলাদেশের শিল্প বিকাশের
সম্ভাবনাকে অংকুরেই ধ্বংশ করে দেওয়া হয়েছিল। ইতিহাস স্বাক্ষী দেয় যুগে যুগে
বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশে যখনই সামরিক তথা সশস্ত্র বিপ্লব বা বিদ্রোহের ঘটনার
মধ্য দিয়ে শাসন ক্ষমতার পরিবর্তন ঘটেছে সেখানে হত্যা বা খুনের ঘটনাই বেশী
ঘটেছে,  ১৫ আগষ্টের সেনা অভ্যুত্থানের ঘটনাতেও অসংখ্য খুনের ঘটনা ঘটেছে, এ
ঘটনায় শেখ মুজিব, তার পরিবারের সদস্য ও তার ঘনিষ্ঠদের যেভাবে নির্মমভাবে হত্যা
করা হয়েছে তা অবশ্যই মর্মান্তিক ও বেদনাদায়ক। এজন্য একান্ত আপনজনদের হত্যার
বিচার চাওয়া বা বিচার করা মুজিব কন্যা স্বজনহারা শেখ হাসিনার স্বাভাবিক দাবী ও
অধিকার, কিন্তু কথিত মুজিব প্রেমী ও রাজনৈতিক সুবিধাবাদী স্বার্থান্বেষীরা ১৫
আগষ্ট ও তৎপরবর্তি সময়ে তাদের ভুমিকা ও অবস্থানের কথা ভুলে গিয়ে আজ যেভাবে
মুজিব প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে, মজিব হত্যার বিচার তথা বিচারের রায় কার্যকর
করার ব্যাপারে বড় গলায় গলাবাজি করছে তাতে কি সত্যিই জাতির কথিত দায়মুক্তি হয়ে
যাবে ? ১৫ আগষ্টের এক্স-রে রিপোর্ট পর্যালোচনা করলে ঘটনার উভয় দিকই জনগন তথা
জাতির সামনে পরিস্কার হয়ে আসে, প্রকৃত সত্যকে যেমন শুধু একপেশে মূল্যায়ন বা
ছদ্মাবরন দ্বারা চিরদিনের জন্য ঢেকে রাখা যায়না, তেমনি ১৫ আগষ্টের ঘটনাকে শুধু
খুনের ঘটনা হিসেবে লেবেল লাগিয়ে হত্যাকারী কয়েকজন সেনা অফিসারের বিচারের মধ্য
দিয়ে বা এজন্য বিরোধী দলের শীর্ষ নেতাদের উপর দোষ চাপালেই এর নেপথ্য ইতিহাস,
তৎকালীন রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটকে অস্বীকার করা বা মুছে ফেলা যাবেনা।
সর্বোপরি আওয়ামী লীগের যে বিরাট একটা অংশ সে সময় শেখ মুজিবের হত্যাকারী সেনা অফিসারদের সাথে হাত মিলিয়েছিল, তাদেরকে পুরো মদদ দিয়েছিল এবং হত্যার পর আওয়ামী পন্থি কথিত সুশীল সমাজের বর্নচোরা বুদ্ধিজীবি, সাংবাদিক ও অন্যান্য পেশার লোকজন যারা সরাসরি ও পরোক্ষভাবে ঐ ঘটনাকে সমর্থন দিয়েছিল এবং তৎকালীন সেনা অধিনায়কসহ সশস্ত্র বাহিনীর শীর্ষ কমকর্তা যারা শেখ মুজিবকে রক্ষা করতে তথা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে বা অবহেলা করেছে তাদের মধ্যে যারা জীবিত আছে তাদেরও অবশ্যই বিচার করতে হবে , যারা জীবিত নাই তাদেরও মরনোত্তর বিচার করতে হবে, তাহলেই ১৫ আগষ্টের ঘটনার ন্যায়সংগত ও পূর্নাঙ্গ বিচার হবে। একইভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করার পর মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনাকে কবর দিয়ে যদি আবারও কেউ এ দেশে ১৯৭২-৭৫ সময়ের মত স্বৈরশাসন কায়েম করতে চায় তবে এ ধরনের সময় ও সুযোগকে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজে লাগিয়ে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি আবারও ঘটবেনা এমন নিশ্চয়তা কি কেউ দিতে পারে ?

 

লেখক, জাহিদ হাসান, রিয়াদ, সউদী আরব।

 

 

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here