কলেজছাত্রী এলিনা আক্তার ঝুমাসিলেট ঃঃবিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় সিলেটের জকিগঞ্জে কলেজছাত্রী এলিনা আক্তার ঝুমাকে হত্যার উদ্দেশে কুপিয়ে জখম করেছে বখাটে বাহার উদ্দিন। গতকাল সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ঝুমা ও তার মা করিমা বেগম এ অভিযোগ করেন। তারা বলেন, হামলাকারী বখাটে বাহারের পরিবার এলাকায় প্রভাবশালী। এ কারণে তারা তাদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় আছেন। ঝুমাকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় গতকাল এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জকিগঞ্জ থানায় মামলা হয়নি। তবে প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন থানার ওসি হাবিবুর রহমান।

এর আগে গতকাল ভোরে বখাটে বাহার উদ্দিনের ভাই নাসির উদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ। উপজেলার রসুলপুর গ্রাম থেকে তাকে আটক করা হয়। ঘটনার পর থেকে বাহারের পুরো পরিবার আত্মগোপনে চলে গেছে বলে জানা গেছে।

এদিকে জরুরি অস্ত্রোপচার শেষে ঝুমাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চতুর্থ তলার ৬নং ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ঝুমার পেটে ও হাতে গুরুতর আঘাত রয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ঝুমা এখন অনেকটাই আশঙ্কামুক্ত। তিন ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে তাকে। আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।

গত রোববার সকালে ছোট ভাইকে স্কুলে ভর্তি করাতে নিয়ে যাওয়ায় পথে ঝুমাকে ছুরি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে বাহার। মেয়ের এ অবস্থা দেখে করিমা বেগম এগিয়ে গেলে তাকেও কুপিয়ে জখম করে এই বখাটে। ঝুমা জকিগঞ্জের রসুলপুর গ্রামের মুসলিম উদ্দিনের মেয়ে। বাহার উদ্দিন একই গ্রামের আবদুল গফুরের ছেলে। দীর্ঘদিন ধরেই বাহার ঝুমাকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। সম্প্রতি সে বিয়ের প্রস্তাব দিলে ঝুমার পরিবার রাজি হয়নি। এ নিয়ে গ্রাম্য বিচারেও প্রত্যাখ্যান করা হয় বাহারকে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে বাহার ঝুমার ওপর হামলা চালায়। ঘটনার পর পরই সে পালিয়ে যায়।

কলেজছাত্রী এলিনা আক্তার ঝুমাকয়েকজন এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঝুমা ও বাহার উভয়ই কৃষক পরিবারের সন্তান। তবে ঝুমার পরিবার গরিব এবং তার বাবাও শারীরিকভাবে অসুস্থ। ঝুমার অন্য তিন ভাইবোনও ছোট। অন্যদিকে বাহারের পরিবার বিত্তশালী এবং এলাকায় বেশ প্রভাব রয়েছে। তারা পাঁচ ভাই। তবে বাহার শারীরিক প্রতিবন্ধী। সিলেট আলিয়া মাদ্রাসায় পড়াশোনার পাশাপাশি স্থানীয় ইছামতি মাদ্রাসায় সে মাঝেমধ্যে শিক্ষকতাও করত বলে জানান কয়েকজন। তবে এ ব্যাপারে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ঝুমার আত্মীয়রা জানান, বাহার ঝুমাদের বাড়িতে যেত। সেই সূত্রে তাকে পড়াশোনার ব্যাপারে মাঝেমধ্যে সাহায্য করত। প্রেমের প্রস্তাব দেওয়ার পর থেকেই তার সঙ্গে এ পরিবারের বিরোধ দেখা দেয়।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত ঝুমা জানায়, প্রেমের প্রস্তাব দেওয়ার পর থেকেই বাহারকে সে এড়িয়ে চলত। পথেঘাটে বাহার তাকে উত্ত্যক্ত করত। গোসলের সময় পুুকুরপাড়ে দাঁড়িয়ে থাকত। ঘটনার দিন বাহার বাঁশঝাড়ে লুকিয়েছিল। কাছে আসতেই তার ওপর ছুরি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এর পর হাসপাতালে আসার পূর্ব পর্যন্ত সে আর কিছু বলতে পারে না।

ঝুমা আরও জানায়, বিয়ে করতে চায়নি বলেই তাকে হত্যার চেষ্টা করে বাহার। ঝুমা আবার স্বাভাবিক জীবন পেতে চায়, পড়ালেখা করতে চায়।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদুল কাদির জানান, রোববার সকালে রসুলপুর গ্রামে একটি বাড়িতে সালিশি বৈঠকে চলাকালে ঝুমার মা দৌড়ে এসে তার মেয়েকে বাঁচাতে বলেন। ঘটনাস্থলে গিয়ে ঝুমাকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখেন তিনি। সেখান থেকে তাকে ওসমানী হাসপাতালে এনে ভর্তি করান। বাহার গত কিছুদিন ধরে ঝুমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছিল, কিন্তু তার পরিবার রাজি হচ্ছিল না বলে আমরা জানি।

সোমবার বাহারের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ি তালা দিয়ে পরিবারের সবাই পালিয়েছে। আশপাশের প্রতিবেশী কয়েকটি বাড়িতেও তালা দেওয়া। দূরের প্রতিবেশীদের কেউ কথা বলতে রাজি হননি। জকিগঞ্জ থানার এসআই গৌতম সরকারের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল।

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here