‘বৃষ্টি দেখলে আমার ভিজতে ইচ্ছে করে’রাবেয়া বেবী :: বৃষ্টি দেখলে আমার অনেক সময় ভিজতে ইচ্ছা করে। সব সময় করে না, কারণ যখন আমার কাজে যেতে হবে তখন যত সুন্দর বৃষ্টিহোক না কেন ভেজার উপায় নেই। কিন্ত দেখতে অনেক ভাললাগে। রিমঝিম শব্দ শুনতে ভাললাগে। আর ভাললাগে গান শুনতে।

আমি শুনেছি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রিয় ঋতু বর্ষা। বর্ষা নিয়ে তার অনেক লেখালেখি আছে তার অনেকগুলোই আমার পছন্দ। অনেকগুলো বললাম এই জন্য যে, আমার মনে হয় আমি তার সব বর্ষার গান, কবিতা এখনও শুনতে পারিনি বা পড়তে পারিনি। বৃষ্টি দেখলে আমার কেন ভিজতে ইচ্ছে হয় এটা এখন বলি।

আমার জন্ম পুরান ঢাকার এক পুরান বাড়িতে। আমাদের দুই তলা বাড়ির মাঝখানটা খোলা, সেখানটায় আঙ্গিনা। আঙ্গিনার চারপাশে টিনের চালদেয়া বারান্দ। এই টিনের চালে বৃষ্টি পরলেই কিসুন্দর আওয়াজ হতো। বৃষ্টি হলেই আমরা ভাইবোনরা (চার ভাই বোন প্রায় বন্ধুর মতো) আশেপাশের বাড়ির ছেলেমেয়েরা মিলে ছাদে গোসল করতাম।

আমাদের চারপাশে অনেক বিহারী থাকত। তাদের কাছ থেকে বর্ষার কিছু ছড়াও শিখে ফেলেছিলাম যেমন আল্লাহ মিয়া রাজা খুলিয়ে দরওজা, বাদাল ফাটগিয়া ধুপ নিকালগিয়া। আর একটা হল এক পায়সা কা হালদি পানি আয় জালদি প্রভৃতি।

ছাদের যে নালাটা দিয়ে নিচে পানি পরে আমার নিজেদের জামা খুলে নালা বন্ধ করে নদী বানিয়ে তাতেই কত সাতার কাটতাম। সেখানে সাতার কাটতাম বলে আজও আমার সাতার শেখা হয়নি। এক সময় আমি লক্ষ করলাম বৃষ্টির পানিতে ভিজলে আমার গায়ে একরকম এ্যালার্জি হয়। খুব চুলকায় আর ফুলে যায়।

আমাদের প্যারিদাস রোডের বিখ্যাত হোমিও প্যাথি ডাক্তার হেলাল সাহেবের কাছে আব্বা আমাকে নিয়েগেলেন, তিনি একটা ওষুধ দিলেন বেশি করে পানি খেতে বললেন, কিছু খাবার নিষেধ করলেন আর নিষেধ করলেন বৃষ্টিতে ভিজতে। আমার বৃষ্টিতে ভেজার তেষ্ণটা আমি অনেক দিন মেটাতে পারিনি এক সময় বড় হয়ে গেলাম ।

পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ততার মাঝেও স্কুল কলেজে যেতে আসতে বৃষ্টিতে ভিজেছি । এথন বৃষ্টি এলেও খুব ভিজতে ইচ্ছা করে । কিন্তু নানা ব্যস্ততায় ছেলেবেলার মতো করে আর ভেজা হয় না। সবাইকে বর্ষার শুভেচ্ছা। আর বর্ষা নিয়ে আমার প্রিয় একটা কবিতা ও গান

বর্ষার দিনেরবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 
এমন দিনে তারে বলা যায়
এমন ঘনঘোর বরিষায় –
এমন মেঘস্বরে বাদল-ঝরঝরে
তপনহীন ঘন তমসায়।।
সে কথা শুনিবে না কেহ আর,
নিভৃত নির্জন চারি ধার।
দুজনে মুখোমুখি গভীর দুখে দুখি,
আকাশে জল ঝরে অনিবার –
জগতে কেহ যেন নাহি আর।।
সমাজ সংসার মিছে সব,
মিছে এ জীবনের কলরব।
কেবল আঁখি দিয়ে আঁখির সুধা পিয়ে
হৃদয় দিয়ে হৃদি-অনুভব –
আঁধারে মিশে গেছে আর সব।।
বলিতে ব্যথিবে না নিজ কান,
চমকি উঠিবে না নিজ প্রাণ।
সে কথা আঁখিনীরে মিশিয়া যাবে ধীরে,
বাদলবায়ে তার অবসান –
সে কথা ছেয়ে দিবে দুটি প্রাণ।।
তাহাতে এ জগতে ক্ষতি কার
নামাতে পারি যদি মনোভার!
শ্রাবণবরিষনে একদা গৃহকোণে
দু কথা বলি যদি কাছে তার
তাহাতে আসে যাবে কিবা কার।।
আছে তো তার পরে বারো মাস –
উঠিবে কত কথা, কত হাস।
আসিবে কত লোক, কত-না দুখশোক,
সে কথা কোনখানে পাবে নাশ –
জগৎ চলে যাবে বারো মাস।।

আজি ঝরঝর মুখর বাদল দিনে- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একজন অসাধারণ বর্ষা প্রেমিক ছিলেন। তিনি ১০০ টিরও বেশি বর্ষার গান লিখেছেন। তাই বাদল দিনের গানের তালিকা করতে গেলে সেখানে স্বাভাবিকভাবেই কবি গুরুর লেখা গান সংখ্যা গরিষ্ঠের আসন পেয়ে যায়।
বর্ষার দিনে কাজে কারো মন বসে না, এই চিরন্তন সত্য দিয়েই গানটির শুরু।
“আজি ঝর ঝর মুখর বাদলদিনে
জানি নে, জানি নে কিছুতেই কেন মন লাগে না ।”

লেখক: ষ্টাফ রিপোর্টার ও বিভাগীয় সম্পাদক, মহিলা অঙ্গন, দৈনিক ইত্তেফাক।

ইমেইল: rabeyababy@gmail.com

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here