কিশোরীকে জুতাপেটার ঘটনায় অংশ নেয় মানবাধিকার সংগঠনের নেত্রী মোনাসিফ ফরাজী সজীব, মাদারীপুর প্রতিনিধি :: চরিত্রহীন আখ্যা দিয়ে মাদারীপুরে এক কিশোরীকে জুতাপেটার ঘটনায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে ওই কিশোরীর পরিবার। আর জুতাপেটায় সরাসরি অংশ নেয় মাদারীপুর লিগাল এইড এসোসিয়েশন নামের একটি মানবাধিকার ও আইন সহায়তাকারী সংগঠনের তৃণমূল নেত্রী। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর থেকে সুশীল সমাজসহ সচেতন মহলের মধ্যে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে।

কিশোরীর পরিবার জানান, ঘটনাটি জানাজানি হওয়ায় সালিসকারীদের ভয়ে আতঙ্কিত তারা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত কোন ধরনের সহযোগিতা দেয়া হয়নি। এই ঘটনায় মাদারীপুর মহিলা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও কয়েকটি মাবনাধিকার সংগঠনের লোকজন কিশোরীর বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিয়েছে। তবে তাদের আইনগত কোন সহায়ত দেয়ার উদ্যোগ নেয়নি প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

নির্যাতিতের পরিবার আরো জানায়, মঙ্গলবার বিকেলে ওই সালিসে অংশ নেয় মাদারীপুর পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আইয়ুব খান, ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মুজাম খান, সাবেক কাউন্সিলর সামসুল হক খান, স্থানীয় মানবাধিকার সংগঠনের তৃণমূল কর্মী আকলিমা বেগম, স্থানীয় প্রভাবশালী সেলিম মীরা, খবির খান প্রমুখ। সালিস আইয়ুব খান, মুজাম খান, সামসুল হক খানের সিদ্ধান্তে ওই কিশোরীকে দোষী সাব্যস্থ করা হয়।

প্রকাশ্যে ১০ জুটাপেটায় অংশ নেয় মাদারীপুর লিগাল এইড এসোসিয়েশনের তৃণমূল সংগঠন ‘কমিউনিটি বেইজ অর্গাানাইজেশন (সিবিও) কমিটির সদস্য আকলিমা বেগম। এ ঘটনার সাথে মানবাধিকার সংগঠনের সদস্য যুক্ত হওয়ায় তীব্র সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে।

লাঞ্ছিতা কিশোরীর বাবা বলেন, ‘প্রভাবশালীরা আমাদের বিভিন্ন ভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। আমরা এই ঘটনার সঠিক বিচার চাই।’

লাঞ্ছিত ওই কিশোরীর ভাই জসিম ফকির বলেন, আমার বোনকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে বিক্রি করে দেয় হাসান। এরপর আমরা বোনকে উদ্ধার করি। পরে স্থানীয় প্রভাবশালীরা বিষয়টি মীমাংসা করে দেয়ার নামে আমার বোনকে জুতা পেটা করেছে।

লাঞ্ছিত ওই কিশোরী বলে, আমার অনেক বড় ক্ষতি করেছে ওরা। এর বিচার তো পাইনি, উল্টো সালিশের নামে আমাকে জুতা পেটা করেছে। আমি এর বিচার চাই। লাঞ্ছিত কিশোরীর ফুফু আকিমন বেগম বলেন, আমার ভাই গরীব মানুষ। ভ্যান চালিয়ে সংসার চালায়। আমরা গরীব বলে আমাদের সঙ্গে ওরা অবিচার করেছে। আমরা ওদের বিচার চাই।

এ ব্যাপারে মাদারীপুর লিগাল এইড এসোসিয়শনের প্রধান সমন্বয়কারী খান মো. শহীদ বলেন, ‘ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা স্থানীয় পর্যায়ে সমাজ ভিত্তিক কমিটি করে থাকি স্থানীয় লোকজন নিয়ে, এতে যদি কেউ অপ্রীতিকর ঘটনার সাথে জড়িত থাকে, তাহলে আমরা তাকে কমিটি থেকে বাদ দেয়ার সুপারিশ করি। ওই কিশোরীর পরিবার যদি আইনগত সহায়ত চায়, আমরা সংস্থার পক্ষ থেকে সহযোগিতার করবো।

মাদারীপুর জেলা আওয়ামীলীগের দপ্তর স¤পাদক গোলাম মাওলা আকন্দ বলেন, এ ধরণের ঘটনা সালিসযোগ্য নয়। এরপর সালিসে জুটার পেতার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক আওয়ামীলীগ নেতার বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সঠিক প্রমাণিত হলে দলীয়ভাবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মাদারীপুর সদর থানার ওসি (তদন্ত) আবু নাইম বলেন, ‘বিষয়টি আমরা অবগত আছি। এখনও মামলা হয়নি। মামলা হলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনাটি জানার জন্যে মহিলা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তারকে জানানো হয়েছিল। তারা ঘটনা বিস্তারিত শুনেছে। এখন যদি নির্যাতিতার পরিবার মামলা দেয়, তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

উল্লেখ্য, গত ১৮ ডিসেম্বর সোমবার দুপুরে শহরের মধ্যখাগদি এলাকার কিশোরীকে ফুসলিয়ে নিয়ে যায় একই এলাকার কুদ্দুস শরীফের ছেলে হাসান শরীফ। পরে মেয়েটিকে তামান্না নামে এক মহিলার কাছে বিক্রি করে দেয়। বিষয়টি ওই কিশোরীর পরিবার জানতে পেরে মাদারীপুর সদর উপজেলার খাগছাড়ার করমবাজার থেকে শুক্রবার উদ্ধার করে। মঙ্গলবার বিকেলে এ নিয়ে সালিসী সিদ্ধানেত ওই কিশোরীকে প্রকাশ্যে জুটাপেটা করা হয়।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here