সম্ভাবনার দুয়ার থেকে ক্রমেই যেন দূরে সরে যাচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। উদ্যোক্তারা এ দেশে আসতে চাইছেন না। বিদেশি বিনিয়োগে নানা সুবিধা থাকা সত্ত্বেও রাজনৈতিক অস্থিরতার ঝুঁকিতে বর্তমানে বড় বাধা হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে। এতে কাঙিড়্গত প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারবে না বাংলাদেশ। সম্ভাবনার কড়্গপথ থেকে বাংলাদেশ দিনদিনই পিছিয়ে পড়ছে প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায়। নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বাংলাদেশ ছিলো সারাবিশ্বে উন্নয়নের মডেল। কিন্তু রাজনৈতিক সহিংসতা বাংলাদেশের অগ্রগতিতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে ড়্গমতাসীন আওয়ামী লীগ জোট ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের চলমান সহিংসতা সাত শতাংশ জিডিপি অর্জনকে বাধাগ্রসত্ম করবে। ফলে গত ১৩ বছরে চরম দারিদ্র্য থেকে বের করে আনা এক কোটি ১৬ লাখ জনগণকে পুরোপুরি দারিদ্র্যমুক্ত করা কঠিন হয়ে পড়বে। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও এমনকি প্রতিবেশী মিয়ানমারের তুলনায়ও বাংলাদেশে সামপ্রতিক সময়ে বিদেশি বিনিয়োগ কম হয়েছে। প্রতিবেশী দেশের তুলনায় আমাদের রাজনীতিকে নিতানত্মই ক্লিশে, বৈচিত্র্যহীনই বলতে হবে। এমন রাজনৈতিক যাতাকলে পিষে যাচ্ছে আমাদের অর্থনীতি। কবে যে এ দেশের রাজনীতি একঘেয়ে সন্ত্রাস-সহিংসতা থেকে মুক্তি পাবে তা কে জানে। অর্থনীতির প্রতিটি খাতই আজ বিপদে আছে। রপ্তানি নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে, কমছে আমদানিও। বিনিয়োগ নেই, বাড়ছে খেলাপি ঋণ। সংকটে পড়েছে পর্যটনশিল্প। চলমান রাজনৈতিক সহিংসতায় ধ্বংসের মুখে জীবন জীবিকা, বিপর্যসত্ম মানুষ। জীবন হাতে নিয়ে প্রতিদিন কাজে নেমে স্বল্প আয়ের মানুষ লাশ হয়ে বাড়ি ফিরছে। আপনাদেও দু’নেত্রীর সিদ্ধানত্মহীনতার কারনে, স্বার্থেও কারনে গোটা দেশের মানুষ আজ শংকিত। রাজনৈতিক যাতাকলে দেশের মানুষ পিষ্ঠ হচ্ছে। বেঁচে থাকার ভয়; টিকে থাকার ভয় আর অর্থনৈতিক শংকা দেশের আমজনতাকে বিপর্যসত্ম করে তুলেছে।
ড়্গমতায় কে আসলো, কে আসলো না এটা বড় বিষয় নয়। বড় কথা হলো উন্নয়ন নিয়ে সমালোচকদের ধারণা ভুল প্রমাণ করে গত দশকে আর্থ-সামজিক ড়্গেত্রে বাংলাদেশ দ্রম্নত এগিয়ে গেছে। কিন্তু রাজনৈতিক এই অচলাবস্থা চলতে থাকলে আমরা পেছনে পড়ে যাব। গত বছর অবরোধ ও হরতালের কারণে বাংলাদেশ ৭১ দিন হারিয়ে ফেলেছে। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিরে এক হিসাবে, হরতালের কারণে বাংলাদেশে প্রতিদিন কমপড়্গে ২০০ মিলিয়ন ডলার ড়্গতি হয়। এ ড়্গতি কিভাবে পুষিয়ে নেবে বাংলাদেশ? আইএমএফ এর চলতি রিপোর্টে বলা হয়েছে, হরতাল ও অবরোধের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে। এতে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়াবে সাড়ে ৫ শতাংশে। গত ২০১২-১৩ অর্থবছরে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ২ শতাংশ। চলতি অর্থবছর পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে। সরকারী ব্যাংকগুলোর তহবিল সঙ্কট মোকাবেলায় দেয়া হয়েছে অতিরিক্ত ৫ হাজার কোটি টাকা। পুজিবাজারে সরকার বিনিয়োগ করবে ৭ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। বিপুল অনুন্নয়ন ব্যায় মেটাতে বড় আকারের বাজেট ঘাটতি হতে পারে। দেশের ব্যাকিং খাতে উদ্বৃত্ব তারল্য রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে রয়েছে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। এর