গাজীপুর : বিএনপি জামাত জোট সরকার  ক্ষমতায় এসে সন্ত্রাস,অত্যাচার নির্যাতন ছাড়া আর কিছুই দিতে পারেনি। তারা শুধু জঙ্গীবাদ আর লাশ আর লাশ উপহার দিয়েছে।

বিএনপি জামাতের আমলেই বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের উত্থান হয়েছিল, বাংলা ভাইয়ের জন্ম হয়েছিল। আমরা তা নির্মূল করেছি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করার জন্যই বিএনপি বারে হরতাল দিচ্ছে, মানুষ হত্যা করছে।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে জয়যুক্তকরে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সব কথা বলেন। তিনি বলেন আগামী ৪ নভেম্বর জেএসসি পরীক্ষা শুরু, আমাদের ছেলে মেয়েদের কথা মাথায় রেখে আর হরতাল না দেওয়া জন্য তিনি পুনরায় বিরোধী দলের প্রতি অনুরোধ জানান।

তিনি বলেন জানিনা বিরোধী দলের নেতা আমার কথা রাখবেন কিনা। কারণ তিনি সব কিছুতেই না বলেন। প্রধানমন্ত্রী গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তায় ভাওয়াল বদরে আলম সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে জেলা আ’লীগ আয়োজিত বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপির সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু এমপি ও  তোফায়েল আহমেদ এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী এমপি, যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি, মো. রহমত আলী এমপি, আখতারউজ্জামান, সিমিন হোসেন রিমি এমপি, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকী এমপি, জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, জাহানারা বেগম এমপি, অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান, এনামুল হক শামীম, অ্যাডভোকেট মোমতাজ উদ্দিন মেহেদী, যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, পঙ্কজ দেবনাথ, মাওলানা রুহুল আমিন মাদানী, হারুন-উর-রশিদ, মোতাহার হোসেন মোল্লা, নাজমা আক্তার এমপি, অপু উকিল এমপি, সিদ্দিকী নাজমুল আলম,  অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম বাবুল, আব্দুল মান্নান পাঠান, কাজী আলিম উদ্দিন বুদ্দিন, অ্যাডভোকেট হারিস উদ্দিন আহমেদ, আব্দুল হাদী শামীম, ইকবাল হোসেন সবুজ, আমানত হোসেন খান প্রমুখ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি জামাতের হাতে  আমাদের অনেক নেতাকর্মী নিহত হয়েছে। যখনই তারা ক্ষমতায় আসে তারা চোখ তুলে নেয়, হাত কাটে, রগ কাটে,মানুষ হত্যা করে, শান্তি কেড়ে নেয়, জঙ্গীবাদের উত্থান হয়। আর দুর্নীতি করে টাকা কামায়। তিনি বলেন বিরোধী দলীয় নেতা হাসিনা মুক্ত বাংলাদেশ চান। এজন্য ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট তার ছেলে ও একজন মন্ত্রীর নির্দেশে গ্রেনেড হামলা করে  আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছিল।

এতে আমাদের নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নেতা-কর্মী নিহত হয়েছে। আমরা যখনই ক্ষমতায় আসি তখনই এদেশে উন্নয়ন হয়। পক্ষান্তরে বিএনপি- জামায়াত ক্ষমতায় এলে সন্ত্রাস দুর্নীতি বৃদ্ধি পায়।

বিএনপি ভোট কারচুপি করতে পারবে না বলেই তালগোল পাকাচ্ছে। বিএনপি তত্ত্বাবধায়কের নামে আন্দোলন করছে। হাইকোর্ট থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করে দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন বর্তমান সংবিধান অনুসারে অনুষ্ঠিত হবে। সে নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। এজন্য নির্বাচন কমিশন কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু এ দেশে জুয়া খেলা নিষিদ্ধ করেছিলেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, বিশ্ব ইজতেমার জন্য তুরাগ নদীর তীরে জমি দিয়েছিলেন, বায়তুল মোকাররাম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আর বিএনপি ইসলামের হেফাজতের নামে বায়তুল মোকাররামে আগুন দেয়।  ৫ মে শাপলা চত্বরের  ঘটনার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, সেদিন তারা শত শত কোরআন শরীফ আগুন দিয়ে পুড়ে ফেলে। এভাবে কোরআন শরীফ আর মসজিদে আগুন দিয়ে কি ইসলাম হেফাজত করা যায়?’

