বাংলাদেশের কাছে ২৩ রানে হার শ্রীলংকারষ্টাফ রিপোর্টার :: ধূসর শুরুতে রঙ চড়াল সাবি্বর রহমানের অসাধারণ ইনিংস। সাকিব আল হাসান আর মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে ইনিংসের শেষটা হলো উজ্জ্বল। দুর্দান্ত বোলিং-ফিল্ডিংয়ে ম্যাচের শেষ হলো রঙিন; টি-টোয়েন্টিতে প্রথমবার শ্রীলংকাকে হারিয়েছে বাংলাদেশ।

এশিয়া কাপে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে শ্রীলংকাকে ২৩ রানে হারায় বাংলাদেশ। ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৪৭ রান করেছিল বাংলাদেশ। শ্রীলংকা করতে পারে ৮ উইকেটে ১২৪।

প্রথম ম্যাচে হেরে শুরু করলেও টানা দ্বিতীয় জয়ে বাংলাদেশ পয়েন্ট টেবিলে নিয়ে গেল আগে থেকে শীর্ষে থাকা ভারতের সমান পয়েন্টে। শীর্ষ দুই দল সরাসরি ফাইনালে যাবে। এই জয়ের গুরুত্ব তাই অপরসীম।
২৬ রানে ৩ উইকেট হারানো বাংলাদেশকে লড়ার মতো রান এনে দিয়েছে সাবি্বর রহমানের ৮০ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে বড় ভূমিকা রেখেছেন সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহ। পেসাররা যথারীতি ছিলেন দুর্দান্ত। দুর্দান্ত টিম পারফরম্যান্সের ফসল বাংলাদেশের লংকা-জয়।

