হাওরে যখন এবার দুর্যোগ শুরু হয় তখন প্রধানমন্ত্রী আমার কাছে এসেছিলেন। আমি তাকে বলেছিলাম, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আমি হাওরের লোক। আমার হাওরের মানুষ এখন ফসল বাঁচানো নিয়ে উদ্বিগ্ন। আমার এ উদ্বেগের বিষয়টি লক্ষ্য করে প্রধানমন্ত্রী আমাকে বলেছেন, আপনার হাওরের কোনো লোক না খেয়ে মারা যাবে না।

সোমবার রাত ১০টায় সুনামগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত সুধীজনের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। কিশোরগঞ্জের মিঠামইন থেকে দুপুরে হেলিকপ্টারযোগে সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণার হাওর পরিদর্শনে আসেন তিনি। পরিদর্শন শেষে সোমবার রাতে সুনামগঞ্জের সুধীজনের সঙ্গে মতবিনিময় করেন রাষ্ট্রপতি।

রাষ্ট্রপতি বলেন, “আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, ‘আপনি হাওরের বিভিন্ন পয়েন্টে ইকোনমিক জোন করেন, শিল্প কারখানা করেন। আগামী ২০ এপ্রিল আবারো প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এসব বিষয়ে কথা বলব। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের সঙ্গেও দুর্গত হাওরবাসী নিয়ে কথা বলবো।  তিনি আগামী ২ মে অনুষ্ঠিব্য সংসদ অধিবেশনে হাওরের সকল সাংসদের এই বিষয় নিয়ে কথা বলার আহ্বান জানান।

সুধীজনের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি সুনামগঞ্জে তার স্মৃতিকাতরতা নিয়ে বলেন, সুনামগঞ্জের সঙ্গে আমার দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক। ১৯৭১ সনে মে মাসের প্রথম দিকে এসেছিলাম। তখন দুর্যোগের সময় এসেছিলাম। এবারও দুর্যোগের সময় এসেছি। আশা করি এবারের দাঁড়ানোটা নিরর্থক হবে না। একটা কিছু হবেই।  তবে, স্থানীয় সাংসদদের আগামী সংসদ অধিবেশনে দুর্গত হাওর নিয়ে সোচ্চার বক্তব্য রাখার আহ্বান জানান। সংসদে কথা বলেই দাবি আদায় করতে হবে বলে সাংসদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন।

হাওরের ফসলহানি বিষয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, হাওর এলাকার নদীর গভীরতা কমে গেছে। নদীর নাব্যতা কমায় পানি দ্রুত হাওরে নেমে আসে। এখন নদীর গভীরতার চেয়ে হাওরের গভীরতা বেশি। হাওরাঞ্চলকে বাঁচানোর জন্য অবশ্যই সরকারকে নদী খনন করতে হবে। নদীর পানিধারণ ক্ষমতা না বাড়িয়ে বাঁধ উঁচু করলেও কোনো লাভ হবে না। ফসল রক্ষা হবে না।  তিনি ফসলহারা কৃষকের জন্য আগামী চৈত্র মাস পর্যন্ত ফেয়ারপ্রাইস মূল্যে চাল বিক্রির আহ্বান জানান। পাশাপাশি প্রতিটি ইউনিয়নে এটা চালুসহ তা বৃদ্ধির কথাও বলেন।

হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ বিষয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, “প্রতিবছর বন্যা হয়। মাটির বাঁধ ভেঙে যায়। এখন হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধের জন্য বৈজ্ঞানিক চিন্তা করতে হবে।   জিকে টেক্সটাইল দিয়ে বর্ষায় হাওরের বাঁধ ঢেকে দেওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, হাওরের তুলনামূলক নিচু জায়গায় আমি মাটির বাঁধে বিশ্বাস করি না। মাটির বাঁধে দুর্নীতি হবেই। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সচেতন মানুষ ও প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের সম্পৃক্ততা থাকার পরও কীভাবে দুর্নীতি হয়- এই প্রশ্ন রাখেন তিনি।

বর্ষায় চলাচলের জন্য বাঁধ ভাঙার সময় জনগণকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, এই সময় বাঁধরক্ষার স্বার্থে আমরা যেন ‘পাতারে’ না চলি। “প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ফেইসবুকে ছবি ছেড়ে কাজ হবে না। জনগণ এসব দেখে না। দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য মন থেকে কাজ করতে হবে। ” হওরাঞ্চলবাসীর পিছিয়ে থাকার দিকে ইঙ্গিত করে রাষ্ট্রপতি বলেন, “আমরা হাওরের মানুষ নানাভাবে বঞ্চিত। আমার কিশোরগঞ্জের সমস্যা আর সুনামগঞ্জের সমস্যা একই সমস্যা। আমি হাওরের সমস্যা বুঝি। সুনামগঞ্জের কৃষকের কান্না আমার এলাকা থেকেও শোনা যায়।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তার পৌনে এক ঘণ্টার বক্তব্যের বেশিরভাগ জুড়েই ছিল এ অঞ্চলে থেকে তার মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানের বিষয়। তিনি ৫ নম্বর সেক্টরের টেকেরঘাট ও বালাট সাব সেক্টরের নানা জায়গার স্মৃতিচারণ করেন। একাত্তরের সহযোদ্ধাদের নাম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন রাষ্ট্রপতি।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here