সব ধনী মানুষের জাকাতের টাকা দিয়ে দরিদ্র মানুষের জন্য উপার্জনমুখী উদ্যোগ নেয়া যায়। প্রত্যেকে নিজের গ্রামের দারিদ্র্য নিরসনে সম্মিলিত উদ্যোগ নেয়া গেলে জাকাতের প্রকৃত আদর্শ পরিপালন করা হবে।

এস এম মুকুল__________

বিশ্বের শীর্ষ ১০০ ধনী বছরে যে আয় করে তা দিয়ে বিশ্বের চরম দারিদ্র্য চারবার দূর করা সম্ভব। ‘দ্য কস্ট অব ইনইকোয়ালিটি : হাউ ওয়েলথ অ্যান্ড ইনকাম এক্সট্রিমস হার্ট আস অল’ শিরোনামে ব্রিটেনভিত্তিক সাহায্য সংস্থা অক্সফাম তাদের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বিশ্বের দারিদ্র্য দূর করতে যে পরিমাণ অর্থ দরকার, শীর্ষ ১০০ জন ধনীর কাছে তার চার গুণ অর্থ রয়েছে। অক্সফামের গবেষণা বলছে_ অল্প কিছুসংখ্যক লোকের সীমাহীন সম্পদ দারিদ্র্য দূরীকরণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাস্তবতাও আসলে তা-ই।
বিশ্ব নয়, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দারিদ্র্য বিমোচনে জাকাতভিত্তিক অর্থব্যবস্থার গুরুত্ব নিয়ে কিছু কথা বলার প্রয়োজন মনে করছি। আমাদের দেশে সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে অগণিত সফল ব্যবসায়ী, বিত্তবান, ধনাঢ্য, শিল্পপতি রয়েছেন যাদের কাছে কোটি কোটি টাকা এখানে সেখানে গচ্ছিত অলস অবস্থায় বছরের পর বছর পরে থাকে। সমাজের সব ধনী মানুষ যদি গরিব মানুষের কল্যাণে তাদের অর্জিত অতিরিক্ত সম্পদের ৪০ ভাগের এক ভাগ জাকাত হিসেবে ব্যয় করেন, তাহলেও দারিদ্র্য বিমোচনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। ইসলামী গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালকের একটি লেখায় উল্লেখ করা হয়েছে, সঠিকভাবে দেশের ২০ লাখ ধনীর কাছ থেকে জাকাত সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়া হলে বছরে ১০ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করা সম্ভব হতে পারে। তিনি আরো বলেছেন, দারিদ্র্য বিমোচনে গরিব ভিক্ষুুক পুনর্বাসনে জাকাত তহবিলের মাধ্যমে সঠিক পরিকল্পনা নেয়া হলে এক দশকেই দেশের দারিদ্র্যমুক্তি সম্ভব বলে অর্থনীতিবিদরাও এ বিষয়ে এখন একমত। সরকারের শত শত কোটি টাকার বাজেট থাকে দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি বাস্তবায়নে। কিন্তু জাকাতের মতো বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দিকটি আমাদের সরকার কখনো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেনি। অভিযোগ করেও অনেকে বলেন, যারা ইসলামী আদর্শ ও ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি বিশেষ সজাগ বলে দাবি করেন, ঘুরেফিরে তারাই ৩০ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকলেও দারিদ্র্য বিমোচনে জাকাতের অর্থনৈতিক কর্মসূচিকে আমলে নেননি।
আরো অভিযোগ আছে, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনাধীন সরকারের একটি অথর্ব প্রতিষ্ঠান ‘জাকাত বোর্ড’। এ বোর্ডের আসলে কাজ কী, এ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন আছে। কারণ দারিদ্র্য বিমোচনে জাকাত বোর্ডের ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়নি। জাকাত বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতেও তাদের কোনো ভূমিকা নেই। তাদের নাম শোনা যায় বিশেষ করে ঈদের চাঁদ দেখা আর রোজার মাস শুরুর সময় এলে। আমরা দেখছি_ এনবিআর ধনীদের কাছ থেকে কর আদায়ে বহুমুখী কার্যকর ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। কর প্রদানে রাষ্ট্রের উন্নয়নে সচেতনতা সৃষ্টিতেও ভূমিকা রাখে। জাকাত বোর্ড ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর আদায়ের মতো জাকাত আদায়ে কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারে। বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ বা মুসলিম দেশ। একটি মুসলিম দেশে ইসলামের বিধান অনুসারে জাকাতভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা থাকাটাই স্বাভাবিক। এখানে জাকাত আদায়ের লক্ষ্যে সক্ষম ধনীদের ওপর জরিপ পরিচালনা করে বিভাগ, জেলা ও উপজেলা ভিত্তিক জাকাত আদায় কমিটি গঠন করা যেতে পারে। তবে জাকাত নিয়ে যেন আবার জালিয়াতি না হয় সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।

