ভুল চিকিৎসায় একটি হাত হারাতে বসেছে ৪ বছরের শিশু নাঈমজহিরুল ইসলাম শিবলু, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি:: জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে শিশু নাঈমের জীবন এখন হুমকির মুখে। ক্যানোলা স্থাপনের ভূলের খেসারতে কেটে ফেলতে হবে, তার বাম হাতের অন্তত তিনটি আঙ্গল। ভূল চিকিৎসায় ৪ বছরের শিশু নাঈমের হাত নষ্ট করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার জনতা মা-শিশু ও জেনারেল হাসপাতালের বিরুদ্ধে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে এমন অভিযোগ করেন মাহবুবুর রহমান নাঈম নামের ৪ বছর বয়সের শিশুটির বাবা নোমান পাটওয়ারী। শিশুটির পঙ্গু হতে যাওয়া হাতের ছবি দিয়ে সাংবাদিক, পুলিশ প্রশাসন ও সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন নোমান পাটওয়ারী। স্ট্যাটাসটি ইতোমধ্যে ভাইরাল হয়ে পড়েছে।

ভুল চিকিৎসায় একটি হাত হারাতে বসেছে ৪ বছরের শিশু নাঈমজানাযায়, নোমান পাটওয়ারীর একমাত্র ছেলে মাহবুবুর রহমান নাঈমকে গত ৩০মে জ্বরের চিকিৎসার জন্য লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জে জনতা মা-শিশু ও জেনারেল হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ আলীর অধীনে ভর্তি করা হয়। এ সময় তার বাম হাতে ক্যানোলা স্থাপন করা হয়। কিন্তু ক্যানোলা স্থাপনের পর থেকে তার হাতে ব্যাথা শুরু হয়। চিকিৎসার দ্বিতীয় দিনে নাঈমের হাত কালচে হয়ে যেতে থাকে। চার দিন চিকিৎসা নেওয়ার পর অবস্থার আরও অবনতি হলে এক পর্যায়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে অন্যত্র নিয়ে যেতে বলে। নাঈমের মা না আসতে চাইলে জোরপূর্বক হাসপাতাল থেকে তাদের বের করে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ঢাকায় এনে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের কাছে নিয়ে যাওয়া হলে তারা হাত কেটে ফেলতে বলেন।

এ ব্যাপারে শিশুটির বাবা নোমান পাটওয়ারী বলেন, জ্বরের চিকিৎসার জন্য শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ আলীর অধীনে জনতা মা-শিশু ও জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয় নাঈমকে। চিকিৎসার দ্বিতীয় দিনে ছেলের হাত কালচে হয়ে যেতে থাকে। চার দিন চিকিৎসা নেওয়ার পর অবস্থার আরও অবনতি হলে এক পর্যায়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে অন্যত্র নিয়ে যেতে বলে। আমার স্ত্রী না আসতে চাইলে জোরপূর্বক হাসপাতাল থেকে বের করে দেয় তারা। হাসপাতালের মালিকের সাথে আমার ফ্যামিলির লোকজন এ ব্যাপারে কথা বলছে তারা উল্টো তাদেরকে হুমকি-ধমকি দিয়ে হাসপাতাল থেকে বের করে দিয়েছে। যে জ্বরের জন্যে হাসপাতালে ভর্তি করলাম সেটার কিছুই হলো না উল্টো আমার ছেলের হাতটা পঙ্গু করে দিল। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার তিন দিন পর যখন তারা দেখে হাতের লাগানো ক্যানোলা মারাত্মক ইনফেকশন হয় এরপর তারা আমার ছেলেকে হাসপাতাল থেকে জোর করে বের করে দেয়।

শিশুটির বাবা আরও অভিযোগ করে বলেন, চারদিন হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নেওয়া হয়। প্রথম দিন ছাড়া আর একদিনও ডা. মোহাম্মদ আলী চিকিৎসার কোন তদারকি করেননি। এখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভূল চিকিৎসার কারণে আমার ছেলেটা পঙ্গু হতে চলেছে আমি এ ঘটনার সুষ্ঠ বিচার ও ক্ষতিপূরন দাবী করছি।

এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ডা. মোহাম্মদ আলী চিকিৎসার কোন অবহেলা হয়নি বলে জানান, ক্যানোলা ডিসপাস হওয়ার কারনে হাতের এমন অবস্থা হতে পারে। কেন হলো এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটি একটি একসিডেন্ট, দেশের বড় বড় হাসপাতাল গুলোতেও এমনটি হয়ে থাকে।

হাসপাতালে প্রশিক্ষিত কোন ডাক্তার ও নার্স নেই এমন প্রশ্নের জবাবে হাসপাতালটির মালিক মো. হানিফ বলেন, হাসপাতালে চারজন ডাক্তার আছে, তারা একজন ছুটিতে যায়, একজন আসে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. মোস্তফা খালেদ আহম্মদ জানান, নিয়ম অনুযায়ী প্রতি ১০ বেডের হাসপাতালের জন্য ৩জন ডাক্তার ও ৬জন ডিপ্লোমা নার্স থাকা প্রয়োজন। যদি এমনটি না থাকে, তাহলে অভিযোগ পেলে অথবা আমরা গিয়ে দেখলে হাসপাতলটি বন্ধ করে দেব।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here