wheWg&aF

রবীন্দ্র নাথ পাল, ময়মনসিংহ থেকেঃ ঈশ্বরগঞ্জে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পিতার চার সন্তানই শ্রবন ও বাক প্রতিবন্ধী হওয়ায় সন্তানদের নিয়ে বর্তমানে বাবা মা চরম বিপাকে দিনাতিপাত করছেন । প্রতিবন্ধী ভাতা কিংবা কোন ধরনের সরকারি সাহায্য জুটেনি ওই পরিবারের ভাগ্যে ।

কেয়ার বাংলাদেশ কর্তৃক দুই বছর মেয়াদী মায়েদের জন্য খাবার বিতরণের আওতায় প্রাপ্ত খাদ্য সামগ্রীই একমাত্র সাহায্য ।

ঈশ্বরগঞ্জে কর্মরত কেয়ার বাংলাদেশ সৌহার্দ্য কর্মসূচির কর্মকর্তাগনের উপস্থিতিতে সরেজমিন জানা যায়, উপজেলার রাজিবপুর ইউনিয়নের দেবস্থান গ্রামের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পিতা ওয়াহেদ আলী (৪৭) ও হেলেনা খাতুন (৩৮) দম্পতির ইলিয়াস মিয়া (১৩) ইয়াসিন (১০) কাউসার (৮) ও ফারজানা (দেড় বছর) সকলেই জন্মাবধি শ্রবন ও বাক প্রতিবন্ধী।

ওয়াহেদ আলী ডান চোখে দেখতে পান না । বয়স বাড়ার সাথে সাথে প্রত্যেকের শ্রবন ও বাকপ্রতিবন্ধী হওয়ার বিষয়টি বাবা মার কাছে পরিস্কার হতে থাকে । চার ভাইবোনের মনের ভাব ও অভিব্যক্তি প্রকাশে একমাত্র ইশারাই সম্বল ।

প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে সন্তানদের মুখে ওই দম্পতি আজও বাবা-মা ডাক শুনতে পাননি । বর্তমানে ইলিয়াস উচাখিলা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ইয়াসিন মমরোজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩য় শ্রেণিতে ও কাউসার একই স্কুলে ১ম শ্রেণীতে অধ্যয়নরত ।

বাক প্রতিবন্ধী হওয়ায় সকলেই শব্দবিহীন পড়ার মাধ্যমে ক্লাসের পড়া আর ভাব প্রকাশ করে লেখার মাধ্যমে । তবে প্রতিবন্ধী সত্বেও স্মৃতিশক্তি প্রখর হওয়ায় বইয়ের পড়া কয়েকবার দেখলেই মুখস্থ করার পাশাপাশি ইলিয়াস মোবাইলে ব্যালেন্স ট্রান্সফারের মত কাজটিও অনায়াসে করতে পারে।

পেশায় রাজমিস্ত্রির যোগালি বাবা ওয়াহেদ আলী ও গৃহিনী মা হেলেনা খাতুন জানান, বসত ভিটা ছাড়া আর আমাদের কোন জমিজমা নাই । অর্থাভাবে সন্তানদের চিকিৎসা করাতে পারছি না । উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা ডা. লক্ষীনারায়ন মজুমদার বলেন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী পিতার চারটি শিশু শ্রবন ও বাক প্রতিবন্ধী অর্থাৎ একই পরিবারে পাঁচজন প্রতিবন্ধী হওয়ার ঘটনা সাধারণত জেনেটিক কারণে হতে পারে । আর পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়া নিশ্চিত করে কিছু বলা যাবে না ।

এ ব্যাপারে রাজিবপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো.আশরাফুল ইসলাম চান মিয়া জানান, আমি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর অত্র ইউনিয়নে সরকারিভাবে প্রতিবন্ধী কার্ড বরাদ্দ পাইনি । বরাদ্দ পেলে ব্যবস্থা নেব ।

কেয়ার বাংলাদেশ সৌহার্দ্য কর্মসূচি ঈশ্বরগঞ্জের ফিল্ড সুপারভাইজার মৃণাল কান্তি চক্রবর্তী জানান, ইতোমধ্যে প্রতিবন্ধী পরিবারটি কেয়ার বাংলাদেশ প্রদত্ত সকল সুবিধা পাচ্ছে । তাছাড়া ওই পরিবারটি যাতে করে  সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা পায় সেজন্য আমরা উপজেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করার পাশাপাশি কেয়ারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করব ।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. এহছানুল হক জানান, ইতোমধ্যে প্রতিবন্ধীদের ডাক্তার কর্তৃক প্রত্যয়ন ও ছবি তোলার পর জরিপের প্রাথমিক কাজ শেষ হয়েছে । প্রতিবন্ধী জরিপের তালিকায় তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত আছে ।

নতুন করে প্রতিবন্ধী কার্ড বরাদ্দ হয়নি । বরাদ্দ হলে তাদেরকে ভাতার আওতায় আনা হবে। এই পরিবারটি আর্থিক সহায়তা পেলে চিকিৎসার মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্যের

কিছুটা পরিবর্তন করতে পারতো। দানশীল ও সমাজসেবীরা ইচ্ছা করলেই এদের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারবে বলে পরিবারটি আশাবাদী।

 

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here