অপ্রাপ্ত বয়স্ক বিয়ে! প্রশাসন অসহায়খোরশেদ আলম বাবুল, শরীয়তপুর প্রতিনিধি :: শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার চামটা ইউনিয়নের তেলিপাড়া গ্রামে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের উপস্থিতিতে বাল্যবিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় এ বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নড়িয়া উপজেলার চামটা ইউনিয়নের তেলিপাড়া গ্রামের ইতালি প্রবাসী আব্দুল কুদ্দুস হাওলাদারের মেয়ে কান্তা আক্তার (১৬) এর সাথে পার্শ্ববর্তী ভেদরগঞ্জ উপজেলার উত্তর মহিষার গ্রামের সাত্তার হাওলাদারের ছেলে রিপন হাওলাদারের অপ্রাপ্ত  বয়স্ত বিয়ে হয়।

কান্তা আক্তার স্থানীয় তেলিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণীর ছাত্রী। বিদ্যালয়ের নিবন্ধন অনুযায়ী কান্তার জন্ম তারিখ ১ মার্চ, ২০০০ খ্রিঃ। সে অনুযায়ী তার বয়স ১৬ বছর ৬ মাস ১৭ দিন। আইন অনুযায়ী ১৮ বছরের নিচে বিয়ে দেয়ার সুযোগ না থাকায় কুদ্দুস হাওলাদার স্থানীয় চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দীন রাঢ়ীকে ম্যানেজ করে একটি ভূয়া জন্ম সনদ উত্তোলন করেন। রোববার দুপুরে চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দীন তার সকল ইউপি সদস্যদের সাথে নিয়ে মেয়ের পিত্রালয়ে বিয়ের দাওয়াত খেতে যান।

অপ্রাপ্ত বয়স্ক বিবাহের সংবাদ পেয়ে সংবাদকর্মীরা বিষয়টি জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করে। তখন নড়িয়া উপজেলা ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা সাব্বির আহমেদ উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থলে যাওয়ার নির্দেশ দেন এবং প্রশাসনের লোক না যাওয়া পর্যন্ত বিয়ে বন্ধ রাখার জন্য মোবাইল ফোনের মাধ্যমে চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করেন। মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা বিকাল ৪ টায় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তখন কান্তা আক্তারের ১৮ বছর বয়স দেখিয়ে চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন বিদ্যালয়ের জন্ম তারিখ আড়াল করে নতুন জন্ম নিবন্ধন দেন। এরপর সন্ধ্যা ৭টার  দিকে চেয়ারম্যান ও সদস্যদের উপস্থিতিতে কান্তার অপ্রাপ্ত বয়স্ক বিয়ে সম্পন্ন করেন।

তেলিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল বাশার বলেন, কান্তা আমাদের স্কুলের ছাত্রী। জেএসসি পরীক্ষার নিবন্ধন অনুযায়ী কান্তা আক্তারের জন্ম তারিখ ১ মার্চ, ২০০০ খ্রিঃ। তার বয়স ১৮ বছর হয়নি। কিন্তু চেয়ারম্যান মেম্বাররা উপসি’ত থেকে বিয়ে দিলে আমাদের কী করার আছে?

চামটা ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য পলাশ আহমেদ বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে দেয়া জন্ম সনদ অনুযায়ী  কান্তার বয়স ১৮ বছর হয়েছে। চেয়ারম্যান নিজে বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন। আমরা সব ইউপি সদস্যরাও উপস্থিত ছিলাম। সে ক্ষেত্রে এটা অপ্রাপ্ত বয়স্ক বিয়ে হবে বলে আমি মনে করি না।

এ বিষয়ে চামটা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দীন রাঢ়ী বলেন, ‘এলাকার বিয়ে তাই উপসি’ত ছিলাম। মেয়ের বাবা আবেদন করলে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জন্ম সনদ দেয়া হয়। মেয়ে স্কুলে পড়ে কিনা আমার জানা নেই।’

নড়িয়া উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রাজিয়া খানম বলেন, আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। চেয়ারম্যান জন্ম সনদ সঠিক বলে প্রত্যয়ন করে তাই আমার কিছুই করার ছিল না। মেয়ের জন্ম সনদ মিথ্যা হলে চেয়ারম্যান দায়ী থাকবেন। ভুয়া সনদ প্রমানিত হলে চেয়ারম্যানকে আইনের আওতায় আনা হবে।

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here