ব্যবসা-বাণিজ্যসহ পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়াতে পাঁচটি দলিলে সই করেছে বাংলাদেশ ও ভুটান। বাণিজ্য ক্ষেত্রে দ্বৈত কর প্রত্যাহার, পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ, কৃষি, বাংলাদেশের নৌপথ ভুটানকে ব্যবহার করতে দেওয়া ও সংস্কৃতি বিষয়ে এ পাঁচটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই করে দুই দেশ।

মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) রয়েল ব্যাংকুয়েট হল অব গায়ালয়ং থোসংখ্যাংয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভুটানের প্রধানমন্ত্রী দাশো শেরিং টোবগের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে এসব দলিল সই হয়।

দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পর পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক প্রেস ব্রিফিং করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম উপস্থিত ছিলেন।

পররাষ্ট্র সচিব চুক্তি স্বাক্ষর বিষয়ে বলেন, কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এতে বাণিজ্য ক্ষেত্রে বেশ সুযোগ সৃষ্টি হবে। বিশেষ করে দ্বৈত কর প্রত্যাহার চুক্তির ফলে বাণিজ্য বাড়বে।

দুই প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপাক্ষিক বৈঠক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আলোচনায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে দু’দেশের কানেকটিভিটিকে ধরে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি।

জলবিদ্যুতের বিষয়ে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবিদ্যুতের যে সম্ভাবনা আছে, সেটা গেম চেঞ্জার হতে পারে। ভুটানে তিন দেশের সহায়তা বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে এবং এটা আঞ্চলিকভাবে ট্রান্সমিট করবে।

ভুটান থেকে বাংলাদেশে আরও বেশি পণ্য আনার কথ বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির ওপর বেশি গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

একটা হেলথ ট্রাস্ট ফান্ড গঠনের কথা উল্লেখ করে এ ফান্ডে বাংলাদেশে সহযোগিতা চান ভুটানের প্রধানমন্ত্রী।

বাংলাদেশ থেকে ডাক্তারদের ভুটানে সরকারি চাকরি করার সুযোগের কথা তুলে ধরে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশি ডাক্তাররা এখানে সরকারি চাকরি করলে তিন হাজার ডলার বেতন দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে আবাসনসহ অন্যান্য সুবিধাও রয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের ডাক্তাররা রাজি হলে একটা সুযোগ সৃষ্টি হবে।

১২৩ জন ভুটানের শিক্ষার্থী বাংলাদেশে পড়াশোনা করছে। যার মধ্যে ডাক্তারই বেশি। এক্ষেত্রে আরও সহযোগিতা বাড়ানোর কথা বলেন তিনি।

বৈঠকে বিবিআইএন-এর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ট্যুরিজমে সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশে একটা টিম পাঠাবেন। কক্সবাজার, কুয়াকাটার সঙ্গে একটা ‍ট্যুরিজম করিডোর করার বিষয়ে অনুসন্ধান করবে সেই টিম।

১৯৭১ সালের গণহত্যা দিবসের বিষয়ে ভুটানের সহায়তা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পানি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই অঞ্চলের ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট এটা সবাইকে মিলে করতে হবে। বিশেষ করে ভারত, বাংলাদেশ ও ভুটান।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ভুটান দু’টি দেশের একটি যারা ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিলো। সে হিসেবে বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে একটা বিশেষ সর্ম্পক রয়েছে। এই সর্ম্পককে ধরে রাখতে ভুটানের রাজা বাংলাদেশকে একটি জমি দেবেন। বুধবার (১৯ এপ্রিল) এ বিষয়ে একটা সাইনিং সিরিমনি হবে। সেখানে ভুটানে রাজা উপস্থিত থাকবেন।

সকালে পারো বিমানবন্দরে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানান ভুটানের প্রধানমন্ত্রী তোবগে। বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা ও গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। এরপর মোটর শোভাযাত্রাসহ রাজধানী থিম্পুর হোটেল লা মেরিডিয়ানে নিয়ে যাওয়া হয়।

দুপুরে ভুটানের রাজপ্রাসাদে জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করে নেওয়া হয়। সেখানে ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক ও রানী জেটসান পেমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন শেখ হাসিনা।

রাতে ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া নৈশভোজে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রীর সফর সঙ্গীদের মধ্যে অটিজম ও নিওরোডেভলোপমেন্টাল ডিজঅর্ডার বিষয়ক বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যাডভাইজরি কমিটির চেয়ারপারসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ হোসেন ও শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকও রয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) ঢাকায় ফিরবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here