স্বামীর অকাল মৃত্যুর পর একটি চাকুরীর আশায়  বার বার কর্তপক্ষের দ্বারে দ্বারে ধন্যা দিয়েও একটি চাকুরী না পেয়ে নওগাঁয় এক চতুর্থ শ্রেনীর সরকারী কর্মচারীর পরিবার অনাহারে অর্ধাহারে মানবেতর জীবনযাপন করছে। সংসারের খরচ, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া এবং বাড়িভাড়া ইত্যাদি ব্যয় নির্বাহ করতে না পেরে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ঐ কর্মচারীর বিধবা স্ত্রী সেলিনা বেগম।

নওগাঁ জেলা মৎস্য কর্মকর্তার অফিসে এম এল এস এস পদে চাকুরী করতেন লুৎফর রহমান খান। ২০০৩ সালের ১৭ মার্চ হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তাঁর মৃত্যু ঘটে। অফিসের কাজকর্ম ছাড়াও তৎকালীন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা  আখতার হোসেনের বাসায় অমানষিক পরিশ্রম করতে হতো তাকে। এমনিতেই তিনি হার্চ সম্পর্কিত রোগে ভুগছিলেন। এই পরিশ্রম সহ্য করতে না পেরে অফিসের একটি কক্ষে বসবাসরত মৎস্য কর্মকর্তার ফাইফরমাশ খাটতে খাটতেই  তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। অতি চালাক মৎস্য কর্মকর্তা সাথে সাথে তাকে হাসপাতালে প্রেরন করলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন।

পরবর্তীতে ঐ রাতেই অফিসের গাড়িতে করে গোসল বিহীন লাশ পাবনা শহওে তার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। স্বামীর মৃত্যুও পর দিশেহারা হয়ে পড়েন স্ত্রী সেলিনা বেগম। কি করবেন কোথায় যাবেন তা নিয়ে বিপাকে পড়ে যান। শেষ পর্যন্ত মৎস্য কর্মকর্তা কর্তৃক চাকুরী পওয়ার আশ্বাস পেয়ে দাফন কাফনের পর তার স্ত্রী সেলিনা বেগম এক ছেলে এক মেয়েকে সাথে নিয়ে ফিরে আসেন নওগাঁয়।

অফিসের প্রকল্পের আওতায় মাষ্টাররোল ভিত্তিতে সেলিনা বেগমকে চাকুরী দেয়াও হয়। এর মধ্যে তাকে নিয়মিত চাকুরী প্রদানের আশ্বাসও প্রদান করা হয়। কারন প্রকল্প ক্ষনস্থায়ী। এই আশ্বাসের ভিত্তিতে তৎকালীন মৎস্য কর্মকর্তা লুৎফর রহমানের পেনশনের টাকা থেকে ১ লাখ টাকা কেটেও রাখেন। পরবর্তীতে প্রধান দপ্তরের মধ্যস্থতায় অনেক পরে সে টাকা অবশ্য ফেরৎ নেয়া হয়।

বর্তমানে তার কোন কাজ নাই। নিয়মিত চাকুরীর আশায় প্রকল্প না থাকলেও অফিসে শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। ইতমধ্যে কয়েকবার ঐ অফিসে কর্মচারী নিয়োগ হয়েছে। সেলিনা বেগম আবদেন করেছেন। পর পর ৩ বার নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন। কিন্তু প্রয়াত কর্মচারীর স্ত্রী হিসাবে মানবিক কারনে চাকুরীর প্রত্যাশা করলেও তা পুরন হয় নি। এখনও মাঝে মাঝেই অফিসে একটি কাজের জন্য ধন্যা দিয়ে বেড়াচ্ছেন। শুধু ২টি সন্তান নিয়ে দুবেলা দু’মুঠো ভাত খেয়ে বেঁচে থাকার আশায়।

বিধবা সেলিনা বেগমের একমাত্র পুত্র অনিক খান অনু এ বছর নওগাঁ জেলা স্কুল থেকে জিপিএ-৫ গ্রেডে এসএসসি পাশ করেছে। এসএসসি পরীক্ষার ফি কষ্ট করে সংগ্রহ করতে হয়েছে। মেধাবী ছাত্র হিসাবে অনেক উচ্চ পর্যায়ে লেখাপড়া করার সুযোগ থাকলেও কেবলমাত্র অর্থের অভাবে স্থানীয় কারিগরি স্কুল ও কলেজে ভর্তি হয়েছে।

তাদের একমাত্র কন্যা সন্তান রুমি আকতার ৫ম শ্রেনীতে পড়াশুনা করছে। ছেলে মেয়েদের লেখাপড়াসহ সংসারের অন্যান্য খরচ মেটানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাই তাদের আকুল আবেদন অন্ততপক্ষে একটি চাকুরীর ব্যবস্থা কওে সংসারটিকে নিশ্চিত ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/তন্ময় ভৌমিক/নওগাঁ

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here