কুয়াকাটা সৈকতে জোয়ারে কান্না, ভাটায় হাসিমিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া(পটুয়াখালী) প্রতিনিধি :: শেষ বিকালে ভাটার টানে কুয়াকাটা সৈকতে পর্যটকদের উপচেপড়া ভীড় ও হাসি-আনন্দের উচ্ছাস ছড়িয়ে পড়লেও দিনের আলোতে সাগরে জোয়ারে শোনা যায় কান্নার আওয়াজ। সৈকতের জিড়ো পয়েন্ট থেকে পূর্ব-পশ্চিমের প্রায় এক কিলোমিটার সৈকতে ইট,কংকিট ও গাছের গুঁড়ির বর্জ্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকায় সাগরে গোসল করতে নেমে পর্যটকরা রক্তাক্ত জখম হচ্ছে। সৈকতে আলোর ব্যবস্থা না থাকায় রাতের সৈকত হয়ে উঠছে আরও বিপদজনক।

কুয়াকাটা ট্যুরিষ্ট পুলিশ ও কুয়াকাটা পৌর কর্তৃপক্ষ এ বর্জ্য দূর্যোগে পর্যটকদের দূর্ভোগের কথা স্বীকার করলেও সৈকত পরিস্কারে কোন উদ্যোগ নেয়নি। এমনকি ট্যুরিষ্ট পুলিশের কাছে এ আহত পর্যটকদের নেই কোন পরিসংখ্যান কিংবা জরুরী চিকিৎসা সামগ্রী।

ঈদের দিন বিকেল থেকে কুয়াকাটা সৈকতে কয়েক লাখ পর্যটকের সমাগম হয়েছে। জোয়ারের সময় সাগরের পানি জিড়ো পয়েন্টের সৈকত তিন-চার ফুট উচ্চতায় তলিয়ে থাকে। এ কারনে সৈকতের ইট,কংক্রিটের বর্জ্য পর্যটকরা দেখতে না পেয়ে এলোপাতাড়ি সাঁতার ও সৈকতে দৌড়ে যাওয়ার সময় দূর্ঘটনার কবলে পড়ছে। গত তিন দিনে কয়েকশ পর্যটক আহত হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কুয়াকাটা সৈকত ঘেষা একাধিক স্থাপনা সাগরে ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে যাওয়ায় ওই স্থাপনার খন্ডিত অংশ এতোদিন সৈকতের বালুর নিচে চাপা পড়েছিলো। কিন্তু গত অমাবশ্যা ও পূর্ণিমার জো’র প্রভাবে সাগরের জলোচ্ছাসে সৈকতের বালু ক্ষয়ে সেই বিধ্বস্ত স্থাপনার খন্ডিত ও ভাঙ্গা অংশ সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে জেগে উঠেছে। এছাড়া সৈকত ঘেষা বনাঞ্চলের বিভিন্ন প্রজাতির গাছ ভেঙ্গে পড়ায় ওই ভাঙ্গা গাছের শিকড় ও গাছের গুড়ি সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এই ইট, কংক্রিটের বর্জ্য ও গাছের গুঁড়িই এখন পর্যটকদের কাছে আতংকের বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে।

ঢাকার পর্যটক মো. সুমন, শাহীন, তমালিকা বলেন, সৈকতে পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য ট্যুরিষ্ট পুলিশের পক্ষ থেকে সচেতনতামূলক মাইকিং করা হচ্ছে। কিন্তু সৈকতের এই ইট,কংক্রিটের বর্জ্য আতংকের বিষয়ে কোন প্রচারণা নেই। এ বিষয়ে কোন প্রচারাভিযান না থাকায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ভ্রমনে আসা পর্যটকরা সাগরে জোয়ারের সময় গোসল করতে নেমেই সৈকতের এই গুপ্ত বর্জ্যরে ফাঁদে পা আটকে কিংবা পড়ে আহত হচ্ছে।

টাঙ্গাইল থেকে ভ্রমনে আসা পর্যটক নিয়ামুল হক জানান, রোববার সকালে ৪৫ জন বন্ধু কুয়াকাটায় এসেছেন। দুপুরে জোয়ারের সময় গোসল করতে নেমে ১৯ জন আহত হয়েছে। কারও পা কেটে গেছে, কেউ কংক্রিটের উপর পড়ে হাতে, পিঠে,মাথায় আঘাত পেয়েছে।

