বান্দরবানে সড়ক সংস্কার-নির্মাণ কাজে ব্যাপক লুটপাটএনামুল হক কাশেমী, বান্দরবান প্রতিনিধি :: জুন-ক্লোজিংকে সামনে রেখে দ্রুতসময়ের মধ্যে কথিত কাজের সমাপ্তি টানতে ব্যাপক নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে। বান্দরবান সদর, আলীকদম এবং নাইক্ষংছড়ি উপজেলায় সকড়পথ সংস্কারের কাজসমুহে। এসব কাজ উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের উদ্যোগেই চলছে, ব্যয় করা হচ্ছে প্রায় ২কোটি ৪৪ রাখ টাকা। রাস্তা সংস্কারের কাজ এতই নিম্নমানের যে, কাজ শেষ করার মাত্র ৭দিনের মাথায় কার্পেটিং উঠে গেছে এবং সড়কপথের নানাস্থান দেবে গিয়ে একাকার হয়ে গেছে।

স্থানীয় সচেতন নাগরিকদের অভিযোগ,জুনক্লোজিংকে সামনে রেখেই এলজিইডির প্রকৌশলীরা রাষ্ট্রীয় কোষাগারের বিপুল অর্থ লুটপাট করতেই এই উদ্যোগ নিয়েছেন। সংস্কারকৃত রাস্তাসমুহ যানবাহন ব্যবহারে দ্রুত অযোগ্য হয়ে পড়বে এবং নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের কারণে কোনমতেই টেকসই হবে না।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, জেলার নাইক্ষ্যংছড়িতে স্থানীয় সরকার বিভাগের অর্থায়নে ১কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক সংস্কার(রক্ষণা-বেক্ষণ)কাজে ব্যাপক অনিয়ম-দূর্নীতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে। এ সড়কের সংস্কার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে কমদামী ইরানী ভিটুমিন এবং সড়কে ১২এম.এম সিলকোড পাথরের স্তর দিয়ে কার্পেটিং করার নিয়ম থাকা সত্বেও ৬-৭এম.এম সিলকোডের কার্পেটিং দেয়া হচ্ছে। অতিনিম্নমানের ইট ব্যবহার করেই সড়কের পাশে নালা ও গাইড-ওয়াল নির্মাণ করা হচ্ছে। নালা ও গাইড-ওয়ালে সিমেন্ট-বালির মিশ্রণেও নিন্মমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও গুরুতর অভিযোগ রয়েছে।

নাইক্ষংছড়ি উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ জানায়, এ উপজেলায় ১কোটি ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে জারুলিয়াছড়ি স্কুলের সামনে থেকে সোনাইছড়ি পর্যন্ত ৫কিলোমিটার সড়ক সংস্কার কাজটি সম্পাদনের জন্য কার্যাদেশ প্রদান করা হয় মিল্টন টেডাসের্র লাইসেন্সে। কার্যত এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছেন আলীকদম উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কফিল উদ্দিন,বিএনপি নেতা জুলফিকার ভুট্টো গং। কার্যাদেশ অনুযায়ী সড়কটি সংস্কারে কার্পেটিং কাজে ৮০ থেকে ১০০ গ্রেডের ভিটুমিন এবং ১২ এম.এম সিলকোড পাথরের স্তর দিয়ে কার্পেটিং করার কথা,কিন্তু তা করা হয়নি।

উপজেলা প্রকৌশলী মো.তোফাজ্জেল হোসেনকে ‘ম্যানেজ’ করে ল্যাবটেষ্ট করানো ছাড়াই কমদামি ইরানী ভিটুমিন ব্যবহার করে মাত্র ৬ থেকে ৭ এম.এম সিলকোড পাথরের স্তর দিয়ে কার্পেটিং কাজটি দ্রুত সময়েই শেষ করছে তারা। ১২ ফুট প্রশস্ত রাস্তাটির মাপ-পরিমাপও সঠিক নেই বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

