বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাদিয়া আফরোজ নিনাআসাদুজ্জামান সাজু, লালমনিরহাট প্রতিনিধি :: লালমনিরহাটে গোপন বৈঠক চলাকালীন সময়ে সাদিয়া আফরোজ নিনা (২৪) নামে জেএমবির এক আন্তর্জাতিক নারী নেটওয়ার্কের সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার মধ্যরাতে জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার সিঙ্গিমারী ইউনিয়নের দক্ষিণ ধুবনী গ্রামে নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

সাদিয়া আফরোজ নিনা জেএমবি’র আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কের নেতা মোহাম্মদ আনাস, মেহেদি হাসান, এআরএম ওরফে সোহেল রানার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে।

সাদিয়া আফরোজ নিনা ওই এলাকার নুরুল হকের মেয়ে ও রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের অনার্স শেষ বর্ষে পরীক্ষা দিয়েছে বলে জানা গেছে। তবে সাদিয়া আফরোজ নিনা’র বিভিন্ন ফেইসবুক আইডি থেকে জানা গেছে, প্রেমে ব্যর্থ হয়েই জেএমবি’র পথে পা বাড়িয়ে দেন এই মেধাবী ছাত্রী।

হাতীবান্ধা থানার ওসি ওমর ফারুক জানান, দেশ জুড়ে জঙ্গি হামলা ও নাশকতার পরিকল্পনা নিয়ে সাদিয়া আফরোজ নিনা তার বাড়িতে বুধবার রাতে ১০/১২ জন জেএমবি সদস্য নিয়ে গোপন বৈঠক করেন। এমন একটি গোপন সংবাদের ভিত্তিতে লালমনিরহাট অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাসিরুল ইসলাম ও সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার শহীদ সোহরাওয়ার্দীসহ ডিবি পুলিশ ও হাতীবান্ধা থানা পুলিশের একটি দল ওই এলাকায় পৃথক পৃথক ভাবে অভিযান চালায়। এ সময় ওই এলাকার নুরুল হকের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে জেএমবি’র আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কের সদস্য সাদিয়া আফরোজ নিনাকে গ্রেফতার করেন। এ সময় অন্যান্য জেএমবি সদস্যরা পালিয়ে যায়।

অভিযানে গ্রেফতারকৃত জেএমবি সদস্য’র কাছ থেকে “টেলিগ্রাম, আরবোড, আরফক্স” নামক নিষিদ্ধ কিছু এ্যাপস পাওয়া যায়। ওই এ্যাপস গুলোতে বিভিন্ন যুদ্ধের মুসলিম যোদ্ধাদের যখমি ছবি, জঙ্গি নেতাদের ছবি এবং জঙ্গি অস্ত্র প্রশিক্ষনের একাধিক ভিডিও পাওয়া যায়। এছাড়া তার কাছ থেকে ইবনে আজব হামবুনি সালামদের ইনমি শ্রেষ্টত অনুবাদ সংক্রান্ত আব্দুল্লা আল মাসুদের লেখা একটি জেহাদী বই পাওয়া যায়।

হাতীবান্ধা থানার ওসি ওমর ফারুক আরও জানান, গ্রেফতারকৃত জঙ্গি সদস্য সাদিয়া আফরোজ নিনার সাথে আন্তর্জাতিক জেএমবি চক্রের সদস্য মোহাম্মদ আনাস, মেহেদি হাসান, এআরএম ওরফে সোহেল রানার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। এ ছাড়া ৮০ হাজার সদস্য নিয়ে তৈরী “মুসলিম নারী” নামে একটি ফেসবুক গ্রুপের এডমিন ছিল। জেএমবি সদস্য নিনা ফেইসবুকে সাদিয়া আফরোজ নিনা, সাদিয়া নিনা, শাহদাতে তামান্না নামক তার নিজস্ব ৩ টি আইডি থেকে প্রায় সময় নিজেকে মৌলবাদী দাবি করে মৌলবাদের পক্ষে বিভিন্ন স্ট্যাটাস দিয়ে আসছে।

এ সময় তার কাছ থেকে জেএমবি এবং মৌলবাদ সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য বহুল যুদ্ধ ও অস্ত্র প্রশিক্ষনের ভিডিওসহ ৩ টি মোবাইল ফোন ও ৫ টি সিম উদ্ধার করা হয়। সাদিয়া আফরোজ নিনা বাংলা, ইংরেজী, আরবি ও হিন্দী ৪ টি ভাষায় নিয়মিত কথা বলেন।

সড়ে জমিনে ওই এলাকা ঘুরে জানা গেছে, সাদিয়া আফরোজ নিনা ২০১০ সালে হাতীবান্ধা শাহ গরিবুল্লাহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে থেকে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে এসএসসি ও ২০১২ সালে হাতীবান্ধা আলিমুদ্দিন কলেজ থেকে গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে এইচএসসি পাশ করে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের অনার্সে ভর্তি হন।

জেএমবি’র সদস্য সাদিয়া আফরোজ নিনা’র একাধিক ফেইসবুক আইডি থেকে ধারনা করা হচ্ছে, প্রেমে ব্যর্থ হয়েই জেএমবি’র পথে পা বাড়িয়ে দেন এই মেধাবী ছাত্রী। তার নিজস্ব ফেইসবুক আইডিতে তার প্রেমিক তার সাথে প্রেমের অভিনয় করে বিভিন্ন অযুহাতে কখন, কোথায় ও কি ভাবে তার দেহ ব্যবহার করেছেন তা উল্লেখ্য করেছেন। এ সময় তিনি উল্লেখ করেন “তোমার কারণেই আমি অন্য পথে পা বাড়াতে বাধ্য হলাম”।

লালমনিরহাট সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার শহীদ সোহরাওয়ার্দী জানান, গ্রেফতারের পর হাতীবান্ধা থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাদী হয়ে দেশে জুড়ে নাশকতার অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছেন। পরে তাকে জেল- হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here