মহিলা সিটস্টাফ রিপোর্টার :: ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে নূ্যনতম অষ্টম শ্রেণি পাসের বাধ্যবাধকতা এবং গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে শাস্তির বিধান রেখে নতুন আইন করছে সরকার।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার (২৭ মার্চ) সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘সড়ক পরিবহন আইন- ২০১৭’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়।

সভাশেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশে আগের অধ্যাদেশকে নতুন করে আইনে পরিণত করা হয়েছে। তবে আইনে বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে, পরিবর্তন আনা হয়েছে শাস্তিতেও।

আগের আইনে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে শিক্ষাগত যোগ্যতার কোনো শর্ত ছিল না। নতুন আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য চালককে কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণি পাস হতে হবে।

চালকের সহকারীরও পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া থাকতে হবে। সহকারী হতে হলেও বাধ্যতামূলকভাবে লাইসেন্স নিতে হবে। আগের অধ্যাদেশে সহকারীদের লাইসেন্সের কথা থাকলেও তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্ত ছিল না।

গাড়ি চালনার জন্য চালকের বয়স আগের মতোই কমপক্ষে ১৮ বছর হতে হবে। আর পেশাদার চালকদের বয়স হতে হবে কমপক্ষে ২১ বছর।
নতুন আইনের খসড়ায় ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে অনধিক ৬ মাসের কারাদ- বা ৫০ হাজার টাকা অর্থদ- বা উভয়দ- দেয়া হবে। আগের আইনে এ ধরনের অপরাধের জন্য তিন মাসের জেল বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান ছিল।

চালকের সহকারীর লাইসেন্স না থাকলে এক মাসের জেল বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখার কথা বলা হয়েছে নতুন আইনের খসড়ায়।

নতুন আইন পাস হলে কেউ গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন না। এ আইন ভাঙলে এক মাসের কারাদ- বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা হতে পারে।

ছয় মাসের কারাদ- বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে- এমন অপরাধের ক্ষেত্রে পুলিশ বিনা পরোয়ানায় চালকদের গ্রেপ্তার করতে পারবে। অর্থাৎ, ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালেও তাকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করা যাবে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, চালকরা যাতে আইন মেনে চলেন, সেজন্য পয়েন্টভিত্তিক ব্যবস্থা চালু হবে। মোট ১২ পয়েন্ট বরাদ্দ থাকবে। বিভিন্ন অপরাধের জন্য চালকের পয়েন্ট কাটা যাবে। পয়েন্ট শূন্য হয়ে গেলে তার ড্রাইভিং লাইনেন্স বাতিল হয়ে যাবে।

শফিউল আলম আরও বলেন, মদপান বা নেশাদ্রব্য পান করে গাড়ি চালানো, মদপান বা নেশাদ্রব্য পান করে মোটরশ্রমিকদের গাড়িতে অবস্থান করা, মোটরযান চালক কোনো অবস্থায়ই হেল্পারকে গাড়ি চালাতে দেয়া, সড়ক বা মহাসড়কে নির্ধারিত অভিমুখ ছাড়া বিপরীত দিক থেকে গাড়ি চালানো, সড়ক বা মহাসড়কের নির্ধারিত স্থান ছাড়া অন্য কোনো স্থানে বা রং সাইডে মোটরযান থামিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে তিন মাস কারাদ- বা ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা হবে।

একই সঙ্গে মোটরসাইকেলে চালক ছাড়া একজনের বেশি যাত্রী বহন, মোটরসাইকেলের চালক ও যাত্রীর হেলমেট ব্যবহার না করা, চলন্ত অবস্থায় চালক বা কন্ডাক্টর কোনো যাত্রীকে গাড়িতে উঠাতে বা নামাতে পারবেন না, প্রতিবন্ধীদের জন্য অনুকূল সুযোগ-সুবিধা না রাখা, ঝুঁকিপূর্ণভাবে গাড়িতে কোনো যাত্রী বা পণ্য বহন করা যাবে না, কোনো সড়ক বা মহাসড়কে গাড়ি মেরামতের জন্য যন্ত্রাংশ ও মালামাল রেখে যানবাহন বা পথচারী চলাচলে বাধা সৃষ্টি করলেও একই শাস্তি পেতে হবে।

এছাড়া গণপরিবহনে মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসনে পুরুষ যাত্রী বসলে জেল-জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। পাবলিক বাসগুলোতে প্রায়ই দেখা যায়, মহিলাদের জন্য নির্ধারিত আসনগুলো পুরুষদের দখলে থাকে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘মহিলা, শিশু, বয়োজ্যেষ্ঠ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত আসনে অন্য কোনো যাত্রী বসলে বা বসার অনুমতি দিলে সর্বোচ্চ এক মাসের জেল বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। সিট বেল্ট না বাঁধলেও একই শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here