বাজেটে নারীর জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দাবী: নারীদের নিয়ে বিএনপিএস‘র সেমিনার অনুষ্ঠিতঢাকা :: রবিবার (৩ জুন) বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস)-এর উদ্যোগে ‘নারীর প্রতি অসমতা দূরীকরণের প্রশ্নে নীতি, আইন ও বাজেট’ শীর্ষক এক সেমিনার সিরডাপ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়।

বিএনপিএস-এর নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীরের সভাপ্রধানত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ড. সালাহউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি বিএনপিএস-এর পক্ষে ড. সালাহউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে নীতি ও আইন বিষয়ক একটি গবেষণা পরিচালনা করেন। সেমিনারে উপস্থাপিত তথ্য ওই গবেষণারই সারসংক্ষেপ।

ড. সালাহউদ্দিন বলেন, এটা সর্বজনস্বীকৃত যে, নারীর অবস্থা ও অবস্থানের উন্নয়ন এবং নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিসহ প্রয়োজনীয় প্রায় সমস্ত নীতি ও বিধিবিধান প্রণীত হয়েছে। পাশাপাশি একই লক্ষ্যে প্রণীত অনেক আন্তর্জাতিক সনদ ও দলিলেও বাংলাদেশ স্বাক্ষর করেছে। এসব নীতি ও দলিলের শর্তাদি বাস্তবায়নের জন্য প্রণীত ও গৃহীত হয়েছে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও রূপকল্প ২০২১। এসব নীতি বাস্তবায়নের লক্ষেই গত কয়েক বছর ধরে জাতীয় বাজেটে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের জেন্ডার বাজেটও ঘোষিত হয়েছে ও সে অনুযায়ী কার্যক্রম বাস্তবায়িত হয়েছে ও হচ্ছে। কিন্তু জেন্ডার বাজেটের আওতায় কিছু কিছু মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ নারীর ক্ষমতায়নের অভীষ্টের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ নয়; যেমন ধর্ম মন্ত্রণালয়ে যেখানে নারীর জন্য উঁচু বরাদ্দ রাখা হয়েছে, সেখানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নারীর জন্য বরাদ্দ যৎসামান্য।

উক্ত সেমিনারে প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা, অর্থনীতিবিদ ও গবেষক ড. প্রতিমা পাল-মজুমদার, বিআইডিএস-এর সিনিয়র রিচার্স ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক শরমিন্দ নিলোর্মী। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব নাজমা মোবারেক এবং পরিকল্পনা কমিশনের উপ-প্রধান প্রদীপ কুমার মহোত্তম।

সূচনা বক্তব্যে রোকেয়া কবীর বলেন, বৈষম্যহীনতা মুক্তিযুদ্ধের একটি অঙ্গীকার, যা বাংলাদেশের সংবিধান কর্তৃক বিধিবদ্ধ। এটা জেন্ডার বাজেটের আদর্শিক দিক। আর অর্থনৈতিক ও বাস্তব দিক হচ্ছে জনসংখ্যার ৫০ ভাগ নারীকে সমান সক্রিয় নাগরিক ও দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে ওঠার সমসুযোগ দেওয়া। কাজেই বাজেটকে আরও জেন্ডার সংবেদনশীল করার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের মধ্যকার বৈষম্য কমিয়ে আনার জন্য বাজেটে সুনির্দিষ্টভাবে বরাদ্দ রাখা এবং বাজেট প্রণয়নে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা দরকার।

ড. সায়মা হক বিদিশা গবেষণার প্রয়োজনে লিঙ্গবিভাজিত তথ্য-উপাত্তের সংকটের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে বলেন, এই গবেষণার তথ্য খুবই কাজে লাগবে। তিনি বলেন, নারী বিষয়ক তথ্য আহরণের জন্য খানা জরিপের যে প্রবণতা ব্যাপকভাবে প্রচলিত, তাতে নারীর প্রকৃত চিত্র উঠে আসে না। কারণ সামাজিক নানা প্রথা ও সংস্কারের ফলে তার পুষ্টিহীনতা ও অন্যান্য বিপন্নতার চিত্র কেবল খানা জরিপ দিয়ে বোঝা যায় না।

