টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনে অনিয়ম ও দুর্নীতি বড় বাধা: টিআইবিস্টাফ রিপোর্টার :: : টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) ১৬’র দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন বিষয়ক লক্ষ্যগুলো অর্জনে বাংলাদেশে প্রচলিত আইন, নীতি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো যথেষ্ট পরিপুষ্ট হলেও আইন এবং আইন প্রয়োগ ও চর্চায় দুর্বলতা ও ঘাটতি, আইনের অপব্যবহার এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় আইনের প্রয়োগ প্রভৃতি কারণে লক্ষ্যগুলো অর্জনে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) পরিচালিত ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ১৬: দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন সংশ্লিষ্ট লক্ষ্যের ওপর বাংলাদেশের প্রস্তুতি, বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক গবেষণায় এই পর্যবেক্ষণ উঠে এসেছে।

রবিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকালে টিআইবি’র ধানমন্ডিস্থ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে গবেষণাটির প্রতিবেদন উপস্থাপনের সময় উপস্থিত ছিলেন টিআইবি’র ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপদেষ্টা, নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের এবং গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান।

গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন টিআইবি’র গবেষণা ও পলিসি বিভাগের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাহজাদা এম আকরাম। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন গবেষণা ও পলিসি বিভাগের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. ওয়াহিদ আলম এবং এ এস এম জুয়েল মিয়া।

টেকসইউন্নয়নঅভীষ্ট (এসডিজি) ১৬’রদুর্নীতিপ্রতিরোধওসুশাসনেরসাথেপ্রত্যক্ষভাবেসংশ্লিষ্টচারটিলক্ষ্যঅর্জনেবাংলাদেশেরপ্রস্তুতি, বাস্তবতাওচ্যালেঞ্জসমূহপর্যালোচনারউদ্দেশ্যেগবেষণাটিএপ্রিল-আগস্ট২০১৭সময়েরমধ্যেপরিচালিতহয়।

গবেষণায় দেখা যায়, বিভিন্ন উদ্যোগ সত্ত্বেও বাংলাদেশে দুর্নীতি ও ঘুষ, অর্থপাচার, মৌলিক স্বাধীনতার ব্যত্যয় ও মানবাধিকার লঙ্ঘন অব্যাহত রয়েছে। জাতীয় শুদ্ধাচার কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো প্রত্যাশিত পর্যায়ে কার্যকর নয় এবং এজন্য দলীয় রাজনৈতিক প্রভাব, কেন্দ্রীভূত ক্ষমতা, নির্বাহী বিভাগ ও প্রশাসনের আধিপত্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানেই জনগণের কাছে জবাবদিহিতার কোনো কাঠামো নেই এবং এসব প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ জবাবদিহিতা ব্যবস্থাও দুর্বল। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের স্বপ্রণোদিত তথ্য প্রকাশও পর্যাপ্ত নয়।

এছাড়া, দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসনের সাথে সংশ্লিষ্ট অর্থপাচার এবং সম্পদ পুনরুদ্ধারসহ কয়েকটি বিষয়ে সরকারের কাছে আংশিক তথ্য থাকলেও দুর্নীতি ও ঘুষ, সরকারি সেবা ও প্রতিষ্ঠানের ওপর জনগণের সন্তুষ্টি এবং বিচার-বহির্ভূত হত্যাকা- বিষয়ে কোনো তথ্য নেই। সার্বিকভাবে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি)’র বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য ২৪১টি সূচকের মধ্যে সরকারের কাছে ৭০টি সূচকের ওপর সম্পূর্ণ এবং ১০৮টি সূচকের ওপর আংশিক তথ্য রয়েছে। ৬৩টি সূচকের ওপর সরকারি কোনো তথ্য নেই।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘‘সার্বিকভাবে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ১৬ এর উল্লেখিত লক্ষ্যসমূহ পূরণে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সন্তোষজনক প্রস্তুতি ও সক্ষমতা রয়েছে বলে গবেষণায় প্রতীয়মান হলেও বিদ্যমান ঘাটতিসমূহ বিবেচনায় বাস্তবায়ন অবকাঠামো ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে উদ্বেগের বিষয়গুলো নিরসনে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উদ্যোগ নিতে হবে।”

গবেষণার ফলাফল ও সুপারিশের ওপর গুরুত্বারোপ করে ড. জামান বলেন, ‘‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে সন্তোষজনক আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর পাশাপাশি সক্ষমতা ও প্রস্তুতি বিবেচনায় বাংলাদেশ সঠিক পথে রয়েছে, তবে গবেষণায় উদ্ঘাটিত ঘাটতি ও উদ্বেগের বিষয়গুলো নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হলে অভীষ্ট অর্জনের পথ থেকে ছিটকে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।”

অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, ‘‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনের লক্ষ্যে নানামুখী পরিকল্পনা ও উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও বিভিন্ন জরিপ ও তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে এর সুফল সকল ক্ষেত্রে জনগণ পর্যন্ত পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য সকল পরিকল্পনা, কার্যক্রম ও কর্মসূচীতে জনগণকে সম্পৃক্ত করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।”

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here