অনিমেষ চৌহানঅনিমেষ চৌহান :: প্রধানমন্ত্রী যতবারই লন্ডনে এসেছেন, ততবারই বিএনপির যুক্তরাজ্য ইউনিট বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। তবে এবার তারা আন্দোলনে নতুন মাত্রা হিসেবে যোগ করেছেন ভ্রাম্যমান বিলবোর্ড লাগানো ভ্যান। সম্প্রতি কমনওয়েলথের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সরকার প্রধানদের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিতে লন্ডনে অবস্থান করা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্বে বিলবোর্ড লাগানো এই ভ্যানগুলো লন্ডনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাস্থায় প্রদক্ষিণ করছে। বাংলাদেশি মিছিলের আদলে লন্ডনের কয়েক কিলোমিটার সড়ক মিছিল করে যুক্তরাজ্য বিএনপি।

যুক্তরাজ্যে বিদেশি রাজনৈতিক বিরোধ নিয়ে এমন মিছিল বিরল। সম্মেলনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৬ এপ্রিল মধ্যরাতে সৌদিআরব থেকে সরাসরি লন্ডনে পৌঁছান। ২২ এপ্রিল ঢাকার উদ্দেশ্যে লন্ডন ত্যাগ করেন।

দেশের মাটিতে বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী নিষ্ক্রিয় হলেও বিদেশের মাটিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে চলছে। বিভিন্ন বাধা-নিষেধ উপেক্ষা করে বিএনপির যুক্তরাজ্য ইউনিট কাজ করে যাচ্ছে। দলটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব তারেক রহমানের পাশে অতন্দ্র প্রহরীর মতো ভূমিকা পালন করছেন সেখানকার নেতাকর্মীরা।দেশের মাটিতে খালেদা জিয়ার পাশে নেতাকর্মীদের এমন ত্যাগ থাকলে আন্দোলনের ফলাফলে ভিন্নমাত্রা যোগ হতো বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

বিদেশের মাঠিতে নিজ দেশের প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে বিএনপির কর্মসূচি দীর্ঘদিন যাবত অব্যাহত রয়েছে। এ ধরনের কর্মসূচি দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে বলে অভিযোগ আওয়ামীলীগের। তবে বিষয়টিকে সে ভাবে দেখছেন না যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমদ। তিনি বলেন, ‘ক্ষুন্ন করতে নয় বরং দেশের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতেই আমাদের এই কর্মসূচি। প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কর্মসূচি দিয়ে এটা বোঝাতে চাই যে, দেশে বিপক্ষ দলের নেতাকর্মীদের ওপর অন্যায় ও জুলুম অব্যাহত রয়েছে। এর সমাধান হওয়া দরকার।’

বিএনপির যুক্তরাজ্য ইউনিটের এ নেতা বলেন, ‘প্রায় দশটি ভ্রাম্যমাণ বিলবোর্ড ভ্যান খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবী ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বার্তা নিয়ে তাদের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছে। শেখ হাসিনা লন্ডনে আসলে এমন প্রতিবাদ সব সময় চলবে।’

প্রধানমন্ত্রী লন্ডনে আসার আগের দিন সোমবার থেকেই বিক্ষোভ শুরু করে বিএনপি। ওই দিন ওয়েস্টমিনস্টার পার্লামেন্ট হাউজের বাইরে জড়ো হয়ে যুক্তরাজ্য বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যুক্তরাজ্য সফরের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকে। একই সঙ্গে ওয়েস্টমিনস্টার পার্লামেন্টের আশপাশে ঘুরে বেড়ায় বিএনপির ভ্রাম্যমাণ বিলবোর্ড। পরদিন মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনের একটি অধিবেশনে অংশ নিতে ওয়েস্টমিনস্টারের দ্বিতীয় কুইন এলিজাবেথ হলে যান। বিএনপির নেতা-কর্মীরা হলের বাইরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকেন। এরপর বিকেলে প্রধানমন্ত্রী লন্ডনের ব্ল্যাকফায়ার্সে ওভারসিস ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে যান। বিএনপির নেতা-কর্মীরা ওয়েস্টমিনস্টার থেকে মিছিলসহ সেখানে গিয়ে হাজির হন। যোগ দেয় তাঁদের ভ্রাম্যমাণ ভ্যানগুলোও।

বিএনপির এমন অভিনব শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দেশে- বিদেশে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। তবে বিএনপির এমন কর্মসূচিতে ক্ষেপেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। লন্ডনের রাস্তায় সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপির প্রতিবাদ সমাবেশের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিএনপি সন্ত্রাসীরা তারেক রহমানের নির্দেশে জাতির পিতার প্রতিকৃতিকে অসম্মান করেছে। এবং রাস্তায় দাঁড়িয়ে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে। আমি জানতে চাই তারা এই সাহস কোত্থেকে পেল?’ এ প্রসঙ্গে তিনি হাইকমিশনের ভূমিকার সমালোচনা করে বলেছেন, ‘আমি জানি না সেদিন কে হাইকমিশনের দায়িত্বে ছিলেন এবং আমার প্রশ্ন, কেন তারা সেদিন এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেননি।’

যারা বিদেশের মাটিতে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে, তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে বলে তাৎক্ষণিক এক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘যারা জাতির পিতার প্রতিকৃতি ধ্বংস করেছে, যারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে সরকার বিরোধী স্লোগান দিয়ে দেশের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন করছে তাদের শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। আমি প্রবাসী বাংলাদেশিদের বলব, আপনারা দেখেছেন, কারা জাতির পিতার প্রতিকৃতিকে অবমাননা করেছে, কারা দেশ বিরোধী স্লোগান দিচ্ছে এবং তাদের উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন প্রতিক্রিয়ায় নিজেদের আন্দোলনের সফলতা খুঁজে পেয়েছেন বিএনপির যুক্তরাজ্য ইউনিটের নেতাকর্মীরা। তাঁরা বলছেন, ‘আমাদের আন্দেলন সঠিক পথে থাকার কারণেই তা প্রধানমন্ত্রীর মনোযোগ আকর্ষণ করতে পেরেছে। ভবিষ্যতেও এমন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লন্ডন সফরকে কেন্দ্র করে সাতদিনব্যাপি প্রতিবাদী কর্মসুচিতে অংশ নেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক, সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমেদ, যুক্তরাজ্য জাসাস এর সভাপতি এমাদুর রহমান, লন্ডন মহানগর জাসাস এর সভাপতি বদরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক রাজ হাসান, সহসভাপতি তানভীর আহমেদ খান, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবুল হোসেন, ইব্রাহীম মিয়া, সাবেক ছাত্রদল নেতা ও লন্ডন প্রবাসী সোহেল শরীফ মোহাম্মদ করিম এবং যুবদলের নেতৃবৃন্দসহ বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের কয়েক’শ নেতাকর্মী। মূলত এসব নেতাদের নেতৃত্বে লন্ডনে বিএনপি একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here