মুফতি আহমদুল্লাহ :: আল্লাহ তা’আলা কুরআনের একাধিক জায়গায় মক্কাকে ‘নিরাপদ’ ঘোষণা দিয়েছেন। তবে কেন মক্কায় দুর্ঘটনা ঘটে এবং হতাহতের সংবাদ আসে? সম্প্রতি ক্রেন ভেঙ্গে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার পর এই প্রশ্নটি হয়তো বহু মানুষের মনেই জাগ্রত হয়েছে।
সুরাতু আলে ইমরানের ৯৭ নং আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেছেন –‘যে ব্যক্তি সেখানে (মক্কার হারাম) প্রবেশ করেছে, সে নিরাপত্তা লাভ করেছে’। সুরাতুল আনকাবুতের (আয়াত নং ৬৭) আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন-‘তারা কি দেখে না যে, আমি (মক্কা নগরীকে) একটি নিরাপদ আশ্রয়স্থল করেছি। অথচ এর চতুপার্শ্বে যারা আছে, তাদের উপর আক্রমণ করা হয়’। সুরা তীনে আল্লাহ তা’আলা মক্কাকে নিরাপদ শহর হিসেবে অভিহিত করেছেন। সুরাতুল বাকারায় (আয়াত ১২৫) আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন-‘আর স্মরণ করো তখনকার কথা যখন আমি এই গৃহকে (কা’বা) লোকদের জন্য কেন্দ্র ও নিরাপত্তাস্থল গণ্য করেছিরাম’।
কুরআনে বর্ণিত উপরোল্লেখিত মক্কা ও মক্কার মসজিদকে ‘নিরাপদ’ বলে আখ্যায়িত করার বিখ্যাত কয়েকটি ব্যখ্যা নিন্মরূপ-
(১) আয়াতে উল্লেখিত নিরাপত্তা বলতে জাহেলী যুগের নিরাপত্তার কথা বুঝানো হয়েছে। তখন হারামে কেউ প্রবেশ করলে আর তাকে কেউ কোন ধরণের আক্রমন করতো না। অনেকে সাধারণ অর্থে হারামে প্রবেশকারীর নিরাপদ থাকার অর্থ করেছেন। অর্থাৎ হারামকে আল্লাহ তা’আলা এতোটা মর্যাদা ও গম্ভীরতা দান করেছেন যে, কোন খুনির কাছ থেকেও কেউ সেখানে খুনের বদলা নিয়ে নিজের হাত রক্তে রাঙ্গাতে চায় না।
(২)হারাম শরীফের নিরাপত্তার মানে হলো, মানুষের গুনাহের ফলে আল্লাহ প্রদত্ত যে আযাব-গজব নাজিল হয়ে থাকে, তা থেকে মক্কার এই মসজিদ নিরাপদ থাকবে। (এই দু’টি ব্যখ্যা ইমাম তাবারীর তাফসীর গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে।) যেমনটি (সুরাতুল বাকারা ১২৬ নং আয়াতে)ইব্রাহীম আ: দু’আ করেছিলেন।
(৩)পৃথিবির কোন শহর ও জনপদ দাজ্জালের ফিতনা থেকে নিরাপদ থাকবে না। কিন্তু মক্কা (এবং মদীনা) নগরীতে সে প্রবেশ করতে পারবে না। এমর্মে সহীহ বোখারী ও মুসলিমে একাধিক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। এর আলোকে অনেক মুফাসসির বলেন-মক্কা ও তাতে প্রবেশ কারীর নিরাপত্তা বলতে মনবিতিহাসের সবচে বড় ফিতনা দাজ্জালের ফিতনা থেকে নিরাপদ থাকার কথা ইঙ্গিত করা হয়েছে।
(৪) অনেকের মতে, এখানে ‘সংবাদ সূচক শব্দ’ ব্যবহার করা হলেও উদ্দেশ্য নির্দেশ জারি করা। যা কুরআনের বহুল প্রচলিত ও প্রশিদ্ধ একটি পদ্ধতি। উদ্দেশ্য হলো, সাশকগণ যেন হারামে প্রবেশকারীদের কোন প্রকার অনিষ্ট সাধন না করেন, বরং তাদের নিরাপত্তা বিধান করেন। ইমাম জাসসাস সহ অনেকেই এমনটি ইঙ্গিত করেছেন।
(৫) অনেকে বলেছেন, মক্কার হারামে প্রবেশকারীকে নিরাপদ বলার অর্থ হলো, সেখানে কোনরূপ দণ্ড বাস্তবায়ন চলবে না। সুতরাং সেখানে কোন খুনী বা কাফেরকে হত্যা করা যাবে না, চোরের হাত কাটা যাবে না ইত্যাদি।
মোদ্দাকথা হলো, নিরাপত্তা’র ব্যখ্যায় আজো পর্যন্ত কোন তাফসীরবেত্তা এ কথা বলেন নি যে, মক্কা ও হারামের নিরাপদ হওয়ার অর্থ-‘মক্কায় মনুষ্যসৃষ্ট কিংবা প্রাকৃতিক কোন দুর্ঘটনা ঘটবে না’। বরং অন্য দশটি শহরের মতো মক্কাতেও এসব ঘটনা ঘটতে পারে। সুতরাং সে সবের সাথে কুরআনে বর্ণিত নিরাপত্তার ঘোষণার কোন সাংঘর্ষিকতা নাই।