আবহাওয়া ও জলবায়ু গত বিরূপ পরিবর্তনে গ্রামাঞ্চলের চির চেনা ঔষুধী গাছগুলো একের পর এক হারিয়ে যাচ্ছে। রোগ-শোকের সময় নিত্য ব্যবহার্য তুলশী, কালমেঘ, বাসক, গন্ধভাদালী, দুবলা, থানকনি, হাতিরশুঁড় সহ অসংখ্য ভেষজ গাছ এখন দুর্লভ ও দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় ঝিনাইদহের গ্রামাঞ্চলে তৈরী করা হয়ে বেশ কয়েকটি ভেষজ বাগান। প্রতিদিনই দুর-দুরানেত্মর মানুষ এসব বাগানে এসে ঔষুধী গাছের ফল, বাকল, পাতা সংগ্রহ করে নিচ্ছে। ঝিনাইদহ সদরের কাষ্টসাগরা গ্রামে আছে ভেষজ পাঠশালা। শৈলকুপা উপজেলা  ও সদরের ৪০ টি গ্রামে বিভিন্ন বাড়িতে ৩০ প্রজাতির প্রায় দেড় হাজার ছোট ছোট বাগান আছে।

সরজমিনে ঝিনাইদহের  ঢাকা মহসড়কের পাশে কাস্টসাগরা গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে এক একর জমির উপর গড়ে  তোলা হয়েছে এক ভেষজ পাঠশালা। এখানে আছে দুশো ৬৭ প্রজাতির ভেষজ ও ঔষধি বৃক্ষ। এ ভেষজ পাঠশালার ঔষধি গাছ গাছড়া গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়ছে।  মানুষের সাধারন অসুখের চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় সব  ঔষধি বৃক্ষের চারা রোপন করা হচ্ছে বাড়ির আঙ্গিনায় হারবাল গার্ডেন গুলোতে। স্থানীয় বে সরকারী সংগঠন উন্নয়ন ধারার উদ্যোগে গড়ে ওঠা এ কর্মসুচীতে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে এ্যাকশান এইড বাংলাদেশ ও ব্রেড ফর দ্যা ওর্য়াল্ড নামে দুটি সংস্থা।

উন্নয়নধারার নির্বাহী পরিচালক তালিব বাশার নয়ন জানান, ২০০৪ সালে ভেষজ পাঠশালা গড়ে  তোলার কাজ শুরু হয়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিলুপ্ত প্রায় সব ভেষজ ও ঔষধি গাছের চারা সংগ্রহ করে ভেষজ বাগানে লাগানো হতে থাকে। বর্তমানে ভেষজ পাঠশালায় সংগৃহীত ভেষজ ও ঔষধি গাছের প্রজাতির সংখ্যা ২শ’ ৬৭টি। কিছু দুর্লভ প্রজাতির ঔষধি গাছও আছে তাদের সংগ্রহে। এখানে চারা তৈরি করে গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে সমিতির সদস্যদের মাধ্যমে।  তাদের এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে ভেষজ উদ্ভিদ সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও সামাজিক সমপ্রসারণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা।  ভেষজ উদ্ভিদ গুলোর ঔষধি গুণাগুণ বিষয়ক তথ্য সংগ্রহ ও প্রাথমিক চিকিৎসায় ভেষজ উদ্ভিদের বিজ্ঞান ভিত্তিক চিকিৎসা প্রযুক্তির সামাজিক ব্যবহার জনপ্রিয় করে তোলা, হারবাল চিকিৎসায় ভেষজের অবৈজ্ঞানিক ও অপব্যবহার সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টিও তাদের অন্যতম উদ্দেশ্য ।

