নওয়াজ শরিফডেস্ক নিউজ :: পাকিস্তানে দুর্নীতির দায়ে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে আজীবন নির্বাচনের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করেছেন সুপ্রিমকোর্ট।

শুক্রবার দেশটির বিচারপতি আসিফ সাঈদ খোসার নেতৃত্বাধীন সুপ্রিমকোর্টের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ সর্বসম্মতভাবে এ রায় দেন।

এর মধ্য দিয়ে নওয়াজ শরিফের আর কখনও পাকিস্তানের কোনো রাষ্ট্রীয় পদে ফিরে আসতে না পারার বিষয়ে অস্পষ্টতা দূর হয়ে গেল। খবর ডন অনলাইনের।

পাকিস্তানের সর্বোচ্চ আদালতের এ রায় ঘোষণার পর নওয়াজ আর কখনও নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। চলতি বছর শেষে দেশটিতে পার্লামেন্ট নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।

গত বছরের ২৮ জুলাই পানামা পেপারস কেলেঙ্কারি মামলায় পাকিস্তানেরে হাইকোর্ট সংবিধানের ৬২ ধারা অনুযায়ী নওয়াজকে প্রধানমন্ত্রী পদে অযোগ্য ঘোষণা করলে তিনি পদত্যাগে বাধ্য হন।

ডন নিউজ টিভি জানিয়েছে, সংবিধানের ৬২(১)(এফ) ধারায় বলা আছে- একজন পার্লামেন্ট সদস্যকে অবশ্যই সাদিক ও আমিন হতে হবে। অর্থাৎ সৎ ও ন্যায়সঙ্গত জীবনযাপনের অধিকারী হতে হবে।

একই ধারায় গত বছরের ডিসেম্বরে দেশটির তেহরিক-ই-ইনসাফ পাকিস্তানের নেতা জাহাঙ্গীর তারিনকে অযোগ্য ঘোষণা করেছিলেন সর্বোচ্চ আদালতের আরেকটি বেঞ্চ।

নওয়াজ শরিফ ও তারিন দেশটির সরকারি কোনো দফতরের পদে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছেন।

আজ শুক্রবার বিচারপতি উমর আতা বন্দিয়াল রায়টি পড়ে শোনান। সংবিধানের এ ধারায় যদি কোনো ব্যক্তি পার্লামেন্ট কিংবা সরকারি দফতরে অযোগ্য ঘোষিত হন, তা হলে ভবিষ্যতে তিনি কখনই ওই পদে আসতে পারবেন না।

এ ধরনের ব্যক্তিরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কিংবা পার্লামেন্ট সদস্য হতে পারবেন না।

রায়ের আগে প্রধান বিচারপতি মিয়া সাকিব নিসার বলেন, নেতাদের অবশ্যই ভালো চরিত্রের অধিকারী হতে হবে।

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মাজহার আব্বাস বলেন, এই রায়ের মধ্যে রাজনৈতিক উপলক্ষ রয়েছে।

তিনি বলেন, নওয়াজ শরিফের রাজনৈতিক ভাষ্য আরও জ্বলন্ত হয়ে উঠবে। শাহবাজ শরিফ তার ভাইয়ের পথ থেকে ভিন্ন দিকে যেতে পারবেন না। এটি তার জন্য আরও কঠিন হয়ে উঠবে।

পিপিএল নেতা খুরশেদ শাহ সাংবাদিকদের বলেন, সংবিধান মোতাবেকই সর্বোচ্চ আদালত আজ রায় দিয়েছে। নওয়াজ শরিফ নিজেও ৬২ ধারা সমর্থন করেছেন। তাকে বলা হয়েছিল, যাতে ধারাটি উঠিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু তা করতে অস্বীকার জানিয়েছেন। এখন তিনি নিজেই সেই ফাঁদে পড়েছেন।

খুরশেদ শাহ বলেন, সংবিধানের অষ্টাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এ ধারা উঠিয়ে দেয়া উচিত ছিল। কিন্তু নওয়াজ শরিফ তখন তাতে রাজি ছিলেন না।

পাঁচ বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে বিচারপতি খোসা ছাড়াও অন্যরা হলেন- বিচারপতি শেখ আজমত সাঈদ, বিচারপতি উমর আতা বন্দিয়াল, বিচারপতি ইজাজুল আহসান ও বিচারপতি সাজ্জাদ আলী শাহ।

শুনানিতে দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল আশতার আউসাফ বেঞ্চকে বলেন, সংবিধানের ৬২ ধারা অনুসারে কাউকে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করা আদালতের দায়িত্ব না। বরং এটি পার্লামেন্টের হাতে ছেড়ে দেয়াই ভালো হবে।

তিনি আরও বলেন, সংবিধানে এটি বলা নেই যে, কতদিনের জন্য নিষিদ্ধ করতে হবে। বরং মামলা অনুসারে তাদের সেটি বিচার করা উচিত।

কতদিনের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করা যাবে, সংবিধানে তা বলা না থাকলেও সাবেক প্রধান বিচারপতি ইফতিখার মোহাম্মদ চৌধুরী ২০১৩ সালে আবদুল গফুর চৌধুরীর মামলায় সংবিধানের ৬৩ ধারা অনুসরণ করেছিলেন।

সেখানে কোনো ব্যক্তিকে সাময়িকভাবে অযোগ্য ঘোষণা করা গেলেও একটা নির্দিষ্ট সময় পর তিনি যোগ্য হয়ে যাবেন। কিন্তু ৬২ ধারা অনুসারে কাউকে নিষিদ্ধ করা হলে সেটি আজীবনের জন্য হবে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি ২০১২ সালের ১৯ জুন আদালত অবমাননা মামলায় পার্লামেন্টে অযোগ্য ঘোষিত হয়েছিলেন।

নৈতিক স্খলনের দায়ে তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল সংবিধানের ৬৩ ধারায়, যাতে তার অযোগ্যতার সময়সীমা পাঁচ বছরের জন্য নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছিল।

ক্ষমতাসীন পিএমএল-এন প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, এটি গণতন্ত্রের প্রতি আঘাত। তারা একজন ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রীকে অযোগ্য ঘোষণা করেছেন। অথচ বিচার এখনও চলছে। এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

দেশটির তথ্যপ্রতিমন্ত্রী মারিয়াম আওরঙ্গজেব বলেন, গণতন্ত্রের জন্য লড়ছে পাকিস্তান। নওয়াজ শরিফ এটিকে চূড়ান্ত সমাধানে নিয়ে যাবেন।

দেশটির গণতন্ত্রে ব্যাপক উত্থানপতন রয়েছে। ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জনের ৭০ বছরের মধ্যে অর্ধেকটা সময় সামরিক শাসন জারি ছিল।

এর আগে নব্বইয়ের দশকে নওয়াজ শরিফ আরও দুবার ক্ষমতা থেকে অপসারিত হয়েছেন। প্রথমবার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে আর দ্বিতীয়বার সাবেক সেনাপ্রধান পারভেজ মোশাররফ অভ্যুত্থান ঘটিয়ে তাকে সরিয়ে দেন।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here