কয়েক কিমি পায়ে হেঁটে সুপেয় পানি সংগ্রহ মহানন্দ অধিকারী মিন্টু, পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি :: খুলনার পাইকগাছায় কয়েক কিলোমিটার পায়ে হেঁটে সুপেয় পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। সংকট নিরসনে সরকারি-বেসরকারিভাবে ইতোমধ্যে বিভন্ন পদক্ষেপ নিলেও তা ৩ লক্ষাধিক মানুষের চাহিদা পূরনে নিতান্তই অপ্রতুল। লবণ পানি অধ্যুষিত বিপুল জনগোষ্টির সুপেয় পানির প্রধান উৎস্য ২ হাজার ৬৫৩টি অগভীর নলকূপ।

তবে অধিকাংশ নলকূপে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক ও আয়রণের পরিমাণ বেশী থাকায় তা ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে দীর্ঘদিন। আবার অনেকে সূপেয় পানির সংকটে তা পান করে আর্সেনিকোসিসসহ বিভিন্ন পানিবাহিত দূরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

আর তাই সকাল থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত লবণ পানি অধ্যুষিত এলাকার শিশু-কীশোর থেকে শুর করে স্কুল-কলেজের ছাত্র/ছাত্রী ও মহিলারা বিভিন্ন পানির পাত্র নিয়ে সূপেয় পানির সন্ধানে ছুঁটে যায় সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন পানির প্রকল্পগুলোতে।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সূত্র জানায়, উপজেলার ১০ টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভায় অগভীর নলকূপ রয়েছে ২ হাজার ৬৫৩ টি। তম্মধ্যে উপজেলার হরিঢালী ইউনিয়নে রয়েছে, ৩২৭টি, কপিলমুনিতে ৩৯৫টি, লতায় ১৯৮টি, দেলুটি ইউনিয়নে ২০১টি, সোলাদানায় ১৭৩টি, লস্করে ১৯৫টি, গদাইপুরে ৩৭১টি, রাড়-লিতে ৩৪০টি, চাঁদখালিতে ৩৯৯টি ও গড়-ইখালী ইউনিয়নে ১৩৪টি অগভীর নলকূপ রয়েছে। এছাড়া ভিএসএসটি ৩১টি, এসএসটি ৬১৮টি, রেইন ওয়াটার হার্ভেষ্টিং ৭৪৮টি ও পিএসএফ ৪৯৪টি।

সূত্র আরো জানায়, চলতি অর্থ বছরে উপজেলার সোলাদানা, লস্কর ও গড়-ইখালি ইউনিয়নে ৩ হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ১২০টি পানির ট্যাংক। ৫ ইউনিয়নের ৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্থাপন করা হয়েছে, ২৫ হাজার লিটার পানির ধারণ ক্ষমতার  ৫টি রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং সিস্টেম।

তবে কোনো কিছুতেই যেন নিরসন হচ্ছেনা সূপেয় পানির সংকট। কেননা উপজেলার অধিকাংশ নলকূপগুলোতে রয়েছে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক ও আয়রণ। সর্বশেষ ২০০৩ সালের সরকারি জরিপ অনুযায়ী উপজেলার হরিঢালী ইউনিয়নে ৬৮ শতাংশ নলকূপে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক, কপিলমুনিতে ৭৮ শতাংশ, লতায় ৭৭ শতাংশ, দেলুটিতে ৪৬ শতাংশ, সোলাদানায় ৭৯ শতাংশ, লস্করে ৭৬ শতাংশ, গদাইপুরে ৬৩ শতাংশ, রাড়-লীর ৬৮ শতাংশ, চাঁদখালীর ৭২ শতাংশ ও গড়-ইখালীর ৬৩ শতাংশ নলকূপ সমূহে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক ধরা পড়ে।

ঐসময় যে সকল নলকূপে মাত্রাতিরিক্ত আর্সেনিক ধরা পড়ে তার পানি পান না করতে নিরাপত্তা চিহ্ন হিসেবে লাল রং দিয়ে চিহ্নিত করা হয। আর যে সকল নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা সহনশীল পর্যায়ে ছিল সেগুলোতে সবুজ রং দিয়ে চিহ্নিত করা হয়।

দীর্ঘদিন আগে ঐ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ায় তা ইতোমধ্যে মুছে গেছে। তাই জেনে বা না জেনে বিপদজ্জনক অধিকাংশ নলকূপের পানি পান করছেন সংশ্ল্লিষ্ট এলাকার সাধারণ মানুষরা।

সূত্র জানায়, যে সকল এলাকার পানিতে লবনাক্ততার পরিমাণ কম সে সব এলাকার পানিতে আর্সেনিকের পরিমাণ বেশী। আর যে সব এলাকার লবনাক্ততার পরিমাণ বেশী সেসব এলাকায় আর্সেনিকের পরিমাণ কম।

তবে অধিক লবণ অধ্যুষিত এলাকা লতার শামকপোতা, বাহির বুনিয়া গদারডাঙ্গা, পুটিমারী, পুতুলখালী, হাড়িয়া, পানারাবাদ, তেঁতুলতলা, হানি মুনকিয়া, কাঠামারী, গঙ্গারকোনা, লতা সদর সহ সেখানকার প্রায় সবকয়টি গ্রাম। কপিলমুনির চিনেমলা, গোয়ালবাথান, প্রতাপকাটি, কাজীমুছা, মালত, নাবা, ভৈরবঘাটা, বিরাশি, শ্যামনগর, বারইডাঙ্গা, শিলেমানপুর সহ কয়েকটি গ্রাম, দেলুটি, সোলাদানা ও লস্কর ইউনিয়নে সূপেয় পানির সংকট সবচেয়ে বেশী।

এসব এলাকার মানুষরা বিকল্প হিসেবে পুকুরের পানি ব্যবহার করছে। আবার অনেকে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে পান করছে। বিশেষ করে যেসব এলাকায় মিষ্টি পানির আঁধার নেই সেসব এলাকায় বৃষ্টির পানিই একমাত্র ভরসা।

পাইকগাছা উপজেলা জনস্বাস’্য প্রকৌশলীর দফতর সূত্রে জানাযায়, প্রায় আড়াই বছর যাবৎ গুরুত্বপূর্ণ এ পদটি শূণ্য রয়েছে। একজন কর্মকর্তা দু’জেলার ৪ টি উপজেলায় দায়িত্ব পালন করছেন।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here