রায়পুর মৎস্য প্রজনন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রজহিরুল ইসলাম শিবলু, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি:: এক সময়ে দেশের ৫০ ভাগ মৎস্য রেণু ও পোনা উৎপাদন করা রায়পুরের মৎস্য প্রজনন কেন্দ্রটি এখন নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত। লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায় সরকারীভাবে ৫৪ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত এই মৎস্য প্রজনন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি। বর্তমানে জনবল সংকটে মূখ থুবড়ে পড়েছে সরকারী এ প্রতিষ্ঠানটি।

গত কয়েক বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটিতে বিদ্যুৎ ও পানি সংকট চরমে। এ কারণে মাছ চাষীদের চাহিদার ৩০ ভাগ রেণু ও পোনা প্রজনন কেন্দ্র হতে সরবরাহ করা যাচ্ছে না। মার্চ থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত রেণু ও পোনা উৎপাদনের মৌসুম হলেও বিরাজমান সমস্যার কারণে প্রজনন কেন্দ্রে মৎস্য রেণু ও পোনা উৎপাদন মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। বর্তমানে প্রজনন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ৮১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর ৫১টি পদই রয়েছে শূন্য।

জানা যায়, চাঁদপুর সেচ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পাধীন ২ হাজার ৪২৮ হেক্টর আয়তনের বদ্ধ জলাশয়, ২ হাজার হেক্টর আয়তনের নদী, বোরপীট খাল ও প্রধান খাল সমূহে রুই জাতীয় মাছের রেণু ও পোনা সরবরাহ করে মাছের উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে ৫৪ একর জমির ওপর ১৯৭৯ সালে মৎস্য প্রজনন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কাজ শুরু হয়।

১৯৮১ সালের দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। এখানকার রেণু পোনা মান-সম্পন্ন হওয়ায় সারা দেশে অল্প সময়ে এটি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে। তখন এটি এশিয়ার বৃহত্তম হ্যাচারি হিসাবে পরিচিতি পায়। এ ছাড়া দেশের মৎস্যচাষীদের রেণু পোনা সরবরাহের পাশাপাশি এ কেন্দ্রে উৎপাদিত পোনা মাছ বিদেশেও রপ্তানী করা হয়েছে। ২০১৩ সালের ২০ জুলাই তৎকালীন শ্রীলংকার রাষ্ট্রদূত সারাত কে ওয়েরাগোডা সরেজিমনে রায়পুর মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র পরিদর্শন করে নিজ দেশে এখান থেকে পোনা মাছ নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। পরে ২০১৩ সালের ৫ আগষ্ট এ কেন্দ্র হতে ৪ হাজার কাতল মাছের পোনা শ্রীলংকায় প্রেরণ করা হয়।

বর্তমানে লো-ভোল্টেজের কারণে গভীর নলকূপ দু’টি দিয়েও প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানি উঠানো যাচ্ছে না। মাছ রাখার পুকুরে পানির অভাবে এ বছর ৭/৮ কেজি ওজনের শতাধিক ডিমওয়ালা মাছ (ব্রুড ফিস) মারা যায়। পার্শ্ববর্তী খালের দূষিত পানি এনে পুকুর ও হ্যাচারী ভবনে ব্যবহার করতে হয়। দূষিত পানির কারণে অনেক সময় উৎপাদিত রেণুর মান ঠিক রাখা যায় না।

এতে অনেক রেণু নষ্ট হয়ে যায়। প্রজনন কেন্দ্রে বছরে মাছ চাষীদের মৎস্য রেণুর চাহিদা অনুযায়ী রেণু উৎপাদন না হওয়ায় দূর দূরান্ত হতে আগত অনেক মৎস্য চাষীকে রেণু না পেয়ে খালি হাতে ফিরে যেতে হচ্ছে। প্রজনন কেন্দ্রে কৃত্রিম উপায়ে কাতল, রুই, মৃগেল, কালিবাউস, গ্রাসকার্প, সিলভার কার্প, থাই সরপুঁটি, কমনকার্প, তেলাপিয়াসহ বিভিন্ন মাছের রেণু ও পোনা উৎপাদিত হয়।

মৎস্য চাষীরা জানান, বেসরকারী হ্যাচারি গুলোর পোনার মান নিয়ে প্রশ্ন আছে। এ জন্য সবাই ঝুঁকছে সরকারী হ্যাচারির দিকে। কর্তৃপক্ষ নজর দিলে এ হ্যাচারির বিপুল সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে। লোকবল বৃদ্ধি করে এ প্রজনন কেন্দ্রে রেণু ও পোনা উৎপাদন করা হলে দেশে উন্নতমানের মাছ উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।

কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এখানে ৮১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে কর্মরত আছেন মাত্র ৩০ জন। তাদের মধ্যে ২জন ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, ৬জন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও ১জন প্রশাসনিক কর্মকর্তার পদ আছে। কিন’ কর্মরত আছেন মাত্র দুজন। এছাড়াও রেণু-পোনা উৎপাদনের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত মৎস্য সমপ্রসারণ সুপারভাইজার ৬টি পদের মধ্যে ৩টি, ফিশারম্যান ৮টির মধ্যে ৪টি ও হ্যাচারি গার্ড ৮টির মধ্যে ৪টি পদ শূন্য রয়েছে।

এছাড়াও কর্মকর্তাদের জন্য ৭টি আবাসিক ভবন রয়েছে। লোকবল না থাকায় চারতলা ১টি ও একতলা ৩টি ভবন পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে আছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেগুলোও জরাজীর্ণ হয়ে গেছে।

রায়পুর মৎস্য প্রজনন কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. ওয়াহিদুর রহমান মজুমদার বলেন, লোকবল, বিদ্যুৎ ও পানি সংকট কাটিয়ে উঠতে পারলে চাহিদার অতিরিক্ত রেণু উৎপাদন করা যেত। প্রজনন কেন্দ্রের সমস্যাগুলো লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here