পরেও বেসরকারী উদ্যোক্তারা বিদেশ থেকে ডলারে ঋণ নিচ্ছেন। ব্যাংকিং খাতে অব্যবস্থাপনার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দেশে সুদের হার অনেক বেশি। নতুন ব্যাংক চালু হলেও সুদহারে প্রতিযোগিতার মনোভাব সৃষ্টি হয়নি। বিভিন্ন অনিয়মের কারণে সুদের হারও কমছে না। ২০১৩ অর্থবছর দেশের ব্যাংকিং খাতের কালো অধ্যায়। খারাপ ঋণ (ব্যাড লোনের) ১২ শতাংশে পৌঁছেছে। বাংলাদেশের বাণিজ্যচক্র রাজনৈতিক পালস্নায় পড়েছে। রাজনৈতিক প্রভাব থেকে বাণিজ্যিক খাতকে যে কোন মূল্যে মুক্ত করতে হবে। এ কথা সত্য যে দেশে বিনিয়োগ মন্দা চলছিল অনেক দিন ধরেই। মাঝখানে কিছুটা গতি এসেছিল। বিশেষ করে, বস্ত্র ও পোশাক খাতে বড় বিনিয়োগ হয়েছিল। বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) হিসাবে গত জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে দুই হাজার ২০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ হয়েছে। উদ্যোক্তারা বলছেন, সেই বিনিয়োগ এখন তাঁদের গলার ফাঁস হয়ে গেছে। উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করা যাচ্ছে না। আবার উৎপাদনও বন্ধ করা যাচ্ছে না। বিটিএমএর এক হিসাবে, প্রতি মাসে ১২ হাজার ট্রাক লাগে শুধু বস্ত্র খাতের তুলা ও সুতা পরিবহনে। অথচ এখন ট্রাকের মালিকেরা ভাড়ায় যেতে চান না। হরতাল অবরোধের সময় সরকার রপ্তানি পণ্য বোঝাই ট্রাক বন্দর পর্যন্ত যেতে পুলিশি পাহারার ব্যবস্থা করলেও তাকে ঝুঁকিমুক্ত মনে করেন না ট্রাকমালিকেরা। আতো মধ্যে অনেক পণ্যবাহী ট্রাক জালিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রতিদিনই তা অব্যহত রয়েছে। ফলে কোনকোন মালিক ঝুঁকিতে ট্রাক চালালেও ১৫ হাজার টাকার ট্রাক ভাড়া এখন এক লাখ টাকা হাকছেন । ফলে তুলা আনা যাচ্ছে না। উৎপাদিত সুতাও এখন তৈরি পোশাক কারখানায় পৌঁছানো যাচ্ছে না। কীভাবে এর সমাধান হবে জানা নেই কারোরই। আর এ অবস্থ্য আর কিছুদিও চললে অনেক শিল্পকারখানাতেই তালা ঝুলবে। বেকার হবে লাখ লাখ শ্রমিক।
এ কথা বলার অপেড়্গা রাখে না যে, একঘেয়ে বৈচিত্র্যহীন প্রাণঘাতী হরতাল, অবরোধ, পেট্রোল বোমার সহিংস হয়ে উঠেছে বাংলাদেশে রাজনীতি। এতে সরকারের ব্যাংক ঋণের পরিমাণ অব্যাহতভাবে বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) সরকারের নেয়া ঋণের পরিমাণ ১৩ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা। যা প্রথম প্রান্তিক শেষে ছিল ১০ হাজার ১০ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে সরকারের ঋণ নেয়ার পরিমাণ বেড়েছে ৩ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকা। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নতুন ঋণ না নিয়ে উল্টো আগের নেয়া ঋণের ৬ হাজার ৯৩৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে সরকার। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। অর্থবছরের নভেম্বর পর্যনত্ম সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নিয়েছে ৯৪ হাজার ৯৯১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, যা গত জুন শেষেও ছিল ৮১ হাজার ৪১৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। সে হিসেবে চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা। ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার এভাবে ঋণ নেয়া মানেই হচ্ছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিসহ (এডিপি) বিভিন্ন প্রকল্প বাসত্মবায়নে সরকারের ব্যয় বেড়েছে। নানা ড়্গাতে ব্যায় বাড়লেও দেশের আয় কিন্তু বাড়েনি। বরং কমেছে।