এ সড়কের সংস্কার কাজের অভিযোগ সম্পর্কে ঠিকাদার ভুট্টো বলেন,কাজের গুনগতমান ঠিক রেখেই সড়ক সংস্কারের চলছে। প্রকৌশল বিভাগের মাঠ কর্মকর্তারাও নিয়মিত তদারকি করছেন। ঠিকাদার কফিল উদ্দিন দাবি করেন, রাস্তার সিলকোর্ড কার্পেটিং এর কাজ প্রায় শেষ। কয়েকটি স্থানে কিছুু সমস্যা থাকলেও তা সমাধানে কাজ করা হচ্ছে।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রকৌশলী তোফাজ্জেল হোসেন জানান, ইরানী ভিটুমিন ব্যবহার নিষিদ্ধ নয়। কাজের গুনগতমান ঠিক রাখতে সার্বক্ষনিক পরিশ্রম করে যাচ্ছেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অভিযোগসমুহ সঠিক নয়।

জেলার আলীকদম উপজেলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের উদ্যোগে সাম্প্রতিক সময়ে সময়ে নির্মিত সড়কের কার্পেটিং উঠে গেছে মাত্র ৭দিনের মাথায়। সড়কের কাজে নিন্মমানের ভিটুমিনসহ সামগ্রী ব্যবহারের ফলে এলজিইডি’র উন্নয়ন ও সংস্কার কাজগুলোর টেকসই হচ্ছে না বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে স্থানীয়দের কাছ থেকে।

উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ জানায়, ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ে আলীকদম উপজেলা সদরে ২হাজার ৩শ মিটার সড়ক সংস্কার(রক্ষণা-বেক্ষণের)কাজ চলছে। কে-হোসাইন এন্ড কোং লাইসেন্সের নামে সরকারি দলের নেতা নাছির উদ্দিন এবং বিএনপি নেতা আবু বক্কর উন্নয়ন কাজটি বাস্তবায়ন করছে।

কার্যাদেশ অনুযায়ী ৮০থেকে ১০০গ্রেডের উন্নতমানের ভিটুমিন এবং ১২এমএম সিলকোড পাথর ব্যবহার করে ১২ফুট প্রশস্ত সড়ক নির্মাণের কথা রয়েছে। চলতি অর্থ বছরের উন্নয়ন কাজটি জুনমাসের মধ্যেই সম্পন্ন করার অজুহাতেই যেনতেনভাবেই কাজ করা হচ্ছে বলে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। কাজে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করায় কোনভবেই এটি টেকসই হবে না এবং কার্যত সরকারি কোষাগারের বিপুল অর্থ অপচয় হবে বলেও শংকা প্রকাশ করেছেন নাগরিকরা।

বান্দরবান সদর উপজেলার রাজবিলা ইউনিয়নের বাঘমারায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের উদ্যোগে ৯৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ১০টি কালভার্ট, ৪০ মিটার গাইড-ওয়াল ও ২কিলোমিটার নালা নির্মাণের কাজেও নি¤œমানের ইট,বালু,অপরিপক্ক স্থানীয় পাথরসহ নিম্নমানের সামগ্রী প্রকাশ্যেই ব্যবহার করা হচ্ছে। মের্সাস সেলিম এন্ড ব্রাদাসের্র লাইসেন্সে এই উন্নয়ন কাজটি বাস্তবায়ন করছেন জনৈক শাজাহান মিয়া।

স্থানীয়দের অভিযোগ,ঠিকাদাররা প্রকৌশলীদের ম্যানেজ করে নি¤œমানের ইরানী ভিটুমিন ব্যবহার করে ১২ এমএম সিলকোর্ড পাথরের স্তরের স্থলে ৬-৭ এমএম কার্পেটিং কাজ দ্রুত শেষ করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছেন।

জেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু তালেব চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, এ বিভাগের কাজে নিন্মমানের সামগ্রী ব্যবহারের সুযোগ নেই,ভারীবর্ষণে নির্মাণাধীন আলীকদম উপজেলা পরিষদ সড়কের রাস্তার কিছু অংশের কার্পেটিং উঠে গেছে। সেগুলো পুনরায় ঠিক করে নেয়া হবে। সদর এবং নাইক্ষংছড়িতে সড়ক সংষ্কারের কাজে কোন দুর্নীতি নেই বলেও তিনি দাবি করেন।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here