কলারোয়া শিশু ল্যাবরেটরী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও বেত্রবতী আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়(মাধ্যমিক স্তর) দীর্ঘ বছর যাবৎ এমপিওভুক্ত না হওয়ায় বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। দীর্ঘদিন থেকে বেতন ভাতা না পাওয়ায় অনেক শিক্ষকই ভীষণ হতাশ ও উদ্যমহারা হয়ে পড়েছেন। বেতন না পাওয়ায় এবার ঈদেও তাদের ঘরে ফিরতে হলো সম্পূর্ণ খালি হাতে। জানা গেছে, কলারোয়ার প্রাণকেন্দ্র অবস্থিত কলারোয়া শিশু ল্যাবরেটরী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি ১৯৯৬ সালে স্থাপিত হয়। কিন্ত প্রতিষ্ঠার পর এ্যাকাডেমিক স্বীকৃতি পেলেও জুনিয়র এই স্কুলটির ভাগ্যে এমপিওভূক্তি জোটেনি। সরকার আসে সরকার বদল হয় কিন্তু এ স্কুলের হতভাগ্য শিক্ষকদের তাতে ভাগ্য বদল হয় না। বর্তমান মহাজোট সরকারের আমলে স্কুলের শিক্ষকবৃন্দ অনেক আশায় বুক বেঁধেছিলেন- এবার স্কুলটি এমপিও ভূক্তি হবে। কেননা, তালা-কলারোয়ার সংসদ সদস্য আলহাজ্ব প্রকৌশলী শেখ মুজিবুর রহমান কলারোয়ায় সর্বপ্রথম এই ল্যাবরেটরী স্কুলটি পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, তিনি স্কুলটি এমপিওভূক্ত করার ক্ষেত্রে সব ধরণের সহায়তা দিবেন। তিনি তাঁর প্রতিশ্রুতির কথা ভিজিট বইয়ে নিজ হাতে লিখেও দিয়েছিলেন। সেকারণে অসহায় ও বঞ্চিত শিক্ষকবৃন্দ ভাগ্য বদলের আশায় দিন গুণছিলেন। শিক্ষকরা ভেবেছিলেন, হয়তো এবার ঈদে তাদের আর খালি হাতে ঘরে ফিরতে হবে না। কিন্ত বর্তমান সরকার দু’দুবার এমপিও ছাড়লেও ল্যাবরেটরী স্কুলের এমপিওভূক্তি করা হয়নি। তাই তাদের খালি হাতেই উদযাপন করতে হচ্ছে পবিত্র ঈদুল আযহা। স্বয়ং সংসদ সদস্যের লিখিত প্রতিশ্রুতি ও আন্তরিকতা থাকা সত্ত্বেও স্কুলটি এমপিওভূক্তি তালিকায় স্থান না পাওয়াটি রীতিমতো বিস্ময়কর ঘটনা বলে অনেকেই মনে করেন। জানা গেছে, সরকার খুব শীঘ্র আবারও এমপিও ছাড়বে। এখনো শিক্ষকবৃন্দ আশা করে আছেন, যেহেতু সংসদ সদস্য মহোদয় প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সেহেতু এবার কিছু একটা হয়ে যাবে। প্রধান শিক্ষক ইমদাদুল হক বলেন, স্কুলটি এমপি মহোদয় পরিদর্শনকালে সন্তুষ্টি প্রকাশ ও এমপিও করে দেবেন বলে আশ্বাস দেন। এমপিও করে দিবেন-এমন কথা সংসদ সদস্য ভিজিট বইয়ে লিখেও দেন। তিনি বলেন, আমরা এখনো সংসদ সদস্য মহোদয়ের দেয়া সেই ওয়াদা বাস্তবায়নের অপেক্ষায় দিন গুণছি। বেতনের অভাবে আমাদের শিক্ষকবৃন্দ অসহায় ও করুণ জীবন যাপন করছেন। পরিবারের চিকিৎসা, ইদ উৎসবসহ কোন প্রয়োজন না মেটাতে পেরে শিক্ষকরা ধীরে ধীরে জীবনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ছেন। প্রধান শিক্ষক ইমদাদুল হক আরও বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে শিক্ষার পাশাপাশি খেলাধূলা, বিতর্ক অনুষ্ঠান, কুইজ প্রতিযোগিতা, শিক্ষা সফর ও বিভিন্ন জাতীয়-আন্তর্জাতিক দিবস উদযাপনে প্রতিষ্ঠানটির বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। এলাকাবাসীর ব্যাপক আন্তরিকতায় গড়ে ওঠা এই প্রতিষ্ঠানটি এমপিও ভুক্ত না হওয়ায় জীবনের বহু বছর বিনা বেতনে শ্রম দেয়া শিক্ষক-কর্মচারীরা আজ যারপর নেই হতাশ। গত ৩ নভেম্বর ঈদের ছুটিতে যে যার ঘরে ফিরে যান সম্পূর্ণ খালি হাতে। বেতন না পাওয়ায় ঈদের আনন্দ প্রতিবছরের ন্যায় এবারও তাদের কাছে মান। বর্তমান সরকারের সময়ে এ উপজেলায় কেবলমাত্র একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিও পেয়েছে। সেটি হলো বোয়ালিয়া মহিলা মাদ্রাসা। ওই মাদ্রাসা উপজেলার মধ্যে একমাত্র এমপিওভূক্তির আওতায় চলে আসাটা এক অপার বিস্ময়ের ব্যাপার বলে ধারণা করেন অনেকেই। পাশাপাশি পৌর সদরে বেত্রবতী আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়ে সকল শর্ত পূরণ করে সুনামের সাথে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। বিদ্যালয়টি নিম্ন মাধ্যমিক পর্যায়ে এমপিওভুক্ত হলেও দীর্ঘ ১০ বছর ধরে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে আজও মাধ্যমিক স্তরের এমপিওভুক্তির পত্র পায়নি। উপজেলা সদরের ল্যাবরেটরী স্কুল ও বেত্রবতী আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় সব ধরণের যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে চললেও দারুনভাবে অবহেলার শিকার হয়েছে। এ বৈষম্য কাটিয়ে স্কুল দুটি যত দ্রুত সম্ভব এমপিও তালিকায় যাতে যুক্ত হতে পারে, এর জন্য মানবিক দৃষ্টিতে একটা বিহিত ব্যবস্থা করতে এমপি মহোদয়সহ সংশিষ্ট কর্র্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন অবহেলিত শিক্ষক-কর্মচারীবৃন্দ।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/কামরুল হাসান/কলারোয়

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here