বাংলাদেশ উইকেট পেতে পারত প্রথম ওভারেই। কিন্তু সস্নিপে ক্যাচ ছাড়েন সৌম্য সরকার। আগের ম্যাচেও তাসকিন আহমেদের বলে দুটি ক্যাচ ছেড়েছিলেন সৌম্য। এবার ম্যাচের দ্বিতীয় বলেই হাতছাড়া করলেন দিনেশ চান্দিমালের ক্যাচ।
একটু পরই অসাধারণ এক ক্যাচে কিছুটা প্রায়শ্চিত্ত করেন সৌম্য। বল হাতে নিয়ে প্রথম বলেই সাকিব ফেরান তিলকরত্নে দিলশানকে। ডাউন দা উইকেটে খেলে বল আকাশে তুলেছিলেন দিলশান, মিড অফ থেকে অনেকটা দৌড়ে লং অনে দুদান্ত ডাইভিং ক্যাচ নেন সৌম্য (১২)।
তিনে নেমে শিহান জয়াসুরিয়া আল আমিন হোসেনকে এক ওভারেই চার ও ছক্কা মেরে দূরে ঠেলেন চাপ। তবে নিয়ন্ত্রিত
বোলিংয়ে চাপটা আস্তে আস্তে আবার ফিরিয়ে আনে বাংলাদেশ। সেটিরই পুরস্কার দ্বিতীয় উইকেট। মাহমুদউল্লাহকে রিভার্স সুইপ খেলে আউট চান্দিমাল (৩৭ বলে ৩৭)।
৫৬ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটি ভাঙার পরপরই আরেকটি উইকেট। সাকিবের বলে স্ট্যাম্পেড জয়াসুরিয়া (২৬)।
মুস্তাফিজ আক্রমণে ফিরেই তুলে নেন বিপজ্জনক থিসারা পেরেরাকে। দু দলের সবশেষ সিরিজে দুই ম্যাচেই শ্রীলংকাকে শেষ বলে জিতিয়েছেল এই অলরাউন্ডার। এবার মুস্তাফিজের ফুল লেংথ বলে এলবিডবিস্নউ ৪ রানে।
বেশ কিছু সময় উইকেটে থেকেও ইনিংসকে গতি দিতে না পারা অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস আউট হয়েছেন হাঁসফাঁস করতে করতে। শ্রীলংকার সম্ভাবনারও মৃত্যু তাতে।
শেষ ওভারে দুটিসহ ৩৪ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন আল আমিন। ২১ রানে দুটি সাকিব। মাশরাফি-মাহমুদউল্লাহ পেয়েছেন একটি করে। একটি উইকেট পেলেও আবারো অসাধারণ বোলিং বৈচিত্র্যে মুগ্ধতা ছড়িয়েছে মুস্তাফিজুর রহমান।
চোট নিয়ে বিশ্রামে যাওয়া মালিঙ্গার জায়গায় লংকানদের নেতৃত্ব দেন ম্যাথিউস। সবুজ উইকেট চেহারা বদলে এদিন প্রায় সাদা, চেনা ব্যাটিং উইকেট। নতুন বলে তবু বাংলাদেশকে নাড়িয়ে দিলেন ম্যাথিউস।
বাংলাদেশের দুই ওপেনারই আউট হয়েছেন রানের খাতা খোলার আগেই। আগের ম্যাচে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোরার মোহাম্মদ মিঠুন এবার ফিরে যান সবার আগে। ম্যাথিউসের ভেতরে ঢোকা বল বুঝতেই পারেননি মিঠুন, লাইনে না খেলে এলবিডবিস্নউ (০)।
দুঃসময়ের প্রহরকে দীর্ঘায়িত করে সৌম্য সরকার ফেরেন নুয়ান কুলাসেকেরার বলে দৃষ্টিকটু এক শটে (৪)।
এই নিয়ে দ্বিতীয়বার একই ম্যাচে শূন্য রানে আউট হলেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার। ২০১০টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বারবাডোজে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে রান করতে পারেননি ইমরুল কায়েস ও মোহাম্মদ আশরাফুল।
৩ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান ছিল ২ উইকেটে ৬। রানখরা দূর হয় সাবি্বরের ব্যাটে, তৃতীয় ওভারে কুলাসেকেরাকে তিনটি চার ও এক ছক্কায় নেন ১৮ রান।
কিন্তু একটু গুছিয়ে আসার আগেই আরেকটি আঘাত, সাবি্বরের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হন মুশফিকুর রহিম (৪)।
নিয়মিত উইকেট হারানোতেও ভড়কে না গিয়ে সাবি্বর এক প্রান্তে খেলে গেছেন অসাধারণ সব শট। পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশ তোলে ৪১ রান, তাতে সাবি্বরই ১৯ বলে করেন ৩৫। বাকিরা মিলে ১৭ বলে ৬!
পাওয়ার প্লের পর একটু সস্নথ হয়েছিল রানের গতি। নবম থেকে দ্বাদশ, এই চার ওভারে আসেনি বাউন্ডারি। সাবি্বরের ব্যাটেই আবার প্রাণ পায় ইনিংস। ব্যাটিং ফর্ম খোঁজার লড়াইয়ে থাকা সাকিব দিয়ে যান সঙ্গ।
ভাগ্যকেও খানিকটা পাশে পান সাবি্বর। শিহান জয়াসুরিয়াকে সস্নগ করে বল পাঠিয়েছিলেন মিড উইকেট সীমানায়, অভিজ্ঞ চামারা কাপুগেদারা হাত ছু্ঁইয়ে বল পাঠিয়ে দেন ওপারে! ওই ছক্কাতেই অর্ধশতক স্পর্শ করেন সাবি্বর, ৩৮ বলে। টি-টোয়েন্টিতে এটি তার তৃতীয় ফিফটি।
বেঁচে গিয়ে পরের দুই বলেই আরো দুটি বাউন্ডারিতে লংকানদের পোড়ান সাবি্বর। দুশমন্থ চামিরাকে দারুণ এক পুলে উড়িয়ে দেন মিড উইকেটের ওপর দিয়ে। পরের বলে একই জায়গা দিয়ে আবার ছক্কা মারার চেষ্টায় ধরা পড়লেন সীমানায়। দলের রান তখন ১০৮, সাবি্বরের একারই ৮০! ৫৪ বলের ইনিংসে ১০টি চার ও ৩টি ছক্কা।
সাবি্বরের বিদায়ের পর দারুণ দুটি চারে ডানা মেলার চেষ্টা করেছিলেন সাকিব। পারলেন না ধৈর্যশীল ইনিংসটা দারুণভাবে শেষ করতে। ফিরলেন চামিরার বাউন্সারে (৩৪ বলে ৩২)।
বাংলাদেশের শেষটা তবু খারাপ হয়নি, কারণ তখন ক্রিজে ছিলন মাহমুদউল্লাহ। আগের ম্যাচের মতোই জ্বলে ওঠেন তিনি শেষদিকে, ১২ বলে অপরাজিত থাকেন ২৩ রানে।
ইনিংস শেষে টিভি সাক্ষাৎকারে সাকিব বলেছিলেন, রানটা ১৬০ হলে ভালো হতো। কিন্তু দিন বদলের পালায় বোলিং যে এখন বাংলাদেশের বড় শক্তি!
১৪৭ রান করেও এই অনায়াস জয় বিশ্বকাপের আগে মাশরাফিদের জন্য আত্মবিশ্বাসের দারুণ জ্বালানি!
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৪৭/৭ (মিঠুন ০, সৌম্য ০, সাবি্বর ৮০, মুশফিক ৪, সাকিব ৩২, মাহমুদউল্লাহ ২৩*, নুরুল ২, মাশরাফি ২; চামিরা ৩/৩০, ম্যাথিউস ১/৮, কুলাসেকারা ১/৪৪)
শ্রীলংকা: ২০ ওভারে ১২৪/৮ (চান্দিমাল ৩৭, দিলশান ১২, জয়াসুরিয়া ২৬, ম্যাথিউস ১২, থিসারা ৪, সিরিবর্ধনা ৩, শানাকা ১৪, কাপুগেদারা ১২*, কুলাসেকারা ০, চামিরা ১*; আল আমিন ৩/৩৪, সাকিব ২/২১, মাহমুদউল্লাহ ১/১৪, মাশরাফি ১/১৭, মুস্তাফিজ ১/১৮)
ম্যাচ সেরা: সাবি্বর রহমান (বাংলাদেশ)?

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here