লক্ষ্য করলে দেখা যায়, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, দুর্যোগ অথবা দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলে সহায়তা চাওয়া হলে দেশে বিত্তবান মানুষ সাগ্রহে এগিয়ে আসেন। তাতে মনে হয় বাংলাদেশের মানুষের মানবিক ও ধর্মীয় অনুভূতি যথেষ্ট সক্রিয়। একটি সুন্দর, পরিচ্ছন্ন নীতিমালায় স্বচ্ছতার সঙ্গে জাকাত আদায় এবং আদায়কৃত জাকাতের অর্থ ব্যবহার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে দেশের জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ সম্ভব হলে প্রতি বছর হাজার কোটি টাকা জমা হবে এ ফান্ডে। ভারতে পিস টিভি অব ইন্ডিয়া পরিচালিত হচ্ছে জাকাতের সহায়তায়। অতএব বাংলাদেশেও জাকাতভিত্তিক অর্থব্যবস্থা চালু হলে দারিদ্র্য বিমোচন, পথশিশুদের আবাসনভিত্তিক শিক্ষা, এতিমখানা, বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্র স্থাপন, ভিক্ষাবৃত্তি নির্মূল করা, বিপথগামীদের আলোকিত পথে নিয়ে আসা, মাদ্রাসা শিক্ষা, কর্মমুখী শিক্ষা, আত্মকর্মসংস্থান প্রভৃতি কার্যক্রম পরিচালিত হতে পারে। আর এসব কার্যক্রম নিজস্ব প্রচার সৃষ্টি করে যেমন পত্রিকা, চ্যানেল এসবে প্রচার করা হলে একটি ইসলামী রাষ্ট্রের আদল পরিপূর্ণ হবে। এসব করতে গেলে জাকাত বোর্ডকে আরো ক্ষমতাসীন করতে হবে।

আমাদের জানা আছে সমাজে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে অর্থনৈতিক ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে ইসলামে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআনে বিভিন্ন আয়াতে বহুবার সরাসরি জাকাতের কথা বলা হয়েছে। এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানা গেছে, শতকরা ৮৫ ভাগ মুসলমানের দেশে জাকাতভিত্তিক অর্থব্যবস্থা চালু হলে পাঁচ বছরে দারিদ্র্য অর্ধেকে নামিয়ে আনা সম্ভব। এ প্রসঙ্গে একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারে বলা হয়েছে, দেশে ৫ লাখ পরিবার রয়েছে যাদের নিজস্ব সম্পদ বলে কিছু নেই। আবার ২৭ লাখ পরিবার রয়েছে যাদের মালিকানায় সম্পদের পরিমাণ এক একরের কম। পক্ষান্তরে মাত্র ৫ শতাংশ মানুষের কাছে ভোগ-দখলের উপজীব্য হয়ে আছে ৯৫ শতাংশ সম্পদ। দেশের মোট জমির ৮০ ভাগ এই শ্রেণির দখলে! একবারও ভাবা হয় না, কী প্রয়োজন আছে এত

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here