যশোর থেকে ভ্রমনে তাম্মি ইসলাম বলেন,“ সৈকতে গোসল করতে নেমে তার সাত বছরের ছেলে তাইজুলের পা কেঁটে গেছে। তার ননদ ইফতি ইসলাম হাতে আঘাত পেয়েছে।

ঢাকার পর্যটক নাজনীন সুলতানা, আতিয়া হক বলেন,“ গোসল করতে নেমে তারা দুজনেই আহত হয়েছে। সাগরের ঢেউয়ের সাথে ডুব দিতে গিয়ে তারা সিমেন্টের পিলারের সাথে ধাক্কা খেয়ে মাথায় আঘাত পেয়েছে। আগে ধারণা না থাকায় এভাবে কুয়াকাটা সৈকতের ইট,কংক্রিটের বর্জ্যে আঘাত পেয়ে প্রতিদিনই কয়েকশ পর্যটক সাগরে গোসল করতে নেমে আহত হচ্ছে।

নারায়নগঞ্জ থেকে কুয়াকাটায় ভ্রমনে আসা পর্যটক দম্পতি তৌহিদুল ইসলাম ও শান্তা ইসলাম বলেন,“ সৈকতের পূর্ব দিকের গাছের গুড়িতে ধাক্কা খেয়ে তাদের দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেড়ে তনময় ইসলাম ও সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে তিথি ইসলাম আহত হয়েছে। সাগরের পানির নিচে তলিয়ে থাকা গাছের শিকড়ে আটকে তাদের শরীরের বিভিন্ন অংশে জখম হয়েছে।

তবে জোয়ারের সময় এই আতংক ও কান্নার শব্দ শোনা গেলেও সৈকতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গাছের গুঁড়ি ও ইট,কংক্রিটের বর্জ্য পর্যটকদের বিনোদনে নতুন মাত্রা যোগ করে। সৈকতে ভাটার সময় এই গুপ্ত বর্জ্যরে খন্ডে বসে পর্যটকরা সৈকতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করে।

সৈকতে বসে কথা হয় নিলীমা ইসলাম, জহির উদ্দিনসহ একাধিক পর্যটকদের সাতে। তাঁরা বলেন, জোয়ারের সময় সৈকতের যে অবস্থা হয় তাতে নেমে গোসল করা বিপদজনক। সৈকতে সময় কাটানোর নির্দিষ্ট স্থান না থাকায় এই বিধ্বস্ত স্থাপনায় বসে তারা সময় কাটান।

কুয়াকাটার একাধিক ব্যবসায়ী,হোটেল মালিক ও মোটরসাইকেল চালকরা বলেন, প্রতিদিন ৩০-৪০ হাজার পর্যটক দিনের আলোতে কুয়াকাটায় ভ্রমনে আসে। কিন্তু এই সৈকতের বর্জ্য পর্যটকদের জন্য বিপদজনক হয়ে উঠছে। সৈকতে রাতে হাঁটতে গিয়ে, মোটরসাইকেল চালাতে গিয়ে এবং গোসল করতে নেমে প্রতিদিনই আহত পর্যটকদের সংখ্যা বাড়লেও “নিরাপদ সৈকত” এখনও অধরা পর্যটকদের কাছে।

কুয়াকাটা ট্যুরিষ্ট পুলিশ এর এসআই মো. মনির জানান, কুয়াকাটা সৈকতের এই ইট কংক্রিটের বর্জ্য এখন পর্যটকদের কাছে চরম দূর্ভোগর। প্রতিদিনই পর্যটকরা সাগরে গোসল করতে নেমে আহত হচ্ছে। কিন্তু এই বর্জ্য অপসারণে কোন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। তবে যাতে এই দূর্ঘটনা না ঘটে এজন্য ট্যুরিষ্ট পুলিশের পক্ষ থেকে সচেতনতামূলক মাইকিং করার উদ্যোগ নেয়া হবে।

কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আঃ বারেক মোল্লা বলেন, এই দূর্ভোগ ও দূর্ঘটনার কথা তিনিও শুনেছেন। আগামী দু’একদিনের মধ্যে সৈকতের সকল ধরনের কংক্রিটের বর্জ্য অপসারনণ করে পর্যটকদের জন্য নিরাপদ সৈকতের ব্যবস্থা করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here