ষ্টাফ রিপোর্টার :: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকারি দল, প্রশাসন, দলীয় নেতাকর্মী, সরকারবিরোধী ঐক্যে আগ্রহী রাজনৈতিক দল ও দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কাছে দলের বার্তা দিয়েছে বিএনপি।

দলটির নীতি-নির্ধারকরা তাদের বক্তব্যে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে একদিকে নেতাকর্মীদের যেমন রাজপথে নামার আহ্বান জানিয়েছেন, তেমনি দেশের মানুষকেও দলের বার্তা দেওয়ার চেষ্টা  করেছেন। আগামী নির্বাচনের পর তারা ক্ষমতায় আসলে কী কী করবেন, তারও একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ পেশ করেছেন রবিবারের (৩০ সেপ্টেম্বর) জনসভায়।

রবিবারের জনসভা থেকে খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবির পাশাপাশি দলের নেতাকর্মীদের রাজপথে নামার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা।  এছাড়া ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, প্রশাসন ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথাও বলেছেন তারা।

খালেদা জিয়ার মুক্তি, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে চলমান মামলা প্রত্যাহার, সব নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে থাকা মামলা প্রত্যাহার, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের দাবিতে রবিবার দুপুর থেকে এই জনসভা করে বিএনপি। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে সভা শেষ হয়। সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের প্রায় সবার বক্তব্যেই উঠে আসে চলমান জাতীয় বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্যের বিষয়টি।

সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে কারাবন্দি খালেদা জিয়ার সম্মানে চেয়ার খালি রাখা হয়।

আওয়ামী লীগের নেতারা বিএনপি ক্ষমতায় এলে লাখ লাখ মানুষ খুন হবে, এমন বিষয় উদ্ধৃত করে প্রধান বক্তা স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আশ্বস্ত করতে চাই, আপনাদের কোনও ভয় নেই। খালেদা জিয়া এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশ থেকেই ঘোষণা করেছিলেন, আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না।’

প্রশাসনের উদ্দেশে সাবেক এই স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এখনও সময় আছে, নিরপেক্ষ হয়ে যান। জনগণের পাশে দাঁড়ান।’ সংখ্যালঘুদের সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের মন্ত্রীরা বলছেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে সংখ্যালঘুদের সমস্যা হয়। দেশের সাবেক প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সরকার কী ব্যবহার করেছে, তা জনগণ জানে। আমরা সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার ব্যাপারে অতীতের মতোই কাজ করে যাবো।’

খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে দেশে নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে না। সরকার তার জনমত দেখে আতঙ্কে আছে।’

সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাত দফা ও ১২ লক্ষ্ ঘোষণা করেন। একইসঙ্গে এই দফা ও লক্ষ্যের দাবিতেআগামী ৩ ও ৪ অক্টোবর সারাদেশে কর্মসূচিদেন। তিনি বলেন, ‘দেশকে রক্ষা করতে, দেশের জনগণকে রক্ষা করতে, দেশকে মুক্তিযুদ্ধের আকাঙ্ক্ষায় নির্মাণ করতে বিএনপি দাবি ও লক্ষ্য তুলে ধরেছে। পর্যায়ক্রমে আরও কর্মসূচি আসবে।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘দেশনেত্রী অত্যন্ত অসুস্থ। অসুস্থতা তাকে পরাজিত করতে পারেনি। দুর্বল করতে পারেনি। তিনি কারাগার থেকে খবর দিয়েছেন, যেকোনও অবস্থানে যেতে রাজি আছেন তিনি। তিনি চাইছেন, যেকোনোভাবে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে এই সরকারকে বিদায় করতে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘রবিবার জনসভাকে কেন্দ্র করে বহু নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’  দলীয় নেতাকর্মীদের মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দয়া করে তাদের মুক্তি দিন। না হলে জনগণ দাঁতভাঙা জবাব দেবে।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ভয় পেয়েছে, মারাত্মকভাবে ভয় পেয়েছে।সবখানে তারা বিএনপির ভূত দেখে। ওরা স্বপ্ন দেখে খালেদা জিয়াকে। তারেক রহমান-তারেক রহমান বলে চিৎকার করে ওঠে।’

মির্জা ফখরুল তার বক্তব্যে কোটা সংস্কার আন্দোলন ও সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে আন্দোলনে গ্রেফতার হওয়া শিক্ষার্থীদের মুক্তি দাবি করেন।

স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতারা বলেছেন বিএনপি রাস্তায় নামলে প্রতিহত করবেন। কেন আপনারা আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি প্রতিহত করবেন? আপনারা যদি বিএনপিকে প্রতিহত করতে আসেন, আমরাও প্রতিহত করবো। কাউকে ছেড়ে দেবো না। আওয়ামী লীগ মাঠ দখল করবে এটা দুঃস্বপ্ন। মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ।’

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা রাজপথে নামলে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন। দেশে নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনের মাধ্যমে খালেদা জিয়া আবারও প্রধানমন্ত্রী হবেন। তারেক রহমান দেশে ফিরে আসতে পারবেন। আর যদি রাজপথে না থাকতে পারি, তাহলে এর কোনোটাই হবে না।’

জনসভা থেকে আগামী দিনে ক্ষমতায় এলে বিএনপি কী কী করবে, এরও বার্তা রয়েছে। বিশেষ করে বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্যের জন্য আগ্রহী দলগুলোর পক্ষ থেকে যেসব দাবি তোলা হয়েছে বা অনানুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা হয়েছে, এমন জনতুষ্টিমূলক বিষয়গুলোকে লক্ষ্যের মধ্যে বলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, রাষ্ট্র ক্ষমতায় গ্রহণযোগ্য ভারসাম্য তৈরি করা। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিরপেক্ষ রাখা, বিচার বিভাগ স্বাধীন, অবৈতনিক শিক্ষা ইত্যাদি।

বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান মনে করেন, ‘এসব লক্ষ্য ঘোষণার কারণে বিএনপির অবস্থান সারাদেশে পরিষ্কার হয়েছে।’

রবিবার দুপুর থেকে জনসভার দিকে আসতে থাকেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি সংবলিত ব্যানার, প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন নিয়ে স্লোগানে মুখর করে রাখেন সভার পুরোটা সময়।

মওদুদ আহমদ তার বক্তব্যে বলেন, ‘সরকার গাড়িঘোড়া বন্ধ করেছে। লোক গ্রেফতার করেছে। তবুও মানুষ ঠেকাতে পারেনি।’

জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, বেগম সেলিমা রহমান, বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, খন্দকার মাহবুব হোসেন, অধ্যাপক ডা এ জেড এম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, শওকত মাহমুদ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমান উল্লাহ আমান, জয়নাল আবেদীন ফারুক, আতাউর রহমান ঢালী, আবুল খায়ের ভূইয়া, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন প্রমুখ।

জনসভায় বিএনপির বাইরে আরও কোনও দল বা জোটকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। আগেই দলের বার্তা ছিল, এই সভা হচ্ছে এককভাবে দলের শক্তি প্রদর্শনের জন্য। এ কারণে সভায় ২০ দলীয় জোটের কোনও দলের নেতাকর্মীকেই দেখা যায়নি।

এদিকে, সমাবেশকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপিস্থিতি থাকলেও বড় ধরনের কোনও সমস্যা হয়নি। মৎস্য ভবন এলাকায় ঝামেলা হলেও তা সামান্য। তবে  সভা শেষ হওয়ার পর-পর কয়েকজন নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে দাবি করেছে বিএনপি।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here