পহেলা বৈশাখে ধারালো দা এর উপর দাড়িয়ে শ্রষ্ঠার আরাধনামো: শহিদুল ইসলাম, বাগেরহাট প্রতিনিধি :: সনাতন ধর্ম বা নবযুগ পঞ্জিকার তিথী অনুসারে পালিত পহেলা বৈশাখে বলির খাড়া (৩ ফুট লম্বা ধারালো দা) উপর দাড়িয়ে ব্যতিক্রমধর্মী শ্রষ্ঠার আরাধনা হয়েছে বাগেরহাটে। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও গ্রামের সকলের মঙ্গল কামনায় পহেলা বৈশাখে সদরের কাড়াপাড়া ইউনিয়নের কাড়াপাড়া বাজারে ১‘শত ৫বছর ধরে ধারাবাহিক এ অনুষ্ঠান হয়ে আসছে। আর অনুষ্ঠানকে ঘিরে বর্ণ-বৈষম্য ভুলে হাজার হাজার মানুষ ভীড় করেণ বাজারে।

পহেলা বৈশাখ শনিবার পড়ন্ত বিকেলে বাজারের পাশে জমিদার বাড়ির পুকুরে (কোলকির দীঘি) রামদা নিয়ে ডুব দেয় ৩ জন যুবক। ডুব দিয়ে উঠে সিড়ির উপর দাড়িয়ে তারা খাড়ার উপর ওঠে। প্রথমে ২জন যুবক দুই হাত দিয়ে অস্ত্রটিকে ধরে এবং পরে অন্য যুবক ঐ ধারালো অস্ত্রের উপর ওঠে। ঐ অস্ত্রের উপর দাড়িয়ে পুরো বাজার ঘুরে অস্থায়ী ঠাকুর ঘরে ৭টি চক্কর দেয় তারা।

এসময় সনাতন ধর্মালম্বী সকল ভক্তরা হরি ধ্বনি ও মা বোনেদের উলুর ধ্বনি দিয়ে এই আরধ্য যুবকদের মঙ্গল কামনা করে। পরে রামদা ধুয়ে ভক্তদের পূণ্য বারী (পানি) দেন পুরোহিত। রোগ মুক্তি ও মঙ্গল কামনায় এ জল পান ও শরীরে মাখেন ছিটিয়ে দেন ভক্তরা।

ব্যতিক্রমধর্মী এ অনুষ্ঠান দেখতে আসা ষাটোর্ধ্য বৃদ্ধ গউর মন্ডল বলেন, জমিদারদের আমল থেকেই এখানে খাড়ার উপর দাড়ানো অনুষ্ঠান হয়ে আসছে। আমরা সকলে এদিন খুব আগ্রহ ভরে এটি দেখি। ভগমানের নৈকট্য লাভের জন্য প্রার্থনা করি।

৭৫ বছর বয়সী মহারাণী শিকদার বলেন, ভগমানের অনিষ্টির হাত থেকে বাচতে আমরা এ অনুষ্ঠান করে থাকি। পরিবারের সকলকে নিয়ে এ অনুষ্ঠানে আসি। খাড়া ধোয়া পানি ব্যবহার করি। শ্রাবনি দাস (২৩) বলেন, কখন হবে খাড়ার উপর দাড়ানো উৎসব সে অপেক্ষায় থাকি সারা বছর। উৎসব হলেই চলে আসি বাজারে। খাড়ার উপর দাড়ানো দৃশ্য উপভোগ শেষে সকল অমঙ্গল থেকে মুক্তির আশায় খাড়া ধোয়া জল আমরা শরীরে মাখি।

খাড়ার উপর দাড়ানো যুবক সাগর সাহা (৪০) বলেন, ১০৫ বছর ধরে আমাদের গ্রামে এ উৎসব চলছে। আমি ২৮ বছর ধরে নিয়মিত খাড়ার উপর দাড়িয়ে আসছি। গ্রামের সকলের মঙ্গল কামনায় আমাদের এ আয়োজন।

এ উৎসবের পুরোহিত বিলেশ্বর চক্রবর্তী (৮১) জানান, গ্রামের মঙ্গল কামনায় ১০৫ বছর ধরে একই সাথে চরক পূজা ও নীল পূজা হয়ে আসছে। আমরা ভগমানের কৃপা লাভের আশায় এ পূজা করে থাকি॥

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here