সকল ঔষধের আদি ও মুল ভিত্তি হচ্ছে ভেষজ উদ্ভিদ। আধুনিক এ্যালাপ্যাথিক ঔষধ উদ্ভিদজ দ্রব্য ও  তা থেকে নিষ্কাষিত রাষায়নিক উপাদান দিয়ে তৈরি হয়ে থাকে। বিশ্বের দেশে দেশে এক বিরাট জনগোষ্টি ভেষজ ঔষধের উপর নির্ভর করে তাদের রোগ ব্যাধির চিকিৎসা করে থাকে। এ চিকিৎসা পদ্ধতি স্বল্প ব্যয় সাপেক্ষ। আজ বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা ভেষজ চিকিৎসার স্বীকৃতি দিয়েছে।

উন্নয়নধারার এক তথ্যে বলা হয় জার্মানীর মত উন্নত দেশে ভেষজ ঔষধ উৎপাদন, উন্নয়ন ও ব্যবহারে বছরে ৪ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হয়ে থাকে।  যুক্তরাষ্ট্রে বছরে এক দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ভেষজ ঔষধ ব্যবহার হয়ে থাকে

উন্নয়নধারার ভেষজ উদ্ভিদ সমপ্রসারণ প্রকল্পের কো অর্ডিনেটর মাহাবুব জামান তপন জানান, বিশ্বে ভেষজের বিশাল বাজার রয়েছে।  বর্তমান চাহিদার পরিমান প্রায় ৬ হাজার কোটি ডলার। চীন প্রধান ভেষজ রপ্তানীকারি দেশ । বাংলাদেশি মুদ্রায় চীন বছরে ১৫ হাজার কোটি টাকা মূল্যের ভেষজ উদ্ভিদ রপ্তানী করে থাকে। বছরে ভারত ৩ হাজার কোটি ও নেপাল  ৬০ কোটি টাকা মূল্যের ভেষজ উদ্ভিদ রপ্তানী করে । এছাড়াও থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ঘানা, পাকিস্তান, তানজানিয়া, নাইজেরিয়া, ইরান ও শ্রীলংকা অন্যতম ভেষজ রপ্তানী কারক দেশ।

উন্নয়ন ধারার কর্মকর্তা  মাহাবুব জামান তপন ভেষজ পাঠশালা প্রসঙ্গে জানান, তারা শৈলকুপা ও ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ৪০টি গ্রামে এ পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার বাড়িতে ছোট ছোট হারবাল গাডের্ন তৈরি করে দিয়েছে। তারা তাদের গ্রূপ মিটিং এ বিভিন্ন ভেষজ ও ঔষধি  গাছের পরিচয় করিয়ে দেয় সদস্যদেরকে। কোন গাছের কি গুণ এবং কোন অসুখে খেতে হয় তা জানিয়ে দেওয়া হয় বলে তিনি জানান।

জলবায়ু বা আবহাওয়া পরিবর্তন সসম্পর্কে কিছুই জানেন না শৈলকুপা উপজেলার ভাটই গ্রামের আলোমতি বিশ্বাস। তবে দিনে দিনে তার এলাকার সব ঔষধী গাছ-গাছড়া হারিয়ে যাচ্ছে এটা ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছেন। তাই নিজ বাড়িতে একটি ভেষজ ও ঔষধি বৃক্ষের বাগান গড়ে তুলেছেন। তার বাগানে প্রায় ৩০ প্রজাতির ঔষদি গুল্ম ও বৃক্ষ আছে।  প্রাথমিক রোগ ব্যাধি চিকিৎসায় নিজ পরিবার ও প্রতিবেশিরা ব্যবহার করে থাকে।  তিনি জানান, তুলশী, কালমেঘ, বাসক, গন্ধভাদালী গাছের পাতার চাহিদা বেশি। একই উপজেলার গোয়ালখালী গ্রামের মোবারক হোসেনের বাড়ির ভেষজ বাগানে ২০  – ২২ প্রজাতির ভেষজ ও ঔষধি বৃক্ষের গাছ আছে।  পাড়া প্রতিবেশিরা রোগ চিকিৎসায় ভেষজ গাছের পাতা নিয়ে যায় বলে তিনি জনান।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/শাহারিয়ার রহমান রকি/ঝিনাইদহ

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here