ড. নাজনীন আহম্মেদ তাঁর বক্তব্যে কর্মপরিকল্পনার সংখ্যাগত অর্জনে বেশি মনোযোগ দেওয়ার সমালোচনা করে গুণগত অর্জনের ওপর জোরারোপ করেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের জেন্ডার বাজেটের যে নির্দেশক নির্ধারণ করা হয়, কার্যক্রম বাস্তবায়নে তার প্রতি মনোযোগ দেওয়া হলে কাজের গুণগত মান অর্জন সম্ভব।

অধ্যাপক শরমিন্দ নিলোর্মী বলেন, শুধু বাজেটে বরাদ্দ বা নীতি তৈরি করলেই হবে না। এক্ষেত্রে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর অবদানের স্বীকুতি জিডিপিতে কাউন্ট করতে হবে এবং মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।

ড. প্রতিমা পাল-মজুমদার বলেন, উন্নয়ন বাজেটে নারীর জন্য বরাদ্দ না বাড়ালে নারী উন্নয়ন নীতি বাস্তবায়নের জন্য প্রণীত জাতীয় কর্মপরিকল্পনার অনেক উদ্দেশ্যই বাস্তবায়ন সম্ভব করা হবে না। নারীর জন্য জেন্ডার সংবেদনশীল পরিবেশ নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক অঙ্গীকার অত্যন্ত জরুরি।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের যুগ্ম সচিব নাজমা মোবারক বলেন, সরকার নতুন করে বাজেট নির্মাণের কৌশল ঠিক করছে। প্রচলিত ব্যবস্থায় নারীদের জন্য পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্ধ হয় না। আবার যেটুকু বাজেট বরাদ্ধ হয় তাও সময়মতো নারীরা পান না। এক্ষেত্রে প্রচলিত অসঙ্গতি দূর করার জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, নীতি-নির্ধারণের ক্ষেত্রে নারীদের আরো অংশগ্রহণ আবশ্যক।

প্লানিং কমিশনের উপ-প্রধান প্রদীপ কুমার মহোত্তম বলেন, আমাদের দেশে বাজেট করার ক্ষেত্রে কিছু অসঙ্গতি রয়ে গেছে। এক্ষেত্রে ঘাটতিগুলো চিহ্নিত করে আমাদের নতুন করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। জেন্ডার বাজেটকে উন্নয়নের কৌশল হিসেবে সরকার গ্রহণ করেছে।

ঢাকা জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা আয়েশা সিদ্দিকী নার্গিস বলেন, দেশে নারীরা সারাদিন কর্মব্যস্ত থাকলেও সেগুলোর কোনো হিসাব জাতীয় বাজেটে আসে না। বাজেট বরাদ্ধের ক্ষেত্রে নারীবান্ধব পরিবেশ বিবেচনায় রাখতে হবে। বাজেটের মধ্য দিয়ে মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটছে কি না সে বিষয়ে লক্ষ রাখতে হবে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত নারী আসন ১-এর কাউন্সিলর ফাতেমা আক্তার ডলি বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হলেও শুধু নারী হবার কারণে নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করতে হয়। নির্বাচিত নারী জনপ্রতিনিধিদের জন্য অপ্রতুল বাজেট বরাদ্দ করা হয়।

সেমিনারে আরো বক্তব্য রাখেন ঢাকা জেলার মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা আয়শা সিদ্দিকী নার্গিস, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ফাতেমা আক্তার ডলি, কেয়ার বাংলাদেশ প্রতিনিধি নাদেরা খানম, আজমল হোসেন, নাজনীন পাপ্পু, জিআইজেড প্রতিনিধি রিয়াজুল হক, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেলের কর্মকর্তা হালিমা বেগম, হেলেন লুৎফুন্নেসা, চঞ্চনা চাকমা, নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক পারভীন সুলতানা ঝুমা প্রমুখ।-প্রেস বিজ্ঞপ্তি

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here