গাজীপুরে প্রধানমন্ত্রীর আগমন ও তার জনসভাকে কেন্দ্র করে পুরো এলাকায় আনন্দমুখর পরিবেশ বিরাজ করছিল। গোটা নগরীতে উৎসবের আমেজ ছিল। লাখো মানুষের উপস্থিতিতে এটি ছিল গাজীপুরের স্মরণকালের অন্যতম বৃহত্তম জনসভা।

দুপুর ২ টার সময় জনসভার পূর্বঘোষিত  সময় থাকলেও বেলা ১১ টার পর থেকেই জেলার শ্রীপুর, টঙ্গী, কালিয়াকৈর, কাপাসিয়া, কালিগঞ্জ উপজেলার  ছাড়াও পার্শ্ববর্তী টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ,নরসিংদী জেলারসহ দূর দুরান্ত থেকে নেতাকর্মী ও সমর্থকরা জনসভায় আসতে শুরু করেন। তাদের সঙ্গে যোগ দেন সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ।

জনসভায় বিপুল সংখ্যক নারীর উপস্থিতিও দেখা গেছে। দুপুর ১ টার মধ্যেই জনসভাস্থল হয়ে পড়ে লোকে লোকারণ্য। কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় জনসভাস্থল। প্রধানমন্ত্রী জনসভায় উপস্থিত হওয়ার আগেই মানুষের ভিড় ছাড়িয়ে আশেপাশের আড়াই কিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।

আশেপাশের বহুতল ভবনগুলোর ছাদেও ছিল চোখে পড়ার মতো লোক। জনসভাস্থলের পূর্বদিকে কৃষি গবেষণা , পশ্চিম দিকে নাওজোড় বাইবাস, দক্ষিণে ভোগড়া বাইবাস এবং উত্তরে টেকনগপাড়া  এলাকা পরিণত হয় জনসমুদ্রে। দুপুর দেড়টার আগেই গাজীপুর-কালিয়াকৈর সড়ক বন্ধ করে দেয় পুলিশ।

প্রধানমন্ত্রী বিকেল পৌনে তিনটার দিকে হেলিকপ্টারযোগে গাজীপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে পৌঁছান। ৩টা ১০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী সভাস্থলে উপস্থিত হন।

পরে একটি গাড়ি বহরে সোজা মঞ্চে এসে জনতাকে হাত নেড়ে অভিনন্দন জানান। এর আগে সুইচ চেপে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ২১ টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন।

এ সকল বিশেষ প্রকল্পগুলো হলো – বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্ক,জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করণ,নবীনগর-ডিইপিজেড-চন্দ্রা সড়ক  চার লেনে উন্নীত করণ,গ্রেটার ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট(বিআরটি, গাজীপুর এয়ারপোর্ট), দ্বিতীয় কাঁচপুর, দ্বিতীয় মেঘনা ও দ্বিতীয় গোমতি সেতু নির্মান এবং বিদ্যমান সেতু পুনর্বাসন প্রকল্প,শ্রীপুর ফায়ার সার্ভিসও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন,সম্প্রসারিত শ্রীপুর উপজেলা ভবন, গাজীপুর ৫২ মেঃওঃ ডুয়েল ফুয়েল পাওয়ার প্ল্যান্ট,ঐতিহ্যবাহী রাজবাড়ি মাঠের সংস্কারও সৌন্দর্যবর্ধন, টঙ্গী শহীদ আহসান উলস্নাহ মাস্টার স্টেডিয়াম, ৪০কিঃমিঃ গার্ডার ব্রীজসহ লতিফপুর-জিসি রাস্তা, হবুয়ার চালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শ্রেনী কড়্গ উর্ধ্বমুখি সম্প্রসারণ, শ্রীফলতলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শ্রেনী কক্ষ উর্ধ্বমুখি সম্প্রসারণ, টঙ্গী ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল উদ্বোধন,বরামা-সিংহস্‌্রী রাস্তার উপর শীতলক্ষা নদীর উপর ৩১৫মিটার পিসি গার্ডার ব্রীজ নির্মান প্রকল্প, ঢাকা মাস রেপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট এর আওতায় নির্মিত এমআরটি লাইন-৬ ভিত্তিপ্রস্তর, ১৫০ মেঃওঃ ডুয়েল ফুয়েল পস্ন্যান্ট এর ভিত্তিপ্রস্তর , গাজীপুর ৫০০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের ভিত্তি প্রস্তর, মেঘডুবি পূবাইল গাজীপুর এর ট্রমা সেন্টার ভিত্তিপ্রস্তর, গাজীপুরের ছোট দেওরাড় নার্সিং ইনস্টিটিউট ছোট এবং উপজেলা আইসিটি   ট্রেনিং এন্ড রিসোর্স সেন্টার ফর এডুকেশন এর ভিত্তি প্রসত্মর।

এরপর বিকেল সাড়ে ৪টায় তিনি বক্তব্য শুরু করেন। ৪০ মিনিটের বক্তব্যের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী বলেন ‘বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। আর এ গাজীপুর থেকেই সে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। বিএনপি’র সন্ত্রাসীদের হাতে শহীদ হয়েছেন আমাদের আহসান উল্লাহ মাস্টার। বিএনপি ক্ষমতায় এসে এদেশের মানুষকে লাশ ছাড়া আর কিছুই দিতে পারে না।

মোসাদ্দেক হোসেন/

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here