রাজনৈতিক কর্মসূচিতে দেশের ব্যবসা বাণিজ্যে মারাত্মকভাবে। লাগাতর কর্মসূচির কারণে ব্যবসায়ীরা ড়্গতি কাটিয়ে ওঠার সুযোগ পাচ্ছেন না। এ অবস্থায় বেসরকারি খাতে প্রবৃদ্ধি অর্জন দূরে থাক, অনেক শিল্প-কারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অসিত্মত্ব টিকিয়ে রাখাও কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেক কারখানায় ইতোমধ্যে উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। আবার অনেক কারখানার গুদামে পণ্য ভর্তি হয়ে গেছে। সেসব পণ্য বিক্রি করতে না পারায় তারা এখন আর নতুন করে পণ্য উৎপাদন করতে পারছে না। এদিকে পোশাক খাতের বিরাজমান নিরাপত্তা সমস্যার সঙ্গে চলমান সামাজিক অস্থিরতা যোগ হয়ে বাংলাদেশের শিল্প ও রফতানি সক্ষমতায় নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলেও বিশ্বব্যাংক হুঁশিয়ার করেছে। সংস্থাটি বলছে, নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক অস্থিরতা ব্যবসায়ীদের আস্থা ও বিনিয়োগের স্থিতিশীলতা অর্জনের ড়্গেত্রে ড়্গতির কারণ হতে পারে। অবশ্য বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে আশার কথাই বলা হয়েছে বিশ্ব ব্যাংক। তাদের মতে, গত পাঁচ বছরে অর্থনৈতিক মন্দার ধকল কাটিয়ে উন্নয়নশীল ও উচ্চ আয়ের দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি বাড়তে থাকায় এবছর বিশ্ব অর্থনীতিও শক্তিশালী হবে। এক্ষেত্রে পিছিয়ে যাবে কেবল বাংলাদেশ। তবে আশার কথা এটাই যে এখনও সব শেষ হয়ে যায়নি। দেশ কিছুটা স্থিতিশীল হলে সহসাই বিনিয়োগ বাড়বে। আবাও চাঙ্গা হয়ে ওঠবে দেশীয় অর্থনীতি।
রাজনৈতিক অস্থিরতার কারনে বিদেশি বিনিয়োগ হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। চলে যাচ্ছে অন্য দেশগুলোতে। ভয়াবহ দিক হচ্ছে, বিদেশী বিনিয়োগই কেবল হাত ছাড়া হচ্ছে তা নয়। দেশীয় বিনিয়োগকারীরারও দেশে বিনিয়োগে ভরসা পাচ্ছে না। বাংলাদেশি বিনিয়োগকারীরাও নিজের দেশের তুলনায় অন্য দেশে বিনিয়োগে এগিয়ে যাচ্ছেন। উদাহরণস্বরূপ মিয়ানমারের কথাই তুলে ধরা যেতে পারে। আইনি কিছু বাধ্যবাধকতা সত্ত্বেও বিশেষ অনুমোদন নিয়ে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা সেখানে বিনিয়োগ করছেন। এর বাইরে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছে এমন বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও ব্যবসা সমপ্রসারণ না করে বিদেশে চলে যাচ্ছেন। বেশ কয়েকটি গ্রুপ ইতিমধ্যে ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ায় বিনিয়োগ করেছেন, যাদের প্রাথমিক লড়্গ্য ছিল বাংলাদেশ। প্রশ্ন হলো কি করবে দেশিয় বিনিয়োগকারীরা? দেশি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ তো দূরের কথা, ব্যবসা চালু রাখাও কঠিন হয়ে পড়েছে। কয়েকটি দেশ তাদের দেশের নাগরিকদের বাংলাদেশ ভ্রমণে সাবধানতা অবলম্বনের খবরেও বিশ্ব জুড়ে বাংলাদেশকে নিয়ে নেতিবাচক বার্তা যাচ্ছে। উদ্বেগজনক এ অবস্থায় বিনিয়োগ চলে যাচ্ছে দড়্গিণ আফ্রিকাসহ এশিয়ার অন্য দেশগুলোতে। এটা আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক অগ্রগতির পথকে রুদ্ধ করে দিচ্ছে। বিশ্ব বিনিয়োগ প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১২ সালে মিয়ানমারে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ২ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলার। এর আগের বছর যার পরিমাণ ছিল ২ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার। অথচ একই সময়ে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে কঙ্গোয় বিনিয়োগ হয়েছে ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া ঘানা, লাইবেরিয়া, মোজাম্বিক, নাইজেরিয়া, তানজানিয়া ও উগান্ডায় বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে যথাক্রমে ৩ দশমিক ৩, ১ দশমিক ৪, ৫ দশমিক ২, ১ দশমিক ৭ ও ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ বা দক্ষিণ এশিয়ার দু’একটি দেশে বিনিয়োগ কমলেও ঐসব দেশে গত কয়েক বছর ধরেই ধারাবাহিকভাবে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ছে।
