ওবামার জলবায়ু নীতিতে কাটছাঁট করছেন ট্রাম্পডেস্ক নিউজ :: সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার করা জলবায়ু নীতিতে ব্যাপক কাটছাট করছেন বতর্মান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি ওবামার জলবায়ু নীতির গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ‘ক্লিন পাওয়ার প্ল্যান’ বাতিল করে দিচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার বিকেলেই প্রেসিডেন্ট ওবামা নির্বাহী আদেশে এটি ছাড়া আরো কিছু পদক্ষেপ বাতিল করে দিতে পারেন। মার্কিন পরিবেশবাদীরা ইতোমধ্যে আইনের আশ্রয় নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। তারা বলছেন, এই ধরনের নির্বাহী আদেশ জারি হলে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি অর্থহীন হয়ে পড়তে পারে।
নতুন আদেশে যেসব পরিবর্তন
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে এনভায়রনমেন্টাল প্রটেকশন এজেন্সি’র (ইপিএ) বাজেট সংকোচন, তেল, গ্যাস এবং কয়লা উত্পাদনের ওপর ওবামা আমলে প্রণীত নীতিগুলো বাতিল করে দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেছিলেন, জলবায়ু পরিবর্তন বাস্তব এবং এটাকে প্রত্যাখান করার সুযোগ নেই। ২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র কার্বণ নি:সরণের অঙ্গীকার করেছিল।               ওবামার ক্লিন পাওয়ার প্ল্যানের (সিপিপি) গ্রিন রুল কার্বন নি:সরণে সহায়ক। ওই নীতি অনুযায়ী কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুত্ কেন্দ্র নির্মাণে অনুত্সাহিত করার কথা বলা ছিল। এছাড়া নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। এমনকি সরকারি জমিতে কয়লা উত্পাদন এবং কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুত্ কেন্দ্র নির্মাণে অনুমতি না দেওয়ার কথাও বলা হয়েছিল। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে নতুন ফেডারেল কয়লা ইজারা তিন বছরের জন্য স্থগিত করেছিল ওবামা প্রশাসন। এই পদক্ষেপকে ওবামার ‘কয়লাবিরোধী যুদ্ধ’ হিসেবে আখ্যা দেন ট্রাম্প। ওবামার নীতি রিপাবলিকান পরিচালিত রাজ্যে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছিল। বিশেষ করে ব্যবসায়ীরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। এসব ব্যবসায়ীরা কয়লা, তেল এবং গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল। গত বছর সুপ্রিম কোর্ট সাময়িকভাবে এই পরিকল্পনা স্থগিত করেছিল। ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছে, নতুন নীতিতে কাজের ক্ষেত্র যেমন বাড়বে, তেমনি জ্বালানি আমদানিও কমে যাবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দেশের মধ্যেই জ্বালানি উত্পাদনের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন বলেও প্রশাসন জানিয়েছে। আগের সরকার কর্মীদের অবমূল্যায়ন করেছিল বলেও ট্রাম্প প্রশাসন তাদের বক্তব্যে উল্লেখ করেছে।

 

প্রভাব
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ‘গ্রিল রুল বা সবুজ নীতি’ নির্বাচনী প্রচারণার সময়ই প্রত্যাখান করেছিলেন এবং তা বাতিল করার অঙ্গীকার করেছিলেন। হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই নির্বাহী আদেশ জ্বালানি ও বিদ্যুেক সাশ্রয়ী করা হবে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও চাকরির বাজার বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। কিন্তু পরিবেশবাদীরা সতর্ক করে বলেছেন, এই পদক্ষেপ দেশে এবং বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার শিকার হবে এবং জলবায়ু পরিবর্তনে বিরূপ প্রভাব পড়বে। ট্রাম্প সমর্থকরা বলছেন, জলবায়ু নীতিতে পরিবর্তনের ফলে চাকরির বাজার সৃষ্টি হবে এবং কর্মীদের সুযোগ বাড়বে। কিন্তু বিরোধীরা বলছেন, এর মাধ্যমে চাকরির বাজার সৃষ্টি হবে ঠিক, কিন্তু তা হবে আইনজীবীদের জন্য, কয়লা খনিতে নিয়োজিত কর্মীদের জন্য কোনো সুবিধা আনবে না। নতুন আদেশের ফলে তেল এবং শিল্প কারখানা থেকে মিথেন নি:সরণের নীতিও শিথিল করা হবে। সরকারি জমিতে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুত্ কেন্দ্র নির্মাণও সহজ হয়ে যাবে।

 

জলবায়ু চুক্তির অঙ্গীকার রক্ষা হবে না
প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র যে অঙ্গীকার করেছিল তার নতুন আদেশে ভঙ্গ হবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আগেই বলেছিলেন, প্যারিস জলবায়ু চুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ভাল হয়নি। তিনি বলেছিলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী চীন। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তন প্রাকৃতিক বিষয় বলেও মন্তব্য করেছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। যদিও গত বছরের শেষ দিকে তিনি বলেছিলেন, মানুষের কর্মকান্ডের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের সম্পর্ক রয়েছে। জলবায়ু চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের শীর্ষ অর্থনৈতিক দেশগুলো অঙ্গীকার করেছিল, বিশ্বের তাপমাত্রা হ্রাসে তারা তাদের অর্থনীতিকে কার্বল নি:সরণ এবং মিথেন নি:সরণ থেকে দূরে রাখবেন। এখনো স্পষ্ট হয়নি যে, প্যারিস জলবায়ু চুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কী ধরনের পদক্ষেপ নেবে।

 

প্রতিক্রিয়া
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশকে আদালতে চ্যালেঞ্জ জানানোর হুমকি দিয়েছেন পরিবেশবাদীরা। পরিবেশবাদী কর্মী এবং বিলিয়নার টম স্টেয়ার বলেছেন, এই আদেশের মাধ্যমে মার্কিন মূল্যাবোধকে ক্ষুন্ন করবে এবং মানুষের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেওয়া হবে। অন্য গ্রিন গ্রুপ আর্থজাস্টিস জানিয়েছে, তারা আদালতের ভেতরে এবং বাইরে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তুলবেন। সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট ট্রিপ ভ্যান নপ্পেন বলেন, এই আদেশ আইন এবং বৈজ্ঞানিক বাস্তবতাকে প্রত্যাখান করবে।
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here