photo-1444153821ষ্টাফ রিপোর্টার :: বুড়োরা বাংলাদেশে যে ধরনের স্বাস্থ্যসেবা ও মানবিক সহায়তা পেয়ে থাকেন, তাতে তাঁরা সুখে নেই। বরং খুব কষ্টে মৃত্যুবরণ করতে বাধ্য হন। বর্তমানে বিশ্বের বেশির ভাগ বুড়ো মানুষ হৃদরোগ, ডায়বেটিস, স্মৃতিভ্রষ্টসহ নানা অজানা রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করছেন।

অথচ বেশির ভাগ দেশেই প্রবীণদের জন্য এসব রোগের সুচিকিৎসার বন্দোবস্ত নেই। ফলে বেশির ভাগ প্রবীণই মরছেন রোগে ভুগে, কষ্ট পেয়ে। আর বৃদ্ধদের জন্য ‘শান্তিতে মরার সুবিধা’ নিশ্চিত করতে না পারা দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশের স্থান একদম তলানিতে।

যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম দ্য ইকোনোমিস্টের একটি জরিপে এমনটিই দেখানো হয়েছে। ‘বুড়ো বয়সে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও অন্যান্য মানবিক সহায়তা পাওয়ার’ ভিত্তিতে পরিচালিত ‘মৃত্যুর ধরন সূচক ২০১৫’ এ বাংলাদেশকে মৃত্যুবরণের জন্য নিকৃষ্ট দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

শেষ বয়সে সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণে চিকিৎসা, মানবিক সেবা ও জীবনের সুরক্ষার ওপর ভিত্তি করে বিশ্বের ৮০টি দেশকে নিয়ে এ জরিপ চালিয়েছে দ্য ইকোনমিস্ট।

এই তালিকার একেবারে তলানির দিকে অবস্থান বাংলাদেশের। ৮০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৭৯তম। বাংলাদেশের পরে আছে কেবলমাত্র ইরাক।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের আগে আছে মিয়ানমার (৭৬), ভারত (৬৭) ও শ্রীলংকা (৬৫)। ‘মরেও সুখ আছে’ এমন দেশের তালিকায় প্রথমেই আছে যুক্তরাজ্যের নাম। এরপরের স্থানগুলো পর্যায়ক্রমে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, বেলজিয়াম, তাইওয়ান, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের দখলে।

সূচকে যুক্তরাজ্যের ভালো অবস্থানের কারণ হিসেবে ইকোনমিস্টের গবেষকরা উল্লেখ করেছেন, জাতীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও চিকিৎসা সেবার কারণে বৃদ্ধদের জন্য নিরাপদ আশ্রয় দেশটি। এ ছাড়া দেশটিতে বৃদ্ধদের জন্য বিশেষ সরকারি সুবিধা রয়েছে।

সূচকের ওপর ভিত্তি করে ইকোনমিস্ট জানিয়েছে, ‘সারা বিশ্বে সরকার যেভাবে তাদের নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে কাজ করছে, একইরকমভাবে নাগরিকদের ভালোভাবে মরতে সাহায্য করাও উচিত তাদের।’

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বয়স্ক লোকেরা দেশের জনসংখ্যায় একটি আনুপাতিক অংশ হিসেবে বোঝা বলে চিহ্নিত হয়। এদের অনেকেই হৃদরোগ, ডায়বেটিস, স্মৃতিভ্রষ্ট এবং নানা অজানা রোগে আক্রান্ত হন।

আধুনিক রাষ্ট্রকাঠামোয় এসব ‘অসহায়’ বৃদ্ধদের চিকিৎসাসহ নানাভাবে সাহায্য করার রাষ্ট্রেরই কর্তব্য বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।

ইকোনমিস্টের এই জরিপে সহায়তা করেছে ওয়াল্ডওয়াইড হসপিস প্যালিয়েটিভ কেয়ার এলায়েন্স (ডব্লিউএইচপিসিএ)। ডব্লিউএইচপিসিএর মুখপাত্র স্টিফেন কনর জানান, ‘বিশ্বব্যাপী গড় আয়ু বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা যেমন বাড়ছে একইভাবে বাড়ছে তাঁদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার বিষয়টির প্রয়োজনীয়তা।’

জরিপে দেখানো হয়েছে, ৮০টি দেশের মধ্যে মাত্র ৩৪টি দেশ মৃত্যুর ধরন সূচক- ২০১৫ এ বৃদ্ধদের জন্য ন্যূনতম সুবিধা নিশ্চিত করতে পেরেছে। আর এই ৩৪টি দেশে বৃদ্ধদের সংখ্যা মোট ৮০টি দেশের মাত্র ১৫ শতাংশ। এর মানে হলো বাকি ৮৫ শতাংশ বৃদ্ধই শেষ বয়েসের চিকিৎসা ও অন্যান্য সুযোগ থেকে বঞ্চিত।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here