নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ জেলায় ক্রমাগত বাড়ছে নারী অপরাধীর সংখ্যা। দিনে রাতে সমাল তালে চলছে তাদের দৌরাত্ম তাগিদটা অনেকের নিতান্তই জীবিকার হলেও এদের খপ্পরে পড়ে যারা সর্বশানত্ম হচ্ছে এমন অসহায় মানুষের সংখ্যাও কম নয়।

ছিনতাই, ডাকাতি, অপহরণ, প্রতারণা, ব্ল্যাকমেইলিং, অস্ত্র বহন ও ব্যবসা, জাল টাকার ব্যবসা, মাদক বেচাকেনাসহ প্রায় সব ধরনের অপরাধে রয়েছে নারী সদস্য। অজ্ঞান পাটির সঙ্গেও আছে এদের যোগসাজস।

এ চক্রগুলো এখন ব্যস্ততম নগরী নারায়ণগঞ্জে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। অভিজাত এলাকা থেকে বিপণি বিতানগুলোতে এদের বিচরণ বাড়ছে। অবশ্য এদের নিয়ন্ত্রণ করে বিভিন্ন পুরম্নষ ও প্রশাসনের দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তারা। তারা পেয়ে থাকে নির্দিষ্ট অংকের মাসোহারা। এই নারীরা মূলত এসব অপরাধের সহযোগী বা টোপ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

জানা গেছে, অপরাধী সিন্ডিকেটরা নারীদের দিয়ে অপরাধ করার বিষয়টা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ সহজে ফাঁকি দেয়ার একটা সহজ কৌশল। এছাড়া নারীদের সবসময় সহানুভূতি ও মর্যাদার চোখে দেখা হয় বলে তারা অনেক সময় সন্দেহের বাইরে থাকে। সেড়্গেত্রে এরা সুন্দরী মেয়েদের ব্যবহার করে। আর সেই সুযোগে নারায়ণগঞ্জ জেলায় এদের অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অন্যদিকে এদের অনত্মরালে পুরুষ সিন্ডিকেটের একটি সংঘবদ্ধ চক্র সক্রিয়ভাবে এদের মদদ দিয়ে থাকে।

সামপ্রতিক সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়া বেশ ক’জন নারী অপরাধীর কাছ থেকে পাওয়া গেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। গ্রেফতারের পর গোয়েন্দা সংস্থার কাছে দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বেরিয়ে এসেছে ভীতিকর কিছু তথ্য। জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করেছে, জেলায় বিভিন্ন এলাকায় ব্ল্যাকমেইলিং করার কাজে নিয়োজিত।

সমপ্রতি ফতুল্লা মডেল থানা থানা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া এক মাদক সম্রাঙ্গী বলেন, অপরাধ করার জন্য তো আমার জন্ম হয়নি। ভালোভাবে বেঁচে থাকার আশা কার না থাকে। অপরাধের শিকার হয়ে, ভুক্তভোগী হয়ে এ লাইন ধরেছি। এর শেষ কোথায় জানি না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্ল্যাকমেইলিংদলের এক মহিলা সদস্য জানান, তিনি জেলা শহরের একটি কলেজে পড়ার সময় মোবাইলে পরিচয়ের মাধ্যমে একটি ছেলেকে তার পরিবারকে না জানিয়ে বিয়ে করে ফেলেন। পরে পারিবারিক ও স্বামীর নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে এক সময় টাকার লোভে জড়িয়ে পড়েন অপরাধ জগতে। অবশেষে নিজে ম্যারেজ মিডিয়ার প্রতারণার ফাঁদ পেতে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এসব অপরাধের গ্রেফতার করে আটকে রাখা মুশকিল। কারণ শক্তিশালী গডফাদাররা এদের আশীর্বাদ কর্তা। এছাড়া অপরাধ আইনের ফাঁকফোকরে এরা সহজেই বেরিয়ে আসে। সেজন্য অনেক সময় অপরাধের খবর জানার পর এদের গ্রেফতারে লোক দেখানো অভিযান পরিচালনা করা হয় বলেও জানান তিনি।

নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক এক ভদ্র লোক জানান, গত কয়েকমাস আগে শহরের দেওভোগ এলাকার একটি মেয়েকে বিয়ে করেন তিনি। ২০ লাখ ১ টাকার কাবিন হয়। এক পর্যায়ে কৌশলে তার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় একটি চক্র। ওই চক্রটির একাধিক সুন্দরী কাজ করে শোবিজে বলেও তিনি জানান। আর বিষয়টি বিয়ের পরেই সে জানতে পেরেছে।

এছাড়া জেলায় বিভিন্ন বাসাবাড়িতে ডাকাতি ও স্বর্ণ চুরির কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে গৃহপরিচারিকাদের। এই গৃহপরিচারিকারা বাসাবাড়িতে কাজ নেয় আসলে ডাকাতি করার উদ্দেশ্যে। এ সময় তারা মালিকের বিশ্বাস অর্জন করে সুযোগ বুঝে সর্বত্র লুট করে পালিয়ে যায়। সমপ্রতি ফতুলস্না মডেল থানায় গ্রেফতার হয়েছে এমন এক গৃহপরিচারিকা। বর্তমানে ঐ থানায় গ্রেফতারকৃতরা রিমান্ডে রয়েছে।

খোঁজও খবর নিয়ে জানা যায়, জেলার প্রতিটি এলাকায় নারী ছিনতাইকারীদের দাপটের কথা জানে সাধারণ মানুষ। বোরকা পরা ওইসব ছিনতাইকারীকে রুখতে পারছে না পুলিশ। বরং উল্টো পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে তাদেরকে সহযোগিতা করার।

অন্যদিকে রয়েছে জেলায় বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ পতিতাদের উৎপাত। সন্ধ্যা নামলেই এরা বিভিন্ন ফুটপাথ ও জেলার প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে অবস্থান করে। এসময় অনেক খদ্দের তাদের ফাঁদে পা দিয়ে সর্বস্ব হারিয়ে ফেলছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত কয়েকমাসে জেলার বিভিন্ন স্পটে নারী ছিনতাইকারীদের সংখ্যা বেড়ে গেছে। জেলাজুড়ে যে পরিমাণ মাদক প্রবেশ করে তার ৯০ ভাগের বহনকারী নারী। জেলায় যে সকল অবৈধ জিনিস প্রবেশ করে তার বেশিরভাগের বাহক নারী। অর্থের বিনিময়ে এ সকল অবৈধ জিনিস বহন করে পৌঁছে দেয় গন্তব্যে। আর প্রশাসনে চোখ এড়াতে নারী পরিচয়টি মোড়্গম কাজ দেয় তাদের।

সূত্রে আরো জানা গেছে, প্রতিটি জাল টাকার চক্রের সঙ্গে জড়িত আছে একাধিক নারী সদস্য। এছাড়া পুরুষ পকেটমারের মতোই এখন জেলায় বিচরণ করছে কয়েক ডজন নারী পকেটমার। সুযোগ বুঝে তারা পকেটমেরে চলে যায়।

তাই জেলা বাসী এ সকল মহিলা অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার জন্য পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এম আর কামাল/

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here