মহানন্দ অধিকারী মিন্টু, পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি :: বাংলাদেশ সরকার ও এডিপি’র অর্থায়ণে আরবান সেন্টার স্কীম সিটি রিজিয়ন ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট (সিআরডিপি) অধীনে খুলনার কপিলমুনি হাট-বাজার উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যাপক দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ড্রেণ নির্মান ঢালাই কাজে নিন্মমানের ইটের খোঁয়া ব্যবহার, শম্ভুক গতি সহ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান স্বেচ্চারীতার অভিযোগ উঠেছে।
জানাগেছে, এলজিইডি খুলনার তত্বাবধানে ৭কোটি ১৭লক্ষ ৪৩হাজার ২শ’ ৮৪টাকা ৮৯পয়সা বরাদ্দের প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কাজ পায় খুলনার রূপসা উপজেলার যোগীহাটির ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আইইএল এন্ড এফটি (জভি)। গত ৫জুলাই ’১৬ থেকে শুরু করে কাজটি শেষ করার কথা ছিল গত ৪জানুয়ারি ’১৭।
কিন্তু নির্দিষ্ট মেয়াদের প্রায় ১ বছরেরও বেশী সময় অতিবাহিত হলেও প্রথম থেকেই মন্থর গতি, পরিকল্পনাহীনতা, অনিয়ম থেকে শুরু করে নানা সংকটে এখন পর্যন্ত প্রকল্পের অর্ধেক কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। অভিযোগ উঠেছে ড্রেণ নির্মাণে নিন্মমানের খোঁয়া-বালুর পাশাপাশি তারা নক্সার বাইরে রড কম দিচ্ছে। এমন কি পাথরের পরিবর্তে নিন্মমানের ইটের খোঁয়া দিয়ে ড্রেণ ঢালাই কাজ করা হচ্ছে। শু
ক্রবার বাজারের অভ্যন্তরে পালপট্টি রাস্তার ড্রেন নির্মাণে নিন্মমানের ইটের খোঁয়ার ব্যবহারে স্থানীয়রা প্রতিবাদ করলে কর্ণপাত করেনি কাজে দায়িত্বরতরা। এর আগে কলেজ রোডের একটি ড্রেণে রড কম দেয়ায় এলাকাবাসীর প্রতিবাদের মুখে ঠিকাদার পুণরায় তা খুুলে নতুন করে বাইন্ডিং শেষে ঢালাই দিয়েছে। অন্যদিকে বাজার অভ্যন্তরে সরকারি জায়গা দখল করে গড়ে ওঠা বিভিন্ন স্থাপনা বাঁচাতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগসাজসে স্থানীয় তহশীলদার পানি নিষ্কাষণের ড্রেন নির্মাণে গলি রাস্তাগুলো ব্যবহার করছে। কোথাও কোথাও ড্রেণ গুলি স্বর্পাকৃতিতে করা হচ্ছে।
এতে ভবিষ্যতে বাজার অভ্যন্তরে রাস্তা নির্মাণে ব্যাপক সমস্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সাইড প্রকৌশলী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দায়ী করা হচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় কপিলমুনি হাট-বাজার উন্নয়নে জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেণ ও সুষ্ঠু চলাচলের জন্য কংক্রিট সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি।
তবে শুরু থেকেই প্রতিষ্ঠানটি বাজারের বিভিন্ন স্থানে একযোগে খুঁড়ে রাখলেও একই গতিতে কাজ করতে না পেরে মূলত পিছিয়ে পড়ে। বিশেষ করে গত বর্ষা মৌসুমে কাজ করতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানটি ময়লা পানির-কাদার উপর ঢালই’র কাজ করে। কখনো কখনো বৃষ্টির মধ্যেও ঢালাইয়ের কাজ করে। এতে কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। পক্ষান্তরে চলতি শুষ্ক মৌসুমে এক সাথে বিভিন্ন এলাকা খুঁড়ে মাটি উঁচু-নিচু করে রেখে দক্ষিণ খুলনার অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্রটির স্বাভাবিক গতিতে মারাত্বক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছে।
এছাড়া ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় তহশীলদারের সাথে যোগসাজসে বাজার অভ্যন্তরে সরকারি জায়গা দখল করে দোকান বা স্থাপনাগুলীর স্বার্থে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরিয়ে-পেচিয়ে ড্রেণ নির্মাণ করেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রথম দিকে সদরের পালপাড়া ও কালীবাড়ি সড়ক দু’টির নির্মাণ কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে শম্ভুক গতিতে ইতোমধ্যে ব্যস্ততম কলেজ রোড, পুলিশ ফাঁড়ি রোড, প্রেসক্লাব রোডের কাজ শুরু করলেও কাপড় পট্টি থেকে শুরু করে অধিকাংশ রোড গুলির কোনো কাজই শুরু করতে পারেনি তারা। আর কোনো কোনো সড়কে কাজ শুরু করলেও তা শেষ না করে আরেকটি শুরু করেছেন।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এমন খামখেয়ালীপনা, দুর্নীতি-অনিয়মের সাথে পরিকল্পনাহীনতায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বাজারে স্থায়ী ব্যবসায়ী ও ক্রেতা-বিক্রেতারা। অসম্পন্ন রাস্তা, বিভিন্ন জায়গায় খুঁড়া ও মালামাল স্তুপ করে রাখায় মালবাহী কোনো বাহনই ঢুকতে পারছেনা বাজার অভ্যন্তরে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের এমন দুনীতি-অনিয়ম ও ছন্নছাড়া কাজে চরম দুর্ভোগে ব্যবসায়ীরা।
কবে শেষ হবে? কিংবা নির্মাণ কাজের মেয়াদ শেষে তা কতদিন বাড়ানো হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এস্কন্দার আলী বলেন, সেটা মূল ঠিকাদার এবং প্রকৌশলীরা বলতে পারবেন। এসময় ড্রেনের নক্সা দেখতে চাইলে তিনি বলেন, ওটা তার কাছে নেই।
কপিলমুনি হাট ও বাজার ব্যবস্থাপনা পরিষদের সভাপতি ও কপিলমুনি ইউপি চেয়ারম্যান মো. কওছার আলী জোয়াদ্দার সাংবাদিকদের বলেন, তিনি ড্রেণগুলি সোজা নির্মাণের পক্ষে এবং এজন্য তিনি ঠিকাদারের লোকদের বারংবার বললেও তারা তার কোনো কথায় কান না দিয়ে তাদের ইচ্ছা মাফিক কাজ করে যাচ্ছে।