আনত্মর্জাতিক দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক ধারণা করছে, চলতি বছর মন্দা কাটিয়ে বিশ্ব অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে কাঙিড়্গত প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারবে না বাংলাদেশ। সংস্থাটির আশা, এ বছর প্রবৃদ্ধি ৫.৭ শতাংশের বেশি হবে না। অবশ্য ২০১৩-১৪ অর্থবছরের বাজেটে সরকার ৭.২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের কথা বলেছে। সংস্থাটি জানায়, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও নির্বাচনকে ঘিরে অস্থিতিশীলতার কারণে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি কমে ৫.৭ শতাংশ হবে বলে ধরা হচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা ও বিশৃঙ্খলার কারণে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি কমেছে। তবে সরকারি বিনিয়োগের মাধ্যমে ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে আনা গেছে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ঘনীভূত হওয়ায় ২০১৩ সালের শেষ দিকে এসে মূল্যস্ফীতিও কিছুটা বেড়েছে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবাসী আয় ১২.৬ শতাংশ বাড়লেও চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে তা কমে ৮.৪ শতাংশ হয়েছে। কারণ হিসেবে রাজনৈতিক অস্থিরতার পাশাপাশি জনশক্তি রপ্তানি কমে যাওয়ার কথা উল্লেখ করেছে বিশ্ব ব্যাংক। বিশ্বব্যাংকের মতে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অস্থিরতা ব্যবসায়ীদের আস্থা ও বিনিয়োগের স্থিতিশীলতা অর্জনের ক্ষেত্রে ক্ষতির কারণ হতে পারে। এমন সংবাদ আমাদের জন্য মোটেও সুখকর নয়। মূলত রাজনৈতিক অস্থিরতার কারনে সব চেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্যাংকিং ক্ষত। ঋণঝুঁকিসহ ব্যবস্থাপনায় বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর গাফিলতির কারণে এ ঝুঁকির পরিমাণ ব্যাপকভাবে বেড়ে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করছে, বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক এবং ব্যাংকিং খাতের জন্য হুমকিস্বরূপ। এ অবস্থা চলমান থাকলে আমানতকারীদের মধ্যে ব্যাংক সম্পর্কে অবিশ্বাস জন্ম নিতে পারে, যা প্রকারানত্মরে ব্যাংকিং খাতকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে পারে।
পরিশেষে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোকে বলবো, মানুষের জীবনযাত্রা ব্যাহত হয় এমন কোন কর্মসূচী দেয়া থেকে বিরত থাকুন। রাজনৈতিক সহিংসতায় দেশের কোন সম্পদ ধ্বংস করা যাবে না। দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করা যাবে না। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ইমেজ বিপন্ন হয় এমন কর্মসূচী দেয়া থেকেও বিরত থাকতে হবে দলগুলোকে। এ অবস্থায় দেশের অর্থনীতিকে বাঁচাতে হলে আমাদের সহিংসতা থেকে সরে আসতে হবে। রাষ্ট্রিয় ক্ষতি হয় এমন কর্মসূচি রাজনৈতিক দলগুলো না দিয়ে প্রতিবাদের জন্য অন্য কোন পন্থা কিংবা আন্দোলন বেছে নিতে হবে।
মীর আব্দুল আলীম/
সাংবাদিক ও কলামিষ্ট